ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘আমি ডোম, হাজারও লাশ কাটার অভিজ্ঞতা’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৬
‘আমি ডোম, হাজারও লাশ কাটার অভিজ্ঞতা’

ঢাকা: ‘বাবার সূত্র ধরে ডোম হয়েছি, জীবনে হাজারও লাশ কাটার অভিজ্ঞতা। এতে অনেকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখেন।

তবে আমাদেরও তো জীবন আছে, সংসার আছে। পেশা হিসেবে ডোম বলে কি মানুষ না আমরা’?
 
নিজের মনের এই প্রশ্নটির উত্তর যেন পান না রতন (ছদ্মনাম)। বাংলানিউজের কাছে কথা বলতে বলতে তাই এভাবেই প্রশ্ন করে বসলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চাকরি করলেও ‘হতভাগ্য’ জীবন বলে মনে করেন! তার নিজের বক্তব্য এমনই। কেন আর আট-দশজনের মতো নিজেকে ভাবছেন না, জানতে চাইলে রতন বলেন, মর্গের ডোম (মর্গ অ্যাটেনডেন্ট) আমার পোস্ট। বাবা এই কাজ করতেন, আমিও করি। সঙ্গে আমার দুই ভাইও রয়েছেন। কিন্তু যে কাজ করে সমাজে পরিচয় দিতে পারি না, সে কাজের মূল্য কী বলেন! তাই হতভাগ্য জীবন।
 
ঢামেক মর্গের সামনে বসে অল্প-বিস্তর কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। জমে ওঠা আলাপে বললেন, সুখ-দুখের নানা কথা।  
 
‘সকাল হলেও লাশ (মরদেহ) দেখি। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও লাশ দেখি। এমনও হয়েছে ২৪ ঘণ্টাই লাশের সঙ্গে কাটিয়েছি। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুলিশ লাশ পাঠায়। তা যত্ন নিয়ে গাড়ি থেকে নামাই, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তা কাটি। তিনি যেখানে কাটতে বলেন, সেটিই করি। মরা শরীর কাটাকাটি করতে করতেই কর্মজীবন পার করে দিচ্ছি...’।
 
বর্তমানে মর্গের কাজ নিয়ে তিনি বলেন, এক সময় হাতুড়ি দিয়ে ময়নাতদন্ত হয়েছে। এখন ঢামেক মর্গ ডিজিটাল। বিভিন্ন ধরনের আধুনিক মেশিন আছে। ধীরে ধীরে এই পেশাও ডিজিটালি আধুনিক হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি। আর কাজের মানুষ, কাজ করে যাচ্ছি বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ওপর।
 
জীবনে অবসর কোথায়? উত্তরে রতন, মাঝে মাঝে ঘুরতে-বেড়াতে যাই। অনেকে জানেন না আমি কী করি। তবে যারা জেনে নেন তারা বাঁকা চোখে দেখেন। আমাকে দেখে আঙুল তোলেন। আমার পেশা এটি, বাবাও এ কাজ করতেন, আমি কী করে এসব ছেড়ে দেই? আমি বা আমরা না করলে এ ধরনের কাজ আর করবেটা কে!
 
‘ভোরে বাসা থেকে বের হই। অফিসের হাজিরা খাতা সই করে শুরু করি কর্মযজ্ঞ। দৈনিক গড়ে ১০/১২টি লাশ কাটা পড়ে। আবার রাতের ডিউটি থাকলে তখন মর্গের পাশেই শুতে হয়। নয়তো লাশ স্বজনদের কাছে তুলে দিয়ে হাসপাতালেই গোসল করে বাসায় ফিরি’।
 
বাসায় কেমন কাটে সময়? জবাবে রতন, বাসায় গিয়ে মনটা ভরে যায়। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। তারা এতো ভালো পারে যে খুশিতে হৃদয়টা দুলে ওঠে। বাবা হিসেবে গর্ব হয়। কেননা আমাদেরও তো জীবন আছে, সংসার আছে। মনে আছে গভীর ভালোবাসা। সমাজ থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও স্ত্রী-সন্তানের জন্য প্রেম-ভালোবাসা আর আট-দশজনের মতোই। ঢামেক হাসপাতালে কাজ করছি বাবার সূত্র ধরে, এটা একটা পেশা আর কিছুই না। আমার বাবাও একই পেশায় কর্মরত ছিলেন, আমরা তিনভাইও তাই। অনেকেই শখ করে ঢামেক মর্গে আসেন লাশ কাটা দেখতে, এসেই বলেন ডোমকে! ডোম কই, আমরা একটু লাশ কাটা দেখতে চাই। আমাদের ডোম বলার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেন আমাদের অন্য চোখে দেখবেন বলেন! যতটা নামে ভয়-ঘৃণা করেন আপনারা, ঠিক ততটাই বিনয়ী আমরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
এজেডএস/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।