ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শীত এলেই তাদের সংসারে আসে স্বচ্ছলতা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২২
শীত এলেই তাদের সংসারে আসে স্বচ্ছলতা পিঠা বানাচ্ছেন শিউলী বেগম। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: শীত এলেই রাস্তার মোড়ে, বাজারে, সড়কের পাশে বা ব্যস্ত কোনো স্থানে দেখা মেলে শীতের পিঠা বিক্রির দোকান। বাড়তি রোজগারের আশায় অনেকেই শুধু শীত মৌসুমে শুরু করে পিঠা বিক্রির ব্যবসা।

 

এছাড়া সারা বছর যারা পিঠার দোকান করেন এই শীত মৌসুমে তাদের বিক্রিও বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তারা জানান শীত এলেই তাদের সংসারে আসে স্বচ্ছলতা। এসময় চিতই পিঠার পাশাপাশি খেজুর গুড় আর নারিকেলের ভাপা পিঠা বিক্রি বেড়ে যায়। বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন পিঠা বিক্রি করে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, শীতের সময়ে পিঠার দোকানে ক্রেতার ভিড়। ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠার সঙ্গে আড্ডা জমে ওঠে ক্রেতাদের। স্থায়ী বা মৌসুমী এ পিঠার দোকানগুলোর অধিকাংশই পরিচালিত হয় নারীদের দ্বারা। সংসারে পুরুষের পাশাপাশি উপার্জনে বাড়তি সহযোগিতার হাত বাড়ানো জন্য দিন দিন বেড়েছে নারীদের এই পিঠার দোকান। এতে করে বাড়তি উপার্জনও হচ্ছে তাদের। সংসারে আসছে স্বচ্ছলতাও।

আলাপকালে অধিকাংশ পিঠা বিক্রেতা নারী জানান, শীতের সময় মানুষ হাঁটাহাঁটি কমিয়ে দিয়ে এক স্থানে বসে সময় কাটায়। এ সময়ে চিতই পিঠার চাহিদা বাড়ে। নানা রকম ভর্তা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পিঠা খেতে ভিড় লেগে থাকে। একইসঙ্গে নারকেল আর খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠাও প্রচুর বিক্রি হয়। শীতের দিনে গরমের যন্ত্রণা থাকে না। লোকজন শান্তি করে দীর্ঘক্ষণ বসে খেতে পারে। এ কারণে শীত মৌসুমে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে পিঠা বিক্রি দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে যায়। আর পিঠা তৈরির ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীদের অভিজ্ঞতাও বেশি। কারণ বাড়িতে নারীরাই পিঠা তৈরি করেন। এ কারণেই পিঠার দোকানগুলো নারীদের দ্বারাই পরিচালিত হয় বেশিরভাগ। তবে চাল ভেঙে গুড়া তৈরি এবং অন্যান্য যোগান বাড়ির পুরুষ সদস্যরাই দিয়ে থাকেন। '

জেলার শিবচর উপজেলার সূর্যনগর বাজার এলাকার পিঠা বিক্রেতা শিউলী বেগম বলেন, আমি সারা বছরই পিঠা বিক্রি করি। সংসারের জন্যই করতে হয়। শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পিঠা বিক্রি হয়। দৈনিক দুই/আড়াই হাজার টাকাও বিক্রি হয়। সন্ধ্যার পরে বেশি বেচাকেনা হয়। এই সিজনে যেমন বাড়তি উপার্জন হয় অন্য সময়ে ততটা হয় না। পিঠা বিক্রি করে বেশ ভালোই আছি।

ক্রেতারা জানান, শীতের সময় চিতই, ভাপা পিঠা খেতে ভালোই লাগে। বিশেষ করে নানান রকম ভর্তা দিয়ে গরম চিতই পিঠার স্বাদই আলাদা। তাছাড়া ভাপা পিঠাও বেশ মজার। এ সময় দোকানে সিরিয়াল দেওয়া লাগে পিঠার জন্য। ব্যস্ত সময় পার করেন বিক্রেতারা। শীত এলে পিঠা বিক্রির দোকানের সংখ্যাও বেড়ে যায়, তারপরও ভিড় লেগেই থাকে।

বিক্রেতারা জানান, চিতই পিঠা প্রতি পিস পাঁচ টাকা এবং ভাপা পিঠা ১০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। নারিকেল এবং খেজুর গুড়ের কারণে ভাপা পিঠার দাম একটু বেশি। পাঁচ টাকার চিতই পিঠার সঙ্গে ধনেপাতা, চিংড়ি মাছের শুঁটকি ভর্তা, সরিষা ভর্তা, রসুন-কাঁচা মরিচ ভর্তা দেওয়া হয়। ভর্তার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয় না।  

প্রকৃতিতে শীত আসে নতুনত্ব নিয়ে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে প্রকৃতি। শীতের পোশাক গায়ে জড়িয়ে পৌষের বিকেলে ঘরের বাইরে বের হয় সাধারণ মানুষ। বিকেলের নাস্তায় চিতই আর ভাপা পিঠা যোগ করে নতুন মাত্রা। আর বিক্রি বেশি থাকায় এই মৌসুমে হাসি ফোটে ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের মুখেও।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।