ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

লোকসান কাটিয়ে উঠবে কুষ্টিয়া সুগারমিল: এমডি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
লোকসান কাটিয়ে উঠবে কুষ্টিয়া সুগারমিল: এমডি বাংলানিউজকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন কুষ্টিয়া সুগারমিলের এমডি। ছবি বাংলানিউজ

কুষ্টিয়া: ভরা মৌসুমে আখ না পাওয়া, চিনির উৎপাদন কম, বেতন-ভাতা নিয়ে কর্মীদের অসন্তোষ, পুরনো যন্ত্রাংশ, সাধারণ আখ চাষিদের ভোগান্তি এবং নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে দিনের পর দিন কোটি কোটি টাকা লোকসান দিয়েই চলেছে কুষ্টিয়া সুগারমিল। 

বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং আবার লাভের মুখ দেখতে করণীয় সম্পর্কে নিজের মতামত জানিয়েছেন কুষ্টিয়া সুগারমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল কাদের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মো. জাহিদ হাসান জিহাদ।

 

বাংলানিউজ: অনেকের মতে আখ সংকট আর দক্ষ জনবলের অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে কুষ্টিয়া সুগারমিলের- এ ব্যাপারে কী বলবেন?

আবদুল কাদের: কুষ্টিয়া সুগারমিলে দক্ষ জনবলের কোনো অভাব নেই। পর্যাপ্ত আখ না থাকায় সংকট রয়েছে। যার কারণে চিনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।  

বাংলানিউজ: কুষ্টিয়া সুগারমিলের প্রধান সমস্যাগুলো কী? 

আবদুল কাদের: দীর্ঘদিনের (প্রায় ৫২ বছরের) পুরনো এ প্রতিষ্ঠান। মিলের যন্ত্রাংশগুলো অনেক পুরনো হয়ে গেছে। যার কারণে আখ মাড়াই সঠিকভাবে হচ্ছে না। উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। চিনি উৎপাদনের হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। মিলটি ভালোভাবে না চলার কারণে আখ চাষিরাও আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে আখ সংকট।  

বাংলানিউজ: মিলে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো অনেক পুরনো। সে ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ স্থাপনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন কি?

আবদুল কাদের: আমরা এখনও পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ স্থাপনে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি।  

বাংলানিউজ: শোনা যায়, মাঠে পর্যাপ্ত আখ থাকা সত্ত্বেও চাষিরা মিলে আখ না দেয়ায় মিল কর্তৃপক্ষ মাড়াই বন্ধ করতে বাধ্য হয়-এর সত্যতা কতটুকু? 

আবদুল কাদের: বিষয়টি আংশিক সত্য। অনেক সময় চাষিরা মিলে আখ দেয় না। আমরা যে দামে কৃষকদের কাছ থেকে আখ কিনি, অনেক সময় দেখা যায়, যারা গুড় তৈরি করে তারা চাষিদের কাছ থেকে বেশি দামে আখ কিনে নেয়। এজন্য অনেক সময় চাষিরা মিলে আখ দেয় না। এছাড়া অনেক সময় কৃষক সঠিক সময়ে পুর্জি (সুগারমিলে আখ সরবরাহের অনুমতিপত্র) না পাওয়ায় মিলে আখ দেয় না। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা এসএমএস এর মাধ্যমে চাষিদের কাছে সরাসরি পুর্জির ব্যবস্থা করেছি।  

বাংলানিউজ: চিনির চাহিদা বাড়লেও রাষ্ট্রায়ত্ত সুগারমিলগুলোর (চিনিকল) উৎপাদন বাড়েনি, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

আবদুল কাদের: এর প্রধান কারণ হলো আখ সংকট। সেই সঙ্গে মিলের যন্ত্রাংশগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় উৎপাদন কম হচ্ছে।
 
বাংলানিউজ: বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, মিলের বিপুল পরিমাণ চিনি বিক্রি না হওয়ায় গোডাউনে বস্তাবন্দি হয়েই নষ্ট হয়- এর কারণ কী?

আবদুল কাদের: আমাদের উৎপাদিত চিনির মান খুবই ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত। বাজারে কেমিকেলযুক্ত সাদা চিনির দিকে ক্রেতারা বেশি আকৃষ্ট হয়। আগে আমাদের গোডাউনে অনেক চিনি অবিক্রিত থাকতো। তবে বর্তমানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করায় এবং সঠিক সময়ে চিনি বাজারজাত করায় অবিক্রিত চিনি নেই।  

বাংলানিউজ: শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা বাবদ বর্তমানে মিলের ঋণের পরিমাণ কত? 

আবদুল কাদের: চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকতর্কারা বেতন-ভাতা পায়নি। তারা খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে চিনি বিক্রি না হওয়ায় বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।  

বাংলানিউজ: চাষিরা তাদের পাওনা সঠিক সময়ে না পাওয়ায় আখ সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে- বিষয়টি কি সত্য? চাষীদের পাওনা মেটাতে সমস্যা কোথায়?

আবদুল কাদের: আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। চাষিরা সঠিক সময়ে টাকা পেতো না। তবে বর্তমানে মিলের কাছে চাষিদের কোনো পাওনা নেই। আমরা অনলাইনে শিউর ক্যাশের মাধ্যমে চাষিদের টাকা পরিশোধ করেছি।  

বাংলানিউজ: আখের আবাদ বাড়াতে কি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন? নিলে সেগুলো কী ধরনের?

আবদুল কাদের: আমরা বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।  

বাংলানিউজ: সুগারমিলের লোকসানের পেছনের কারণ জানতে চালানো এক সমীক্ষায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশন সুগারমিলগুলোর উৎপাদন বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সত্যিই কি তাই? 

আবদুল কাদের: বেসরকারি সুগারমিলে যে চিনি উৎপাদন হয় তা মূলত চিনি উৎপাদন নয়। তারা বিদেশ থেকে সুগার বিটের ‘র’ সুগার আমদানি করে শুধুমাত্র রিফাইন করে। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ কম হয়। আর আমরা সরাসরি আখ থেকে মানসম্মত চিনি উৎপাদন করি। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়।  ৫২ বছরের পুরনো যন্ত্রে চলছে কুষ্টিয়া সুগারমিল।  ছবি বাংলানিউজ

বাংলানিউজ: মৌসুমী চিনির পাশাপাশি কারখানায় বিকল্প পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণের কোনো উপায় আছে কি?

আবদুল কাদের: মৌসুমী চিনির পাশাপাশি কারখানায় ১০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেই সঙ্গে ডিস্টিলারি (অ্যালকোহল তৈরির কারখানা) স্থাপন করা সম্ভব। এতে চিনিসহ অনান্য পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব।  

বাংলানিউজ: প্রতিষ্ঠান লাভজনক করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন বা নেওয়ার কথা ভাবছেন?

আবদুল কাদের: যেহেতু চিনি উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল হিসেবে আখ দরকার। কিন্তু সেই আখেরই সংকট। তাই সুগারমিল সচল রাখার জন্য ডাইভারসিফিকেশন এর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মিলটিকে আধুনিক করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হলে লোকসান কাটিয়ে উঠবে কুষ্টিয়া সুগারমিল।  

বাংলানিউজ: বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।  

আবদুল কাদের: ধন্যবাদ জানাই আপনাকে এবং বাংলানিউজকে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।