ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল

কম খরচে ডায়ালিসিস রক্ষা করছে রোগীদের

রেজাউল করিম বিপুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৬
কম খরচে ডায়ালিসিস রক্ষা করছে রোগীদের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুর: খাদ্যে ভেজাল ও নিয়মিতভাবে সঠিক জীবনপদ্ধতি অনুসরণ না করার কারণে প্রতিনিয়ত দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাদের মধ্যে যাদের কিডনি অকেজো হয়েছে, সপ্তাহে দু’বার ডায়ালিসিস চিকিৎসার মাধ্যমে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে তারা বেঁচে আছেন।

এ চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশের সব জেলায় না থাকায় এবং চিকিৎসা নিতে অনেক টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আক্রান্ত রোগীরা প্রতিনিয়তই সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে ফরিদপুরে ডায়বেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে এ চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে।

হাসপাতালটির ডায়ালিসিস টেকনিশিয়ান ফজলুল হক বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহে একদিন শুক্রবার এ চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকে। বাকি ছয়দিন দুই শিফটে ১০টি হিমো ডায়ালিসিস মেশিনের মাধ্যমে মাসে পাঁচ শতাধিক রোগীকে ডায়ালিসিস সেবা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, কিডনি অকেজো একজন রোগীকে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ও অধিকাংশ রোগীকে সপ্তাহে দু’বার ডায়ালিসিস করাতে হয়। এতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগে।

এ হাসপাতালে গত দুই বছর ধরে ডায়ালিসিস সেবা নেওয়া এক রোগীর স্বামী পরিতোষ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর কিডনির সমস্যা হওয়ার পর প্রথমে ঢাকায় ডায়ালিসিস চিকিৎসা করাতাম। সেখানে ডায়ালিসিস করাতে চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতো। ফরিদপুর থেকে সপ্তাহে একবার ঢাকা যেতে হতো। থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা সব মিলিয়ে প্রতিবারে ছয়-সাত হাজার টাকা ব্যয় হতো আমার’।

তিনি আরও বলেন, এখন ফরিদপুরে এ চিকিৎসা পাওয়ার কারণে ঢাকায় যাতায়াতের খরচ লাগছে না। এ সেবাটিও ঢাকার চেয়ে কম খরচে ফরিদপুরে পাওয়া যাচ্ছে।

ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে খরচ হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা। সেবার মান নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

আছিয়া বেগম নামে এক মা বাংলানিউজকে জানান, তার ছেলের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত ছয় মাস ধরে নিয়মিত এ হাসপাতালেই ডায়ালিসিস করাচ্ছেন তার ছেলেকে। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় ডায়বেটিক হাসপাতাল থেকে তাকে ৫০শতাংশ ছাড়ে মাত্র এক হাজার টাকায় এ সেবা দেওয়া হয়।

ডায়ালিসিস বিভাগে দায়িত্বরত তানিয়া আক্তার বলেন, ‘একই রোগী নিয়মিতভাবে সেবা নিতে আসার কারণে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এখন আর রোগী নয়, আমরা ভাই-বোন, কোনো সময় বাবা-মেয়ের মতো আচরণ করে থাকি। তাই এখানে আসা রোগীরাও আমাদের এখন আত্মীয় হয়ে গেছেন। ফলে সেবা পেতেও কারো কোনো সমস্যা হয় না’।

ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসেসিয়েশন হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও কিডনি সার্জন ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন খাবারে ফরমালিন ও বিভিন্ন ধরনের খাবারে বিভিন্ন মেডিসিন প্রয়োগের কারণে এবং অনিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের কারণেই আমরা কিডিনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। সমস্যা থেকে রেহাই পেতে নিজেদের সচেতন হয়ে শৃঙ্খল জীবন-যাপন করতে হবে’।     

ফরিদপুর ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রয়াত চিকিৎসক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নীতি স্মরণ করে। কোনো ডায়াবেটিস রোগী গরিব হলেও বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন না। আমরা সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় মানুষের সেবা করে যাচ্ছি’।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে একটি মেশিন দিয়ে ডায়ালিসিস সেবা শুরু করা হয়। বর্তমানে ১০টি ডায়ালিসিস মেশিন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সহায়তায় খুব তাড়াতাড়ি আরও ১৩টি মেশিন যোগ হচ্ছে হাসপাতালটিতে। এতে করে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কিডনি রোগীদের ডায়ালিসিসের জন্য আর ঢাকায় যেতে হবে না। ঢাকার চেয়েও কম খরচে ডায়াবেটিক হাসপাতালেই এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুর ছাড়াও এ অঞ্চলের মধ্যে কুষ্টিয়া ও খুলনায় এই ডায়ালিসিস সেবার ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৬
আরকেবি/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।