ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসায় বাধা দালাল

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসায় বাধা দালাল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা সেবায় বড় বাধা দালালেরা। ভবঘুরে দালাল ছাড়াও হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তারাও দালালির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা: রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা সেবায় বড় বাধা দালালেরা। ভবঘুরে দালাল ছাড়াও হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তারাও দালালির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।


 
গত কয়েকদিন হাসপাতালটি ঘুরে এবং রোগী, স্বজন ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে এ অভিযোগ পাওয়া যায়।  

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) হাসপাতালটিতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় ঘুরে দেখা যায়। আলাপ করে জানা গেল, হাসপাতালের মূল ভবন থেকে বহির্বিভাগ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে স্থানান্তরের পর থেকে সুবিধা হয়েছে রোগীদের‍। এখানে নিয়ম মেনে টিকিট কেটে সিরিয়াল মেনেই রোগীদের চিকিৎসক দেখাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিযোগ, ভবঘুরে দালালদের পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তারা বাড়তি অর্থের বিনিময়ে লাইনে দাঁড়ানোর সিরিয়াল এগিয়ে দেন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সবচেয়ে বেশি দাপট রয়েছে প্যাথলজি বিভাগে। সেখানে টাকা না দিলে সিরিয়াল পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
 
নারায়ণগঞ্জে বাস দুর্ঘটনায় আহত শামছুল হককে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী রোকসানা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানে টাকা না দিলে এক্স-রে করার সিরিয়াল পাওয়া যায় না। অনেকেই বাইরে থেকে করিয়ে আনেন বেশি টাকা দিয়ে। এক্স-রে খরচ ৫৫ টাকা হলেও সিরিয়াল এগিয়ে নিয়ে আসতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
 
এই হাসপাতালে রোগীদের জন্যে ড্রেসিং একটি নিয়মিত বিষয়। রোগীরা জানিয়েছেন, ড্রেসিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এমআরআই, সিটিস্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদিতেও বাড়তি অর্থ না দিলে কাজ হয় না। আবার জরুরি বিভাগের রোগীদের কাছ থেকে প্যাথলজির রশিদ না দিয়ে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগও করেন রোগীরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, জরুরি অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে বিভাগ ও রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ঘুরে চিকিৎসকদের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে সবগুলোতেই দেখা যায় রোগীদের চাপ।

কর্তব্যরত জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শুভ প্রসাদ বাংলানিউজকে বলেন, এই হাসপাতালে এলে রোগীরা সর্বোচ্চ সেবা পাবেন। তবে রোগীদের যেহেতু বেশি চাপ থাকে, একটু ধৈর্য ধরতে হয়। যেহেতু কোনো রোগীকেই ফেরানো হয় না, সেহেতু ধৈর্য ধরলেই ভাল সেবা পাবেন এখানে।
 
কয়েকটি বিভাগ ঘুরে অভিযোগ পাওয়া গেল, রোগীদের অনেক সময় দালালেরা পঙ্গু হাসপাতালের কথা বলে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে রোগীপ্রতি কমিশন পায় তারা। আবার সিনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও নিজেদের চেম্বারে রোগী সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেল বেশ।  
এ হাসপাতালে দালালির অভিযোগে গত ২৯ মে অভিযান চালিয়ে ফার্মেসি মালিকসহ ৯ জন পাকড়াওয়ের পর জেল-জরিমানা করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তারও আগে গত ১৭ এপ্রিল চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে ১৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় র‌্যাবেরই ভ্রাম্যমাণ আদালত।
 
সেসময় জানানো হয়, দণ্ডিতরা হাসপাতালটির সামনে অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
 
চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ইকবাল কাভির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এমএন/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।