ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মিটফোর্ডে সেবা পেতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
মিটফোর্ডে সেবা পেতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

কেরানীগঞ্জ থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় মিটফোর্ডে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন রাকিবুল সরকার। সকাল ন’টায় টিকিট মিললেও তাতে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতে সিরিয়াল পেতে বেলা সাড়ে ১২টা। এখানেই শেষ হয়নি...

ঢাকা: কেরানীগঞ্জ থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় মিটফোর্ডে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন রাকিবুল সরকার। সকাল ন’টায় টিকিট মিললেও তাতে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতে সিরিয়াল পেতে বেলা সাড়ে ১২টা।

এখানেই শেষ হয়নি, এবার ডাক্তার তাকে কিছু পরীক্ষার জন্য লিখে দিয়েছেন।

অনেকটা আক্ষেপের সুরেই তিনি বলেন, ‘এবার টেস্ট করতে কতক্ষণ লাগবে কে জানে? আজ টেস্ট করাতে পারলেও ডাক্তার দেখাতে দেখাতে আবার একদিন দেরি। ’

সোমবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে সরেজমিনে এমন চিত্রই পাওয়া যায়। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতালটি মিটফোর্ড হাসপাতাল নামেই পরিচিত।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে রকিবুল জানান, ‘সকাল সাড়ে সাতটায় এসেও দেখি টিকিট পেতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার দেখানোর টিকিট সংগ্রহ করি। তারপর ডাক্তার দেখাতে এসে আবার লাইন। প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা অপেক্ষার পর ডাক্তার দেখাতে পেরেছি’।

তিনি বলেন, ‘জ্বর বলে ডাক্তার দেখাতে আসলাম। কিন্তু রক্ত পরীক্ষা করিয়ে আজকেই আবার ডাক্তার দেখানো সম্ভব না। রক্ত দিতে দিতেই কয়টা বাজবে তার হিসেব নেই। জ্বর নিয়ে এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তাও যদি একদিনে শেষ করা যেতো’।

বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সামনেই টিকিট কাউন্টার। তারপর নিচতলায় মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা ও গাইনী, কার্ডিওলজি ও সার্জারির চিকিৎসক দেখানো হয়। দ্বিতীয় তলায় চক্ষু, নাক-কান-গলা, শিশু, প্যাথলজি, দন্ত, চর্ম ও যৌন বিভাগ। আর তৃতীয় তলায় ইকো কার্ডিওলজি করানো হয়।

ডাক্তার দেখানোর পর যেসব পরীক্ষা করতে দেওয়া হচ্ছে সেসবের জন্য টাকা জমা দেওয়ার কাউন্টারও বহির্বিভাগের নিচতলায় সামনের দিকে।

প্রত্যেকটি বিভাগেই অপেক্ষমাণ রোগীদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। নিরাপত্তা কর্মীদের এসব লাইন ঠিক করতে গলদঘর্ম অবস্থা। একাধিক নিরাপত্তা কর্মী শুধু লাইন ঠিক করতে একপাশ থেকে আরেকপাশ ঘুরে অনুরোধ করে যাচ্ছেন।

রোগীদের দীর্ঘ লাইন প্রসঙ্গে মেডিসিন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার বলেন, দেখছেনতো এতো সংখ্যক রোগী, সে অনুযায়ী ডাক্তার দরকার ছিল কমপক্ষে ১৫ জন। আর এখানে আমরা বিভাগপ্রতি ৪-৫ জন ডাক্তার। সাধ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে ডাক্তারের পূর্ণ ব্যবস্থাপত্র পেতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দু’দিন প্রয়োজন।

তবে কর্তৃপক্ষের সাধ্যের সঙ্গে সমন্বয়ের কারণে রোগী দেখা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও সেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বহির্বিভাগে।

ইসলামপুর থেকে আব্দুল বাছেত এসেছেন ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে। তিনি বলেন, ডাক্তার দেখানো শেষ। টেস্ট করতে দিছে, হেইডাও করাইছি। এহন আবার ডাক্তার দেখামু।

ভিড় আর বিভিন্ন ভবনে দৌড়ঝাঁপ ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি।  

এ বিষয়ে হাসপাতালের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, একটা সময় ছিল যখন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যেতো না। এখন অবস্থা পাল্টেছে, ডাক্তার আছেন, সেবাও দিচ্ছেন। তবে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া সেবা পেতে আরো ডাক্তারসহ অন্যান্য কর্মী প্রয়োজন।

এদিকে, হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ রোগীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাদের সংখ্যা।

ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে যখন রোগীরা হাসপাতাল ছাড়বেন তখন রোগীদের পথ আগলে দাঁড়ান তারা। সবার কাছে থাকা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ধরে শুরু হয় টানাটানি। একজন করে প্রায় সবার হাত ঘুরে সেই প্রেসক্রিপশন আবার রোগীর হাতে পৌঁছায়। কেউ আবার ডিজিটাল ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন দিয়ে সেই প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে ব্যস্ত।

জীবন রায় নামের এক রোগী বলেন, ৪-৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখালাম। বের হব এমন সময় তাদের এ টানাটানি খুবই অসহ্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।