ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘গুঁড়োদুধে বাড়ছে শিশু মুত্যুঝুঁকি, বন্ধ করতে হবে বিজ্ঞাপন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
‘গুঁড়োদুধে বাড়ছে শিশু মুত্যুঝুঁকি, বন্ধ করতে হবে বিজ্ঞাপন’

ঢাকা: ‘মায়ের দুধই সর্বোত্তম’- এ চিরন্তন কথায় আস্থা নেই অনেক মায়ের। তাই তারা শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে এমনকি নবজাতকের মুখেও তুলে দিচ্ছেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গুঁড়োদুধ।

এর ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বে শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। নানা মুখরোচক বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়েও মায়েরা গুঁড়োদুধ খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন।

সিগারেটের মতো নানা কোম্পানির গুঁড়োদুধের বিজ্ঞাপনও বন্ধ করতে হবে।

‘শিশু পুষ্টি ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প ও শিশু খাদ্য আইন-২০১৩’ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। বুধবার (১৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুঁড়াদুধ বা প্রক্রিয়াজাত যেকোনো শিশুখাদ্য শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ৫ বছরের কম বছরের শিশুরা যদি মায়ের বুকের দুধ পান করে তবে বছরে দুই লাখ ২০ হাজার শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের কারণে শিশুদের গুঁড়োদুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বাড়ছে।

জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে ২০১১ সালে শিশুদের বুকের দুধ পান করানোর হার ছিল ৬৪ শতাংশ, বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশ। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্বের সর্বত্রই এ হার হওয়া উচিত ৯০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকখানি পিছিয়ে। এ হার বাড়াতে হলে গুঁড়োদুধের মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রকাশ করা মিডিয়ার নামে মামলা করতে হবে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিনিধি সায়কা সিরাজ সংলাপে বলেন, বিজ্ঞাপন দেখে মায়েরা শিশুকে গুঁড়োদুধ খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন। সাকিব-মাশরাফিরা যদি বলেন, গুঁড়োদুধ খেয়ে তারা সফল হয়েছেন, তাহলে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। দেশে দু’টি বাচ্চা যদি ভালো ফলাফল করে, তবে তাদের মুখ দিয়ে বলানো হয় গুঁড়োদুধ খেয়ে নাকি তারা ভালো ফল করেছে। এসব মিথ্যা তথ্য রোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের(বিএমএস) চেয়ারপার্সন ড. এসকে রায় বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মায়েদের গুঁড়োদুধ ব্যবহারে প্রলুব্ধ করা হলে মিডিয়ার নামে মামলা করতে হবে। প্রয়োজনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে হবে।

ফার্মেসি ও হাসপাতালের কাছে গুঁড়োদুধ বিক্রি রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে। শুধুমাত্র সরকারি অনুমোদন নিয়ে গুঁড়োদুধ বিক্রি করতে পারবে।

ব্র্যাকের গবেষক ফাহমিদা আক্তার বলেন, গুঁড়োদুধ পানে নবজাতক শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। গুঁড়োদুধ খাওয়ানোর ফলে শিশু ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।

নবাজাত শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, বিলিয়ন ডলার খরচ করে গবেষণায় প্রমাণিত, একমাত্র মায়ের বুকের দুধই পারে শিশুকে রক্ষা করতে। শিশুকে রক্ষা করতে হলে গুঁড়োদুধ বয়কট করতে হবে।

প্রসূতি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর টিএ চৌধুরী বলেন, টেলিভিশনে সিগারেটের বিজ্ঞাপন যদি বন্ধ হতে পারে তবে গুঁড়োদুধের কেন নয়? সিগারেটের মতো গুঁড়োদুধের বিজ্ঞাপনও দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ওরা (মিডিয়া) যে গুঁড়াদুধের যে প্রমোশন করছে তা রোধ করতে হবে।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য পুষ্টি এবং জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ড. কাওসারা আফসানার সভাপতিত্বে জাতীয় সংলাপে অংশ নেন অবসটিট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলজিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি প্রফেসর রওশন আরা বেগম
প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়:  ১৪২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।