ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

মমতার পরামর্শে জোট বেঁধে লড়াইয়ের প্রস্তাব নিল ‘ইন্ডিয়া’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩
মমতার পরামর্শে জোট বেঁধে লড়াইয়ের প্রস্তাব নিল ‘ইন্ডিয়া’

কলকাতা: মমতার নেতৃত্বে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের তৃতীয় বৈঠকে সমন্বয় কমিটি চূড়ান্ত হয়ে গেল। ‘ইন্ডিয়া’, যার পুরো নাম- ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স।

 

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুম্বাইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে বিজেপি বিরোধী ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রধানদের বৈঠকে তৈরি হলো ১৩ জনের কো-অর্ডিনেশন (সমন্বয়) কমিটি। ওই কমিটিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন দলটির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে বৈঠকে কমিটি তৈরির পাশপাশি রাজনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখেই মমতা বলেছেন, যতটা সম্ভব জোট বেঁধে দ্রুত ভোটের ময়দানে নামতে হবে। দেরি করা চলবে না। এমনকি জোট এবং ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে নেতাদের দ্রুত পা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।  

মমতা বৈঠকে বলেছেন, আমাদের আরও দ্রুত লড়াইয়ে ঝাঁপাতে হবে। সরকারপক্ষ নামার আগে আমাদের নামতে হবে। তৃণমূল নেত্রীর প্রস্তাব, ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর দিন ইন্ডিয়া জোটের ইস্তেহার প্রকাশ করে দেওয়া হোক।

বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ভারতের বড় শহরগুলোতে হবে জনসভা। শুক্রবার বৈঠকে জোটের আনুষ্ঠানিক স্লোগানও ঘোষিত হয়েছে -‘জুড়েগা ভারত, জিতেগা ইন্ডিয়া’। তাৎপর্যপূর্ণভাবে যা ছিল রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার স্লোগান।

কেনো এত তাড়াহুড়া? মূলত, মুম্বাই রওনা হওয়ার আগে কলকাতায় কয়েকদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেছিলেন, মোদী সরকার ভোট এগিয়ে আনতে পারে। একই কথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও বলেছিলেন। আর দুই নেতার বক্তব্য প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক শুরুর দিনে মোদী সরকার সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায়।

এদিন (১ সেপ্টম্বর) মোদী সরকারের ভাবনায় ‘এক দেশ এক ভোট’। যা বাস্তবায়নে সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছে। মোদী সরকারের এমন ভাবার কারণ, তারা বলছে, একদিনেই সবধরনের ভোট হয়ে যাক। এতে ভোটে খরচ কমবে এবং সরকারি কর্মচারীরাও স্বস্তি পাবেন।

প্রসঙ্গত, ভারতে পঞ্চায়েত ভোট যেমনটা হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত পরিষদ এবং জেলা পরিষদের ভোট একসাথে হয়। অর্থাৎ পঞ্চায়েতভিত্তিক ভোটাররা একসাথে তিনটি করে ভোট দেন। ভারতের লোকসভা এবং বিধানসভায় ভোটসহ সব ধরনের ভোট একই কায়দায় ব্যবহার করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ঘোষণার পরই বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা দেখা করেছেন কোবিন্দের সঙ্গে। সরকারিভাবে নির্বাচন কমিশনকেও এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল।

যদিও বিরোধী দলগুলো এর বিরোধিতা করেছে। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের প্ল্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে গোটা দেশে সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা ভোট হয়ে যাক। এতেই বেঁকে বসেছে বিরোধীরা। কারণ এ প্রস্তাব পাস হয়ে গেলে রাজ্যগুলোয় হয়ে যাওয়া বিধানসভা ভোট ফের নতুন করে হবে।

ধরা যাক, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট হয়ে গেছে। আগামী ভোট ফের ২০২৬ সালে। তবে নতুন পদ্ধতিতে ভোট হলে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের ভবিষ্যৎ কী হবে? অথবা বাকি রাজ্যগুলোর কি হবে? এ প্রশ্ন বিরোধীদের থেকে যাচ্ছে। তবে কি রাজ্যের সরকার ফেলে দিয়ে আবার ভোটের মুখোমুখি হতে হবে? এমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগ। যার কারণে সব ধরনের প্রস্ততি নিতে শুরু করেছে বিজেপি রিবোধী ইন্ডিয়া জোট।

অপরদিকে, তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ ইন্ডিয়া জোটের ১৩ জনের সমন্বয় কমিটির অন্য নামগুলো হলো- কংগ্রেসের কেসি বেণুগোপাল, এনসিপি সভাপতি শারদ পাওয়ার, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) সঞ্জয় রাউত, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, জেডিইউ নেতা লালন সিং, আমআদমি পার্টির সাংসদ রাঘব চাড্ডা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন, সমাজবাদী পার্টির জাভেদ খান, সিপিআই নেতা ডি রাজা, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) প্রধান মেহেবুবা মুফতি এবং সিপিআইএমের একজন সদস্য (এখনও নাম ঘোষণা হয়নি)।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, বিরোধী নেতা নেত্রীরা দেশের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই সবাই একসঙ্গে মিলে নির্বাচনে লড়াই করলে বিজেপির জেতা কার্যত অসম্ভব। বিরোধী জোট খুব সহজেই বিজেপিকে পরাস্ত করবে। তার অভিমত, আমরা একটা স্বচ্ছ উন্নয়নের দিশা দেখাবো, যেটা দেশের অগ্রগতিতে দরিদ্র মানুষকে যুক্ত করবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুন জোটের প্রথম বৈঠক হয় বিহারের পাটনায়। সেখানে যোগ দেয় ১৭ দল। এরপর ১৭-১৮ জুলাই সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ব্যাঙ্গালুরুতে হয় দ্বিতীয় বৈঠকে। সেখানে জোট পরিণত হয় মহাজোটে। বৈঠকে অংশ নেয় ২৬ দল। ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর ছিল ইন্ডিয়া জোটের তৃতীয় বৈঠক। অংশ নেয় ২৮টি বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৩
ভিএস/নিউজ ডেস্ক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।