ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

মানব কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
মানব কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’ .

আধুনিক ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি। শুধু আধুনিক কেন, ইতিহাসের কোনো ক্রীড়া তারকাই এত বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। বছরের পর বছর ধরে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ভয় ধরিয়ে দেওয়া পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন রেকর্ড ছয় ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা। কিন্তু মাঠের অবিশ্বাস্য মেসি দাতব্য কাজেও কোনো অংশে কম নন।

আর্জেন্টিনার দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম নেওয়া মেসি শৈশবে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দৈহিক বৃদ্ধিজনিত সমস্যার কারণে প্রতিদিনই তাকে ইনজেকশন নিতে হতো।

নিজের শৈশবের সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কারণেই বিশ্বজুড়ে অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’ গড়ে তুলেছেন তিনি। শুধু তাই না, নিজের দাতব্য কাজকে আরও এগিয়ে নিতে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সারা বিশ্বে ভ্রমণ করে যাচ্ছেন তিনি।

লিও মেসি ফাউন্ডেশন

.
২০০৭ সালে দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন মেসি। ওই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের বোস্টন শহরে অবস্থিত একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর। সেখানে অসুস্থ শিশুদের বাঁচার আকুতি দেখে নিজের কান্না থামাতে পারেননি তিনি। সেদিনই তিনি নিজের আকাশছোঁয়া আয়ের একটা অংশ আরও ভালো কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।

দাতব্য কাজে জড়ানো নিয়ে মেসি বলেন, ‘একদিন একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়ার পর, আমি বুঝতে পারলাম একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আমার দায়িত্ব অনেক। আমি বুঝতে পারলাম, একজন অতি পরিচিত ফুটবলারকে দেখতে পারা অসুস্থ শিশুদের জন্য উপকারে আসতে পারে। শুধু মুখে হাসি নিয়ে তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটালেও তাদের অনেক আনন্দ দেওয়া যায় এবং এটা তাদের (রোগের সঙ্গে) লড়াই করার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। এবং তারা এটা বিশ্বাস করতে শুধু করে যে অসুস্থতাকে জয় করে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। ’

মেসি আরও বলেন, ‘আমি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অর্জন করেছি এবং আমি চাই তারাও (অসুস্থ শিশুরা) জানুক যে আমি এখানে আসার জন্য অনেক লড়াই করেছি এবং যেখানে আছি সেখানে টিকে থাকার জন্য আরও বেশি লড়াই করছি। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে যাদের এটা বেশি প্রয়োজন তাদের সহায়তা করতে চাই। ’ 

.‘যখন একজন শিশু এটা ভেবে খুশি হয় যে, এখনও আশা আছে এবং যখন আমি তাদের মুখে হাসি দেখি সেটা আমাকে আনন্দ দেয়। এজন্যই আমরা লিও মেসি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিশুদের খুশি করার এই লড়াই আমি চালিয়ে যাব। ফুটবল খেলা চালিয়ে যেতে আমার যে শক্তি ও একাগ্রতা দরকার এক্ষেত্রেও আমি ততটাই নিবেদিত থাকব,’ যোগ করেন মেসি।

বার্সেলোনায় ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন
‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’র মূল উদ্দেশ্য শিশুদের সহায়তা করা। যেকোনো দেশের শিশু, যারা অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছে তাদের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। তাছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং অসুস্থ শিশু এবং তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাজও করে সংস্থাটি।

মেসির প্রতিষ্ঠিত সংস্থা আর্জেন্টিনা ও স্পেনের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সঙ্গে কাজ করে। তাদের চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে সরাসরি চিকিৎসা প্রদান ও বিরল রোগ নিয়ে গবেষণার পেছনেও অর্থ ব্যয় করে সংস্থাটি। সম্প্রতি শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বার্সেলোনায় ইউরোপের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল নির্মাণ শুরু করেছে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’। এর জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এখানে চিকিৎসা প্রদান করা হবে।

.কাতালুনিয়ার ‘স্পেশাল অলিম্পিক’
২০১৪ সাল থেকে কাতালুনিয়ার ‘স্পেশাল অলিম্পিক’ আয়োজনে আর্থিক সহায়তা করে যাচ্ছে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’। প্রতিবন্ধী শিশুদের খেলাধুলা, সামাজিক মেলবন্ধন তথা তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখার গুরুত্ব থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেন মেসি। প্রতি আসরেই প্রতিযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেসি তাদের উৎসাহ দিয়ে আসছেন। তার এমন উদ্যোগের কারণে টুইটারে ‘#messiisalwayswithus’ এখন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।

হোসেপ কারেরাস ফাউন্ডেশন
লিউকোমিয়ার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে চলতি বছর হোসেপ কারেরাস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্ত হয়েছে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’। ‘নো চাইল্ড উইথ লিউকোমিয়া’ স্লোগান নিয়ে কাজ করা এই ফাউন্ডেশনে আগামী দু’বছর অর্থায়ন করবেন মেসি।  

টিউমার নিয়ে গবেষণায় অর্থায়ন

.
প্রায় চার বছর ধরে বিশেষ ধরনের এক টিউমার নিয়ে গবেষণায় অর্থায়ন করছে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’। এই টিউমারে মূলত কিশোর ও প্রাপ্ত বয়স্করা আক্রান্ত হয়। মেসির দান করা ২ লাখ পাউন্ড এই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

ইউনিসেফ
২০১০ সাল থেকে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন মেসি। যদিও এই সংস্থার সঙ্গে ২০০৪ সাল থেকে দাতব্য কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। তখন থেকেই সারা বিশ্বের অভাবী মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। ২০১০ সালে তিনি ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হাইতিতে দাতব্য কাজে যান। এর ৩ বছর পর সাবেক বার্সা সতীর্থ হোসে ম্যানুয়েল পিন্তোর সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে ফুটবল ম্যাচ খেলতে ব্যাংককে যান তিনি।

২০১৫ সালে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালের বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণে ইউনিসেফকে আর্থিক সহায়তা দেন মেসি। একই বছর স্পেনের দরিদ্র শিশুদের জন্য ৩ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড ব্যয় করেন তিনি। ২০১৬ সালে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সিরিয়া যুদ্ধে আক্রান্ত শিশুদের জন্য স্কুল নির্মাণ করা হয়। এছাড়া কেনিয়ায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২ লাখ পাউন্ড ব্যয়ে পানির পাম্প এবং অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহও করে এই সংস্থা।

.আফগান বালকের প্রতি মেসির ভালোবাসা
মুর্তজা আহমানি নামের ছয় বছর বয়সী শিশুর সঙ্গে মেসির সাক্ষাৎ, এটাই সম্ভবত মেসির সবচেয়ে জনপ্রিয় মুহূর্ত। অতি দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম নেওয়া এই শিশুর গায়ে প্লাস্টিক ব্যাগের তৈরি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সির সেই ছবি সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। জার্সির গায়ে হিজিবিজি করে মেসির নাম আর জার্সি নম্বর লেখা।  

.ছবিটি নজরে আসার পর মেসি নিজে ওই শিশুর জন্য নিজের স্বাক্ষরিত বার্সেলোনা জার্সি আর একটি ফুটবল পাঠিয়ে দেন। পরে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকরা দোহায় অনুষ্ঠিত আল আহলি ক্লাবের সঙ্গে বার্সার প্রীতি ম্যাচ দেখতে আমন্ত্রণ জানান মুর্তজাকে। মেসির সঙ্গে মুর্তজার সেই সাক্ষাতের ছবি কঠিন হৃদয়েও দোলা দিয়ে গেছে সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।