ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে ঝুঁকি বাড়বে বাত রোগীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৪
সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে ঝুঁকি বাড়বে বাত রোগীদের

ঢাকা: সঠিক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে ঝুঁকি বাড়বে বাত ব্যথার রোগীদের বলে জানিয়েছেন প্রফেসর ডা. নজরুল রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিএনআরএফআর) ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা।  

শনিবার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে বাত ব্যথা রোগীদের সচেতনতামূলক একটি অনুষ্ঠান থেকে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।

 

অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, দেশে ক্রমেই বাড়ছে বাতের কষ্টে ভোগা মানুষের সংখ্যা। শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা, নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মমাফিক জীবন পরিচালনা করা গেলে বাতের যন্ত্রণা থেকে অনেকটা স্বস্তি পেতে পারেন রোগীরা। উদ্বেগের বিষয় সঠিক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা না করা গেলে ঝুঁকিতে পড়বে রোগীদের জীবন।  

বাত ব্যথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী মাজা ব্যথা বাত, গিরাব্যথা, হাঁটুর অস্টিওআর্থরাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থরাইটিস, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশি।

চিকিৎসকরা আর বলেন, বাতের রোগীদের ওপর গবেষণা বাড়ানো গেলে আরও সুনির্দিষ্ট করে এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। যদিও দেশে বাত ব্যথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংকট দিন দিন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বাত ব্যথা সংক্রান্ত বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএনআরএফআর ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ও শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নীরা ফেরদৌস।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বিশ্বে দেশ ভেদে ২৫-৫০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন গিরা/পেশির ব্যথায় ভুগছেন। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি ভুগে থাকেন। গিরাব্যথার কারণে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কাজ করতে অক্ষম হয়ে যায়।

২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে যে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ১১ কোটি। সেই হিসেবে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ হাঁটুর অস্টিওআর্থরাইটিসে ভুগছেন (৭ দশমিক ৩ শতাংশ)।

তথ্য অনুযায়ী, হাঁটুর অস্টিওআর্থরাইটিসে নারীরা বেশি ভুগছেন। পাশাপাশি শারীরিক স্থূলতা ও হাঁটুতে আগে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অন্যদিকে কোমর ব্যথা বাতের (লাম্বার স্পনডাইলাইটিস) প্রকোপও অনেক বেশি। বাত নিয়ে দেশের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ১৮.৬ শতাংশ (২ কোটি ৫ লাখ বেশি) এ সমস্যায় ভুগছেন।

অন্যদিকে যৌবন বয়সের বাত রোগীদের স্পন্ডাইলো আর্থরাইটিসে (এসএপি) আক্রান্তের হারও উদ্বেগজনক। গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশের ১.২ শতাংশ (সাড়ে ১৩ লাখ) মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন।

এর বাইরে যে কোনো ধরনের ব্যথায় ভোগা মানুষ নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে গাউট রোগের চিকিৎসা নেন। যেখানে ইউরিক এসিডহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। তবে তথ্য বলছে, গাউট সমস্যায় ভুগছেন দেশের মাত্র ০.৫ শতাংশ (সাড়ে ৫ লাখ) মানুষ।

তবে ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে ৩৩ শতাংশ (সাড়ে ৩ ১/২কোটি ) মানুষের। তবে ওনারা গাউটের রোগী নন। কিন্তু গাউটের ওষুধ সেবন করেন। যা একটা সময় শারীরিক অন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে।

তিনি আরও জানান, এশিয়ায় প্রতি লাখে ৩০ থেকে ৫০ জন মানুষ এসএলই বা লুপাস রোগে ভুগছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালে প্রতি লাখে  ১৪-৬০ জন মানুষ লুপাস সমস্যায় ভুগতেন। তবে আশার খবর ধীরে ধীরে এ রোগের ভালো চিকিৎসা দেশের রিউমাটোলজিস্টরা সফলভাবে রোগীদের সুস্থভাবে থাকতে সাহায্য করছেন।

২০২২ সালের গণশুমারি অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষ প্রায় তিন কোটি। সেই হিসেবে দেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এ রোগে ভুগছেন। তবে উদ্বেগের বিষয় এ হাড়ক্ষয় রোগে মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি এবং এ রোগের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় আট গুন বেড়ে যায়। অবশ্য আশার কথা ওষুধ সেবন করে ৬-১২ মাস চিকিৎসা করলে এ রোগ থেকে হাড় ভাঙার ঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে (৫০ শতাংশ) কমে আসে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিএনআরএফআরের চেয়ারম্যান, এশিয়া প্যাসিফিক লীগ অব অ্যাসোসিয়েশন ফর রিউমাটোলজি (এপিএলএআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য করেন সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) মো. আখতার হোসেন, পথিকৃত ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি, সাবেক সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা শিরীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, অধ্যাপক ডা. সুজন আল হাসান, পিএনআরএফারের সেক্রেটারি জেনারেল ড. পিযুষ কান্তি বিশ্বাস প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৪
আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।