ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

দুর্গাপূজায় নাটকের নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
দুর্গাপূজায় নাটকের নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ কলকাতায় মঞ্চস্থ হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার কলকাতায় নাট্যদল বরানগর স্রোত নাট্য একাডেমি ও উত্তর কলকাতার সৃষ্টি নাট্য সংস্থা যৌথভাবে প্রথমবারের মতো মঞ্চে হাজির করলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে। নাটকের নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’।

প্রতিবারই দুর্গাপূজার আগে নতুন থিয়েটার নিয়ে কলকাতার দর্শকদের সামনে হাজির হন কলাকুশলীরা। কলকাতার মানুষও অপেক্ষায় থাকেন কোন দল এবার কি নিয়ে আসছে।

 

সেখানে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নাটক সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ। তাই আগ্রহ ও আকর্ষণ দুই-ই ছিলো কলকাতার নাট্যপ্রেমী সাধারণ মানুষদের কাছে।  

সাধারণত কলকাতার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নাম বইয়ের পাতায় বা পর্দায় দেখতে অভ্যস্ত হলেও মঞ্চে অভিনয়ে এর আগে  কেউ দেখেননি।
 
কলকাতায় মঞ্চস্থ হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’।  ছবি: বাংলানিউজপরিচালক রাজা সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বকে মঞ্চে তুলে ধরা সহজ ব্যাপার না। রচয়িতা খান শওকতের স্ক্রিপটা পড়ে আমার ভালো লাগে। এরপরই আইডিয়াটা আসে। তবে বঙ্গবন্ধুর মতো উচ্চতা বা চেহারা ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া তো সহজ কাজ না। আইডিয়াটা ছিলো ও নতুন কিছু করার চেষ্টা, সেখান থেকেই আমাদের এবারের নিবেদন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’।
 
মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করা বিমান চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, এটা তো আর সিনেমা নয়, যে বারবার টেক দেওয়া যাবে। আবার শেখ মুজিবের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা ছেলে-খেলাও নয়। উনার ব্যক্তিত্ব বা তার আদব-কায়দা রপ্ত করতে অনেকগুলো রাত গেছে।  খুবই দুঃসাধ্য বিষয়।  

‘এরপরও আমি মনে করি মাত্র তিনমাসে তার মতো চরিত্র রপ্ত সহজ নয়। আরও সময় লাগবে। আমার মনে হয় মাত্র দশভাগ পেরেছি। ’

প্রশ্ন ছিলো বাংলাদেশে নাটকটা মঞ্চস্থ করবেন কী? হাসতে হাসতে বিমান বলেন, ইচ্ছা আছে। তবে যেদিন শতভাগ চরিত্রটা ফুটাতে পারবো সেদিন যাবো। কারণ ওটা বাংলাদেশ আর উনি বঙ্গবন্ধু।
 
নিউইর্য়ক প্রবসী নাট্যকার খান শওকত বলেন, ২১ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রিসার্চ করছি। ছোটছোট করে এর আগে নিউইর্য়কে নাটকটা করেছি। তবে সম্পূর্ণ নাটকটা কলকাতায় প্রথমবার করলাম।  

কলকাতায় কেন? জবাবে তার উত্তর, কলকাতা ছাড়া এটা আর কোথায় হতে পারে বলুন। আমি আমার দেশের পিএম অফিসেও বলেছি সম্পূর্ণ নাটকটা প্রথম কলকাতাতেই করতে চাই। আর বাংলাদেশ ও ভারত এক অপরের সম্পৃক্ত। আলাদা করে ভাবি না।  

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনোদিন ভারতের অবদান ভোলেননি আমরাও ভুলি না। রাজাকার তখনও ছিলো এখনও আছে আর পৃথিবীর অন্যতম সাংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতা। তাই কলকাতাকে বেছে নেওয়া। তবে আমি খুব খুশি বিমান যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে ফুটিয়ে তুলেছে। ওর অভিনয়ে আমি মুগ্ধ।
 
মঞ্চ নাটক দেখতে এসেছেন ২১ বছর বয়সী রতন সরকার। তার কখনও বাংলাদেশ যাওয়া হয়নি। নাটক কেমন লাগলো? বললেন, বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেছি। বিশেষ কিছু জানতাম না। বাংলাদেশের ফাদার অব নেশন এটুকু জানি। আমার বান্ধবীর চাপে নাটক দেখতে আসা। ভালো লেগেছে। অনেক কিছু জানলাম বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। বঙ্গবন্ধুর দুটো কথা আমার খুব মনে লেগেছে। যেমন- ‘আমি চাই পাকিস্তান আমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুক আর বাংলার বীর যোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাক। আর সাহস-সততা ও দেশপ্রেম এই তিনটে না থাকলে দেশ উপরের দিকে উঠতে পারে না। ’  
 
কলকাতায় মঞ্চস্থ হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’।  ছবি: বাংলানিউজ১০ মিনিট বিরতিসহ দেড় ঘণ্টার নাটকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার দাবি, পাকবাহিনী ও রাজাকারদের নির্যাতন, ২৫ মার্চের গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে  ওই সময়ের শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার, স্বাধীন বাংলাদেশ, জার্মানিতে বসবাসরত শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা, জিয়াউর রহমানকে সন্তানতুল্য আদর, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে খালেদা জিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াতপত্র, বঙ্গবন্ধুর হত্যার ষড়যন্ত্র এবং সবশেষে ১৫ আগস্টের কালো রাতের অন্ধকার সবকিছু উঠে এসেছে নাটকে।
 
শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোনালিসা রায় চৌধুরী, জিয়াউরের চরিত্রে তুষার কান্তি ঘোষ, রাজাকার রেজ্জাক হয়েছিলেন রঞ্জন মুখার্জী, বঙ্গবন্ধুর বন্ধু আব্দুল মান্নানের চরিত্রে অমিত গাঙ্গুলী এবং শেখ মুজিবের চরিত্রে বিমান চক্রবর্তীসহ ১৭ জন কলাকুশলী অভিনয় করেছেনে নাটকটিতে।  

এছাড়া পুরো নাটকটিতে সম্পূর্ণভাবে আর্থিক বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন ২৮ বছরের যুবক অভিষেক গাঙ্গুলী।
 
পুরোপুরি নির্ভুল অভিনয় বলা না গেলেও শত হাতের করতালির মধ্যে দর্শকদের একটা কথা কানে ভেসে এলো। ‘পরের বার কোথাও হলে পরিবারকে নিয়ে আসবো। ’

এক বাংলার চরিত্র আরেক বাংলায় ফুটে উঠলো। এটাই বাঙালির আসল সত্ত্বা। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, যারা মঞ্চস্থ করলেন এবং যারা দেখলেন তাদের সিকিভাগ বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেননি। তবে এই নাটক দুর্গাপূজার আগে ও পরে পশ্চিমবঙ্গের আরও কয়েক জায়গায় মঞ্চস্থ করা হবে। রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) কলকাতার জ্ঞানমঞ্চে ছিলো এরই শুভ মহরত।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।