ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

বসন্ত উৎসবের বদলে বিশ্বভারতীতে কেন বসন্ত বন্দনা, জানালেন উপাচার্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
বসন্ত উৎসবের বদলে বিশ্বভারতীতে কেন বসন্ত বন্দনা, জানালেন উপাচার্য

কলকাতা: করোনা ভাইরাসের দাপট প্রায় নেই বললেই চলে। তবু কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বভারতীতে এবারও হচ্ছে না ‘বসন্ত উৎসব’।

তার বদলে ‘বসন্ত বন্দনা’র সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ।  

গত সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠানের সূচি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থী, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং শিক্ষাকর্মীরাই শুধুমাত্র বসন্ত বন্দনায় অংশ নেবেন। এর বাইরে আর কেউ অনুষ্ঠানে সামিল হতে পারবে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আশ্রমিক, শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের একাংশ।

তবে বসন্ত উৎসবের বদলে দোল উপলক্ষে ঐতিহ্যমণ্ডিত বিশ্বভারতী কেন বসন্ত বন্দনা? এ বিষয়ে বুধবার (১ মার্চ) স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিশ্বভারতীর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসবের নামে তাণ্ডব চলে। এ সবের পিছনে থাকেন কিছু বুড়ো খোকারা। তাই এই তাণ্ডব বন্ধ করেছি। তবে বসন্ত বন্দনা হবে।

এদিন বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপাচার্য বলেছেন, ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসবের নামে আমরা তাণ্ডব দেখেছিলাম। সেই তাণ্ডবই আমরা বন্ধ করেছি। তার বদলেই করা হচ্ছে বসন্ত বন্দনা। পাশাপাশি বিশ্বভারতীর এই প্রথা পরিবর্তন নিয়েও নানা বক্তব্য দেন উপাচার্য। তিনি বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনোই এই উৎসবের নামে তাণ্ডব চাননি। সে কারণেই এই প্রথার পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তিনি এদিন বলেছেন, বিশ্বভারতীতে অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। যারা বিশ্বভারতীর অনেক ক্ষতি করছে।

উপাচার্যর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজ্যের শাসক দলের সাথে মোটেও সুসম্পর্ক নেই বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। ২০১৯ সালে শেষ বসন্ত উৎসবে হয়েছিল বিশ্বভারতীর মাঠে। সে বছর ভিড় হয়েছিল আড়াই লাখ মানুষের। ভিড় সামাল দিতে না পারায় পদপৃষ্ট হয়েছিলেন অনেকে। এছাড়া ওই সময় বহু অসংত কার্য়কলাপ নজরে আসে বিশ্বভারতীর কতৃপক্ষের। বসন্ত উৎসবে পরে ৩৫ বস্তা মদের শিশি-বোতল অবর্জনা পরিষ্কার করেন কতৃপক্ষ, এমন অভিযোগ সামনে এসেছিল।  

এরপর ২০২০ সালে ঠিক করা হয়েছিল, ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি হবে বসন্ত বন্দনা এবং দোল উপলক্ষ্যে ১৯ তারিখ হবে বসন্ত উৎসব। এ অনুষ্ঠান সীমাবদ্ধ থাকবে আশ্রমিক, শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের মধ্যেই। সে সময় বসন্ত উৎসবের পরিবর্তনের বিষয়টা ভালভাবে নেননি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যা নিয়ে বহু জলঘোলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কোভিডের কারণে বাতিল হয়েছিল বসন্ত উৎসব।

এরপর ২০২১ সালে উপাচার্যের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের কারণে বারেবারে শিরোনামে উঠে আসে বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের নাম। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে একুশে বিধানসভা নির্বাচনে আগে উপাচার্যের উদ্দেশে হুমকির সুরে অনুব্রত বলেছিলেন, ‘নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর যে শিক্ষা দেব তুমি সারাজীবন মনে রাখবে। ’ এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন উপাচার্য। যদিও এ দুজনেই এখন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জেলে।  

এক সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমল থেকে দোল পূর্ণিমার দিনেই বসন্ত উৎসবে মেতে ওঠে শান্তিনিকেতনবাসী। উৎসবে সামিল হতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ শান্তিনিকেতনে ভিড় জমাতেন। সেই শান্তিনিকেতনে ২০১৯ সালে শেষবার বসন্ত উৎসব হয়েছিল। তারপর থেকে অর্থাৎ ২০২০-২১-২২ সালে শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়নি। এবছর হচ্ছে না বসন্ত উৎসব। তবে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনেকেই সরব হয়েছেন। উপাচার্য রীতি-বিরুদ্ধ কাজ করছেন বলে অভিযোগ বহু আশ্রমিকের।

বিশ্বভারতী এবারের প্রকাশিত সূচি অনুযায়ী, আগামী ২ মার্চ থেকে শুরু হবে বসন্ত বন্দনা। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় লোক-সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বসন্ত বন্দনার সূচনা হবে। রাত ৯টায় বৈতালিক। পরদিন অর্থাৎ ৩ মার্চ ভোর ৫টায় গৌরপ্রাঙ্গণে বৈতালিকের পর সকাল সাতটায় বেরোবে শোভাযাত্রা। এরপর ৭ মার্চ অর্থাৎ দোলের দিন গৌরপ্রাঙ্গণে পূর্ণদাস বাউলের গান দিয়ে শেষ হবে বসন্ত বন্দনা। এ অনুষ্ঠানেও বাইরের কেউ অংশ নিতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
ভিএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।