ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

যুক্তরাষ্ট্রে কমছে রফতানি, বাড়ছে আমদানি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
যুক্তরাষ্ট্রে কমছে রফতানি, বাড়ছে আমদানি

ঢাকা: প্রতিটি দেশ যেকোনো চুক্তি তার নিজ দেশের স্বার্থ বিবেচনা নিয়েই করে। এক্ষেত্রে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে গত কয়েক বছর ধরে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রও। এর সর্বশেষ প্রকাশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিতর্কিত ‘শুল্ক যুদ্ধ’। 

অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ছোট অর্থনীতির দেশ। এরপরও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে উদারতা দেখাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশকে বেশি শুল্ক দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে দেশটিতে।

টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) চুক্তির মাধ্যমে দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম তৈরি হলেও গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের অর্জন সামান্যই।  

ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের (ইউএসআইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমে গেছে। বিপরীতে আমদানি বেড়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অনুকূলে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমছে। তবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বেড়েছে। এ বিষয়টাকেই একমাত্র ইতিবাচক হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বসছে টিকফার চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এতে অংশ নিচ্ছে।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করে দেয়। এরপর গত কয়েক বছরে দেশের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও তা ফেরত পায়নি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় এবার টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশ কি অর্জন করতে পারে, তাই দেখার বিষয়।

ইউএসআইটিসি থেকে নেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৯৯ কোটি ৪ লাখ ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়। গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে এটি নেমে দাঁড়িয়েছে ৫৬৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে। দুই বছরে রফতানি কমেছে ৫ শতাংশ।  

অন্যদিকে ২০১৫ সালে আমদানি করা হয় ৯৪ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য। যা ২০১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ১৪৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।

সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশ দু’টির মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। অর্থাৎ রফতানির চেয়ে আমদানি কম। তবে এই ঘাটতি দ্রুত কমছে। এই হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৫ সালে এ ঘাটতি ছিলো ৫০৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের। এটি ২০১৭ সালে কমে হয়েছে ৪২১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। মাত্র দুই বছরের মধ্যে ঘাটতি কমেছে ৮৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ সাড়ে ১৬ শতাংশ।

এ ধারা চলতি ২০১৮ সালেও অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইউএসআইটিসির তথ্যে।  

এতে আরো বলা হয়, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য। আর জুলাই মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। সে হারে বাড়ছে না রফতানি। জানুয়ারিতে রফতানি হয়েছিলো ৫৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার। আর জুলাই মাসে হয়েছে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কারখানা কমপ্লায়েন্স করতে গিয়ে প্রচুর মেশিন আমদানি করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। পাশাপাশি দেশটি থেকে তুলা আমদানি করি আমরা। এজন্য আমদানি বাড়ছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো- যুক্তরাষ্ট্রের শর্তমতে কর্মপরিবেশ উন্নতির জন্য আমরা কাজ করছি। কিন্তু তারা তাদের দেশে আমাদের বাজার সুবিধা উন্মুক্ত করে দিচ্ছে না।  

‘তাদের যন্ত্রপাতি এনে আমরা কারখানা গ্রিন করছি। কিন্তু তারা আমাদের পোশাকের দাম বাড়াচ্ছে না। ফলে ডলারের অঙ্কে আমাদের রফতানি সে হারে বাড়ছে না,’ বলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
এজেড/আরবি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।