ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতার ঈদ বাজারে ভিড় বাড়ছে বাংলাদেশিদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
কলকাতার ঈদ বাজারে ভিড় বাড়ছে বাংলাদেশিদের

কলকাতা: প্রতিবারের মতো ঈদের আগে কলকাতার নিউমার্কেটে জমে উঠেছে কেনাকাটা। সেখানে প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে বাংলাদেশিদের।

সবচেয়ে বেশি চাহিদা নারীদের পোশাক ও প্রসাধনী সামগ্রীর। তবে কলকাতার বাজারে কেনাকাটা শেষে দেশে ফিরতে গিয়ে অনেকেই পড়ছেন কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের সমস্যায়। তবে সঠিক উপায় জানা থাকলে মোকাবিলা করা যাবে ভারতের কাস্টমস সমস্যা, এমনই মত বিশেষজ্ঞদের।

কলকাতার নিউমার্কেটে এখন বাংলাদেশিদের ভিড়। তারা সবচেয়ে বেশি কিনছেন নারীদের পোশাক ও সাজসজ্জার পণ্য। বাংলাদেশিদের মতে কলকাতার বাজারে দাম যেমন নাগালের মধ্যে, তেমন রয়েছে পোশাকের বৈচিত্র্য। বাড়তি পাওনা বিক্রেতাদের ভালো ব্যবহার। বাংলাদেশিদের অভিমত, দুই বছর করোনার জন্য আসা যায়নি। এবার তাই রমজান পড়তেই আসা। কলকাতার বাজার এখনো সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। তবে হোটেল নিয়ে সমস্যা আছে অনেকের।

ঢাকার কাঁঠালবাগান থেকে আসা এক ক্রেতা বললেন, বাজারের অবস্থা ভালো। কেনাকাটা ভালোই করছি। বাজারে দামও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দামের নিয়ন্ত্রণ নেই শুধু হোটেলগুলোয়। যে যা পারছে হোটেল রুমের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।



নারায়ণগঞ্জবাসী শাহীন বলেন, প্রায় তিন বছর বাদে কলকাতায় কেনাকাটা করতে এসেছি। প্রতিদিন নিউমার্কেট যেন একটু একটু করে মিনি বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে। প্রচুর বাঙালি আসছে। খাবার হোটেল থাকার, হোটেল সব জায়গায় বাঙালিদের ভিড়। বেশ ভালো লাগছে।

ঢাকা থেকে এসেছেন আফরিন। জুতা ও আনুষঙ্গিক অন্যন্য পণ্য বাদেও নিজের ও পরিবারের জন্য কিনেছে ২০টি থ্রিপিস এবং চারটি শাড়ি। তার অভিমত, বেশ কয়েকদিন ধরেই কলকাতায় আছি, কেনাকাটাও করছি, ভালো লাগছে। এখানে দাদাদের ব্যবহার অনেক ভালো। তারা খুবিই কোঅপারেট করেন। তবে দাম যে এখানে সস্তা, সেটা ঠিক নয়। টাকা এবং রুপি অনুয়ায়ী, হিসাব করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে যা পড়ত, একই পড়ছে কলকাতায়। তবে কলকাতায় প্রচুর ভ্যারাইটি আছে। যার জন্য কিনে মজা পাচ্ছি।

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা কয়েকটা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই কেনাকাটি সাড়েন। হয় নিউমার্কেট নয় বড়বাজার নতুবা কোয়েস্ট মল বা সাউথ সিটি মল। এর বাইরে তারা যেতে চান না। বিক্রেতাদের মত, কলকাতা মানে প্রচুর বৈচিত্র্য। কারণ, এখানে  শুধু বাংলার পণ্যই বিক্রি হয় না। গোটা ভারত থেকে বিভিন্ন স্টাইলের পোশাক কলকাতায় আসে। যে কারণে এখানে পোশাকের বৈচিত্র্য বেশি। এখানকার একটা ছোট দোকানেও কম করে ২০-২৫ রকমের পোশাকের মজুত থাকে। সেখানে দক্ষিণ ভারত, উড়িষ্যা, বিহার, মুম্বাই, রাজস্থান মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ রকম পোশাকের বৈচিত্র্য থাকে প্রতিটা বড় দোকানে।

নিউমার্কেটের এক নারী পোশাক বিক্রেতা বলেন, কতটা দূর থেকে শুধু কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশিরা কলকাতায় আসেন। ফলে তাদের যদি আমরা ভালো জিনিস দিতে পারি, তারা ঘুরে ফিরে আসবে আমাদের কাছে। আমরা সেই চেষ্টা এবং ব্যবহারটা রাখি। যে কারণে, নিউমার্কেটের প্রতিটা দোকানে বাংলাদেশি ক্রেতা আছে। তারা কলকাতায় পা দিলেই বিভিন্ন দোকান ঘুরেফিরে নিজের পরিচিত দোকানে একবার আসবেনই। বছরের পর বছর তাদের সাথে সম্পর্ক রয়ে যায়। তবে সব ধরনের ব্যবসায়ী একটা বিষয়ে এক মত যে, বাংলাদেশি ক্রেতারাই নিউমার্কেট অঞ্চলের বিক্রেতাদের জীবিকা নির্বাহে অনেকটাই সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে ঈদের সময়।



তবে অনেক বাংলাদেশির ভিন্ন মত আছে। তারা মনে করেন কলকাতায় কেনাকাটার পর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভারতীয় পার্টের ইমিগ্রেশন-কাস্টমসে। ঢাকা থেকে এসেছেন আব্দুল মালিক খান। তিনি বলেন, আমরা তো ঈদের কেনাকাটা করতে বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছি। কলকাতার মার্কেট নিয়ে কিছু বলবো না, যথেষ্ট সহযোগিতা করে। কিন্তু দেখা যায়, যখন আমরা কলকাতা ত্যাগ করি তখন ইন্ডিয়ান কাস্টমস হ্যারাসমেন্ট করে। তোমরা কী কিনেছ? জিএসটি (ভারতীয় ট্যাক্স) দিয়েছ কিনা? প্রমাণ কই? দেখাতে না পারলে লাগেজ খুলে সবকিছু ঘেঁটেঘুটে ভোগান্তি করে ছেড়ে দেয়।

তবে এই সমস্যার যদি মোকাবিলা করতে হয় তাহলে অবশ্যই জেনে রাখবেন, আপনি যা কিনছেন বা যতটুকু কিনছেন, তার সমস্ত বিল দোকানদারের কাছ থেকে নিন এবং বর্ডার পার হওয়া অব্দি সেগুলো আপনার কাছেই রেখে দিন। মনে রাখবেন, ছোট থেকে বড় প্রতিটা দোকান আপনাকে বিল দিতে বাধ্য। সেই বিলই প্রমাণ করবে আপনার কেনা পণ্য বৈধ এবং ভারত সরকারে ট্যাক্স দিয়ে কেনা। যা আপনি পরিবারের জন্য কিনেছেন কোনো ব্যবসায়িক কারণে নয়। এতে অনেকটাই জটিলতা কাটবে কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।