ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ভুয়া ও অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
ভুয়া ও অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া ভুয়া ও অবৈধ হ্যান্ডসেটের বিজ্ঞাপনের কয়েকটি স্ক্রিনশটের কোলাজ

ঢাকা: নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে তৈরি নিম্নমানের ভুয়া এবং অবৈধ উপায়ে আনা হ্যান্ডসেটে সয়লাব দেশের স্মার্টফোনের বাজার। এতে সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব, বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা। অন্যদিকে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানায়, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে থেকে আনা অনুমোদিত আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর সম্বলিত হ্যান্ডসেট বাদে বাকি সব অবৈধ। মূলত স্মার্টফোনের উপর ধার্য্য প্রায় ৩৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক ফাঁকি দিতেই অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট আনা হয়।

অন্যদিকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম ভাঙিয়ে তৈরি অত্যন্ত নিম্নমানের ডিভাইস দেশে বিক্রি করে থাকেন এক শ্রেণীর ‘অসাধু’ ব্যবসায়ী। কম দামে উচ্চপ্রযুক্তির স্মার্টফোনের লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা হয় ক্রেতাদের। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। নিজেদের আড়ালে রাখতে ফেসবুক পেজ ও বিজ্ঞাপনে দেওয়া হয় না কোনো ধরনের ঠিকানা। শুধু একটি বা দু’টি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে নেওয়া হয় অর্ডার। আর ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয় এসব হ্যান্ডসেট। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পারার পর গ্রাহকের যোগাযোগের সব উপায় বন্ধ করে দেয় প্রতারক চক্র। অভিযোগ আছে, কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারীরাও জড়িত থাকেন এই চক্রে।   

বিশ্ববাজারে প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব ব্র্যান্ডেরই নকল ও অবৈধ হ্যান্ডসেট পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের বাজারে। বিশেষ করে নোকিয়া, আইফোন ও স্যামসাংয়ের নকল ডিভাইসের ব্যবসা বেশ রমরমা। আর চীনা ব্র্যান্ড শাওমি’র অবৈধ হ্যান্ডসেট দখল করে আছে বাজারের প্রায় অর্ধেক।

নোকিয়া স্টোর বিডি নামক একটি ফেসবুক পেজের বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৭.১+  মডেলের হ্যান্ডসেট ৬৫ শতাংশ মূল্যছাড়ে মাত্র ৩৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ ডিভাইসটির বাংলাদেশে বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ক্রেতা সেজে বিজ্ঞাপনে দেওয়া ০১৯০২......৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করেন বাংলানিউজের প্রতিবেদক। অপরপাশ থেকে ‘নোকিয়া বাংলাদেশ’ বলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচয় দেওয়া হয়। বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, এসব হ্যান্ডসেট কোরিয়া থেকে আনা, তাই দাম কম। হ্যান্ডসেটগুলো আসল বলেই দাবি করা হয় ফোনের ওপাশ থেকে। অর্ডার করতে হবে অনলাইনে। তবে তাদের কোন দোকান বা অফিস নেই। অর্ডারের আগে দেখা যাবে না হ্যান্ডসেট। ১৫০ টাকা অগ্রিম দিলে কুরিয়ারে পাঠানো হবে আসল নোকিয়া ৭.১+। এসব হ্যান্ডসেট বিটিআরসি অনুমোদিত কি-না জানতে চাইলে অপরপাশ থেকে ফোনের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেওয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ধাঁচ প্রায় একই।

বৈধ আর অবৈধ হ্যান্ডসেটের ভিড়ে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছেন শাওমি’র ব্যবহারকারীরা। অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’ উপায়ে ‘আনঅফিসিয়াল’ (অনুমোদনবিহীন) নাম দিয়ে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ পথে আসা শাওমি হ্যান্ডসেট। অনেক সময়ই আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেটকে অফিসিয়াল বলে চালিয়ে দিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কোনটি অফিসিয়াল আর কোনটি আনঅফিসিয়াল তা বুঝতে গলদঘর্ম হতে হয় গ্রাহকদের।  

রিফারবিশড এবং যন্ত্রাংশ আলাদা করে দেশে নিয়ে আসার পর জোড়া লাগানো এসব নিম্নমানের ত্রুটিপূর্ণ ডিভাইসে নেই বিক্রয়োত্তর সেবাও। তবুও গ্রাহকদের বিভ্রান্ত দূর করতে এবং অবৈধ হ্যান্ডসেটের বিপক্ষে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না বলে অভিযোগ অনেক শাওমি ব্যবহারকারীরই। শাওমি বা এসইবিএল (সোলার ইলেকট্রো বাংলাদেশ লিমিটেড) এর অধীন কতগুলো অনুমোদিত দোকান আছে তার সঠিক তালিকাও নেই প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে।

এসইবিল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান কানন বলেন, অবৈধ হ্যান্ডসেটের এমন ব্যবসা বন্ধের জন্য আমরা প্রায় শতাধিক দোকানকে আইনি নোটিশ দিয়েছি। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনীকে আমরা এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে থাকি। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি আরও আন্তরিক হয় তাহলে অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবসা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়াও বিটিআরসির এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইন্ডেন্টিটি রেজিস্টার) চালু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে বলেও আশা করেন দেওয়ান কানন।

প্রতারক চক্র আর ভুয়া নোকিয়া হ্যান্ডসেট সম্পর্কে অবগত আছে  ‘আসল নোকিয়াও’। নোকিয়ার মালিকানা প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল এর হেড অব বিজনেস ফারহান রশিদ বলেন,  আমরা চেষ্টা করছি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন বিষয়টির সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ঘন ঘন তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। ফলে তাদেরকে চিহ্নিত করাও কঠিন। গ্রাহকরা যেন এমন প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন সেজন্য নোকিয়ার পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান ফারহান রশিদ।  

এসব প্রতারণা থেকে বাঁচতে আইনের প্রয়োগের চেয়ে সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব দেন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু। তিনি বলেন, গ্রাহকরা বেশিরভাগ সময়ই কম মূল্য দেখলে সেটি কিনে ফেলেন। এটা ঠিক না। গ্রাহকেরা সচেতন হয়ে এসব পণ্য কেনা বন্ধ করলে প্রতারকদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
এসএইচএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।