ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

জয়ের নামে গাজীপুর ও বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
জয়ের নামে গাজীপুর ও বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুর ও বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করছেন-ছবি-পিআইডি

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘সজীব ওয়াজেদ জয় গাজীপুর ও বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের’ (স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে স্যাটেলাইট যুগে নিয়ে যাওয়ার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জয়ের নামে নামকরণ করা হয় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দু’টির।

গত ১২ মে বাংলাদেশ সময় ভোর ২টা ১৪ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তার কার্যক্রম শুরু করেছে।

এই দু’টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে স্যাটেলাইট সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহীতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হলো।
 
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দু’টি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর গাজীপুরের তেলীপাড়ার ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশন এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র ব্যাকআপ গ্রাউন্ড স্টেশন।
 
অনুষ্ঠানে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দু’টির নাম সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রীর প্রস্তাবকে গ্রহণ করে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দু’টির নাম বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে নামকরণ করা হয়।
 
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করে গেছেন। আর সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে আমরা মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি। মুজিব থেকে যাত্রা শুরু করে আমরা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে পৌঁছে গেছি।
 
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুর থেকে সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সার্বক্ষণিক মহাকাশে থাকা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর গতিবিধি ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর এখন গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সংকেত পাঠানো হচ্ছে এবং সফলভাবে স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করছে। ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে ট্র্যাকিং ও কন্ট্রোলিংয়ের কাজ হচ্ছে এবং পুরো সিস্টেমটিকে টেস্ট করা হচ্ছে।
 
সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব টেস্ট ও ট্র্যাকিংয়ের কাজ সফলভাবে শেষ করার পর যেকোনো সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কমার্শিয়াল অপারেশনে (বাণিজ্যিক কার্যক্রম) যাবে।
 
ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দু’টি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন। যার সাহায্যে তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম।
 
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তার কার্যক্রম শুরু করেছে। আজ গাজীপুর এবং বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে গ্রহীতাদের কাছে স্যাটেলাইটের সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হলো।
 
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের ফলে সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
স্যাটেলাইট সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইট কোম্পানিগুলোকে বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহারে একদিকে যেমন তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে কমবে আমাদের পরনির্ভরশীলতা। সাশ্রয় হবে বছরে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।
 
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত তরঙ্গ বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের অংশ বিশেষে সেবা দেওয়া যাবে।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্যাটেলাইট টেকনোলজি সেবার মান প্রসারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার মান বাড়বে। পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) প্রভৃতি সেবা প্রদান এবং বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সম্প্রচার করা যাবে। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখা সম্ভব হবে।
 
স্পেস টেকনোলজির জ্ঞানসমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনে এই স্যাটেলাইট অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ ও এর বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি’ গঠন এবং এই কোম্পানিতে দেশের মেধাবী তরুণ/তরুণীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
 
স্যাটেলাইটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত এবং স্যাটেলাইট ও ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
 
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ উদযাপন এবং গাজীপুর ও বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
 
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮/ আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা
এমইউএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।