ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ছে

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৬
গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ছে

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সোহেলি হোসেনের (ছদ্মনাম) বয়স ২৯ বছর। গত একমাস আগে গর্ভধারণের বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি।

স্বামীর সঙ্গে সহবাসের পর একমাস পার হয়ে গেলেও মাসিক হয়নি তার। তবে প্রথমবারের অভিজ্ঞতায় নিজের গর্ভধারণের বিষয়টি বুঝে উঠতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়।
 
প্রায় দেড় মাস পর চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হলে হতাশার কথা শোনান চিকিৎসক। প্রথমবারের মতো মা হওয়ার স্বপ্নপূরণ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ঝাঁকুনি এবং অ্যালার্জিজনিত কারণে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি বলেও জানান চিকিৎসক।
 
হোসেন-নায়লা দম্পতি (ছদ্মনাম) বাংলানিউজকে বলেন, এক সপ্তাহ পরের নিরীক্ষায় চিকিৎসক জানান, এরই মধ্যে শিশু নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ৭০ শতাংশ। থেমে থেমে রক্তপাত শুরু হয় নায়লার। দুই মাসের মাথাতেই গর্ভপাত করাতে হয়। বিশেষ ওষুধের সাহায্যে প্রচুর রক্তপাত এবং অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গর্ভপাত হয়। প্রথমবারের মতো সন্তানের মুখ দেখা হয় না তাদের।  
 
রাজধানীর মালিবাগে শামছুল হক-রুমি (ছদ্মনাম) দম্পতিরও একই দুর্ভাগ্য। গর্ভধারণের মাত্র দেড় মাসের মাথায় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে গর্ভপাত হয় রুমির। চিকিৎসক জানান, ঝাঁকি এবং কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাত পেয়ে বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে গেছে।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত এক দশক ধরেই বাড়ছে সময়ের আগেই গর্ভপাত হওয়া এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি ৪টি গর্ভের মধ্যে একটি গর্ভপাত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত বৈশ্বিক পত্রিকা ল্যনসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর ৫ কোটি ৬০ লাখ গর্ভপাত হয়। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা ভয়াবহ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনী দেশগুলোতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও গরিব দেশগুলোতে গত ১৫ বছরে এ অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই গর্ভপাতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। গর্ভনিরোধক হিসেবে প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর নতুনত্বের কথাও ভাবা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি ও অবস্টাকল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম কাজল বাংলানিউজকে বলেন, ২৮ সপ্তাহের আগে হলেই সাধারণত একে অ্যাবরশন বা গর্ভপাত বলা হয়।
 
তিনি বলেন, গর্ভপাত এড়াতে মাকে প্রথম তিন মাস বেশ সাবধানতার সঙ্গে রাখতে হবে। কারণ, প্রথম তিন মাসেই গর্ভে শিশু বেড়ে ওঠে প্রায় ৭০ শতাংশ। এ সময় নিয়মিত ডায়াগনসিস করা এবং চেক-আপের বিষয়টির ওপরও জোর দেন তিনি।
 
তিনি বলেন, এমনও ঘটনা ঘটছে যে, আমাদের মায়েরা মাসিক না হওয়ার কারণটা সর্ম্পকে জানতে পারছেন না। এরই মধ্যে হয়তো অতিরিক্ত ঘোরাঘুরির কারনে ঝাঁকুনিতে আঘাতপ্রাপ্ত গর্ভপাত হয়ে যায়।
 
তবে শহরের তুলনায় গ্রামে এ সংখ্যা বেশি বলেও জানান তিনি।
 
ডা. কাজল গর্ভে সন্তান নষ্ট হওয়ার পেছনে নারীদের বেশি বয়সে প্রথমবার গর্ভধারণ, পরিবেশ দূষণ এবং খাবারে রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রণকে দায়ী করেছেন।
 
এ কারণে পরিকল্পিত গর্ভধারণের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। বলেন, যে দম্পতি সন্তান নিতে চান, তাদের আগেই একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করে নিতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৬
এমএন/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।