ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বেহাল দশায় স্বাস্থ্যসেবা

ধুঁকছে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৪
ধুঁকছে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানিকগঞ্জ: নামের শুরুতে আধুনিক শব্দটি থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতে নাম মাত্র সেবা দিয়েই দায় এড়াচ্ছে মানিকগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল।

কম খরচে ভাল চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় মূলত নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ সদর হাসপাতালে ভিড় জমালেও নানা সংকটে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।



হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি গত তিন বছর যাবৎ বিকল হয়ে পড়ে থাকায় যেকোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার করাতেই রোগীদের যেতে হচ্ছে আশে-পাশের বেসরকরি ক্লিনিকগুলোতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের তিনটি এক্স-রে মেশিনের দুটিই রয়েছে নষ্ট। আল্ট্রাসাউন্ড দুইটি মেশিনের মধ্যেও একটি নষ্ট।

রোগীদের স্বল্প খরচে স্থানান্তরের জন্য হাসপাতালের পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও মেরামত অভাবে কয়েক বছর আগেই দুটিকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। বাকী তিনটির মধ্যেও কিছু দিন যাবৎ একটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে।

১৯৯৯ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। এ সিদ্ধ‍ান্ত বর্তমানে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার আকার নিয়েছে। কাগজে-কলমে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতাল বলা হলেও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের লোকবল দিয়েই এখনও চালানো হচ্ছে হাসপাতাল কর্যক্রম।

বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫৫ থেকে ৬০ জন ডাক্তার প্রয়োজন হলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২০ জন। আনুপাতিক হারে সেবিকার সংখ্যা ঠিক থাকলেও সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ওয়ার্ড বয় নেই। যে কারণে দীর্ঘ দিন যাবৎ অফিস সহকারীদের দিয়েই চালানো হচ্ছে ওয়ার্ড বয়ের কাজ।

কেবল অপারেশন থিয়েটার ছাড়া অন্য কোথাও নিজস্ব বিদ্যু‍ৎ ব্যবস্থা (জেনারেটর) না থাকায় লোডসেডিং’র সময় ভূতুরে অন্ধকারেই থাকতে হয় চিকিৎসাধীন আবাসিক রোগীদের।

হাসপাতালে ২০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দরকার থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। এছাড়াও পুরো হাসপাতালে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় সৌচাগারগুলো একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ইংরেজী বিভাগের এক ছাত্র বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, হাসপাতালে টিকেট কাটা থেকে শুরু করে ভর্তি হওয়া, ওষুধ পাওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হলেও রাজনৌতিক সুপারিশ দরকার হয়।

দৌলতপুর উপজেলার থেকে ছেলের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন মধ্যবয়সী এক নারী। একই শর্তে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রোববার সকাল ১০টার দিকে সিরিয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি (আরএমও’র রুমে)। ডাক্তার সাহেব একবার এসে দুই জন রোগী দেখে চলে গেলেন আর কোনো খবর নেই। প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে থেকে এখন আমি নিজেই অসুস্থ প্রায়। যেদিনই আসি, সেদিনই হাসপাতালের একই অবস্থা। কখনোই চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল মালেক খান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকের তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশি। আমাদের অনেক দিক সামলাতে হয়, কি আর করার আছে।

এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করে হাসপাতালের সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মো. শাহ্ আলম বাংলানিউজকে বলেন, এসব সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানের চেষ্টা কর‍া হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে একটি সিটি স্ক্যান মেশিন এবং ১০ শয্যার একটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিউ) স্থাপনের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।