ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

নাখোদা মসজিদ ঘিরে কলকাতায় জমজমাট ইফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৩
নাখোদা মসজিদ ঘিরে কলকাতায় জমজমাট ইফতার জাকারিয়া স্ট্রিটে নাখোদা মসজিদ ঘিরে জমে ওঠে কলকাতার সবচেয়ে বড় ইফতার বাজার

কলকাতা—সিটি অব জয়। তবে এই শহরের আরও একটি নাম আছে—টেস্ট অব কলকাতা।

আর তার স্বাদ আরও বেড়ে যায় পবিত্র রমজান মাসে। জাকারিয়া স্ট্রিটে অবস্থিত নাখোদা মসজিদ। আর সেই মসজিদ ঘিরে বাহারি ইফতারে সেজে উঠেছে কলকাতার সবচেয়ে বড় ইফতার বাজার।

লখনৌ, হায়দ্রাবাদ, দক্ষিণ ভারত তো আছেই। আরও আছে আফগান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার বাহারি ইফতার। এ অঞ্চলের নামজাদা রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে জমে উঠেছে কলকাতার সবচেয়ে বড় ইফতার বাজার।



দুপুরের পর থেকেই গোটা জাকারিয়া স্ট্রিটজুড়ে থাকে ইফতার কিনতে আসা মানুষের ভিড়। তিল ধারণের জায়গা থাকে না। একদিকে বিক্রেতাদের হাঁকডাক, দোকানের সামনে লম্বা লাইন, অন্যদিকে জোর কদমে চলে প্রস্তুতি। ধোঁয়া ওঠা কাবাব থেকে শুরু করে আফগানি চিকেন, মুর্গ (মুরগি) চাঙ্গেজি, মুর্গ তৈমুরি, মাহি আকবরি, চাঙ্গেজি রোস্টেড, সুস্বাদু মাছের নানা আইটেম, হালিম, ফালুদা, রংবেরঙের শরবত, ছোলা, মুড়ি, ভাজাপোড়া, শাহি বিরিয়ানি, শাহি টুকরা, দেশি ও বিদেশি ফলের দোকান—সবখানেই লম্বা লাইন।

আর এসব খাবারের স্বাদ যে শুধুই রোজাদাররা নিচ্ছেন তা নয়, ইফতারির স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। আর আছে ‘শরবতে মহব্বত’, যার এক চুমুকে এ শহরের প্রেমে পড়তেই হবে!



বিকেলের পর থেকে খদ্দের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন রেস্তোরাঁর মালিকরা। একদিকে ক্যাশবাক্স, অপরদিকে ক্রমাগত সামলাতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মালিকের নির্দেশে মাথা গুঁজে কাজ করে যাচ্ছেন কর্মীরা। ক্যামেরা দেখলেও মুখ তুলে তাকানোরও যেন ফুরসত নেই তাদের। মালিকের চোখের আড়ালে একফাঁকে কোনো শ্রমিক ক্যামেরা দেখে হেসে ফেললেও জুটছে মুখ ঝামটা। ‘মজাগ হো রাহা হ্যায়, জলদি হাত চালাও’—মালিকের মুখের ঝামটিতেও হাসিমুখে ক্রেতাদের আবদার মেটাচ্ছেন দোকানের কর্মীরা। আর এই হাজারো কলকাতাবাসীর ভিড়ে মিশে গেছেন বাংলাদেশিরাও।

চিকিৎসা আর শপিংয়ের ব্যস্ততার ফাঁকে কলকাতাবাসীর সঙ্গে পথের মাঝে তারাও করছেন ইফতার। ঢাকা থেকে এসেছেন মাসুদ। তিনি বলেন, ঢাকাতেও একই অবস্থা। নাখোদা মসজিদের সামনে ইফতার করে মনেই হলো না বাংলাদেশের বাইরে আছি। আজকে অনেক সুন্দর করে ইফতার করেছি।



ঢাকার বাইরে যে আছেন তা মনে হবেই বা কেমন করে? এক সময় এই নাখোদা মসজিদ ছিল অবিভক্ত বাংলার মসজিদ। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, কলকাতা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ—সব মিলে যেতো নাখোদার দরজায়। গঙ্গা পাড়ের এই মসজিদ আজ শুধু ধর্মীয় স্থান নয়। আছে এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও।

খাবার দোকান পেরিয়ে গেলে শুরু জামা-কাপড়েও দোকান। এখানে মেলে টুপি, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, শাড়ি, রোরখা, থ্রিপিস। ইফতারের পর সেখানেও ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে।



রোবাবার রোজার ১০ম দিন। এরই মধ্যে বর্ণিল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে নাখোদা মসজিদ ও এর সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিট। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে উৎসবে মেতে উঠেছে বঙ্গবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।