ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

রাজকীয় ফল ডুরিয়ান

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১
রাজকীয় ফল ডুরিয়ান

আগেকার দিন হলে বলা হতো রাজার খায়েস। কিন্তু এখন রাজা দুর্লভ হলেও ধনকুবেরের তো আর অভাব নেই।


আর সেরকম একজনের  যদি কোনো খায়েস জাগে তাহলে? ম্যাকাওয়ের ধনাঢ্য জুয়ারি স্টেনলি হোর খায়েস হয়েছিল ডুরিয়ান ফল খাওয়ার। আর তাই সঙ্গে সঙ্গে ম্যাকাও থেকে সিঙ্গাপুরে উড়ে গেল ব্যক্তিগত জেট বিমান। তবে এ বছর ফলটি দুষ্প্রাপ্য বলে মাত্র ৮৮টি ফল নিয়ে বিমানটি ফিরে যায় ম্যাকাও।

ডুরিয়ান ফলটি সিঙ্গাপুরে আসে মালয়েশিয়া থেকে। কিন্তু ডুরিয়ান কী এমন ফল যার জন্য একজনকে ব্যক্তিগত বিমান পাঠাতে হয়েছে? দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ডুরিয়ানকে বলা হয় ফলের রাজা। বাণিজ্যিক বিমানে এ ফল বহন করা নিষিদ্ধ। তাতে কী, স্টেনলি হোর ব্যক্তিগত বিমান আছে না!

তো জেট বিমান নিয়ে হোর প্রতিনিধিরা ছুটলেন সিঙ্গাপুরের তেলক কুড়াও রোডে। ৮১৮ ডুরিয়ান স্টল নামের দোকান থেকে কিনে নিলেন ৮৮টি ডুরিয়ান। তাদের অবশ্য ৯৮টি ডুরিয়ান কেনার কথা ছিল। এ বছর আবহাওয়া খারাপ থাকায় ডুরিয়ানের ফলন খুব একটা ভালো হয়নি। কী আর করা ! ৮৮টি ডুরিয়ান কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে স্টেনলি হোর লোকদের।

সবগুলো কিনতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৬৫ ডলার বা প্রায় দেড় লাখ টাকা। আর স্টেনলি হো সব ডুরিয়ান একা সাবাড় করেননি। তার ধনেকুবের বন্ধু লি কা-সিঙ্গকে ১০টি উপহার দিয়েছেন।

যে ডুরিয়ানকে নিয়ে এতো মাতামাতি এর আকার ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি। আর ওজন হয় এক থেকে তিন কিলোগ্রাম পর্যন্ত। গায়ের রঙ সবুজ থেকে বাদামি। ডুরিয়ানের বাইরের আবরণ কিছুটা আমাদের কাঁঠালের মতো। এর আছে মনমাতানো গন্ধ। বর্তমানে ৩০ প্রজাতির ডুরিয়ান পাওয়া যায়। তবে খাওয়া যায় ৯ প্রজাতির ডুরিয়ান। দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় মিষ্টিজাতীয় খাবারের সঙ্গে ডুরিয়ান ফল পরিবেশন করা হয়। এর বিচিও রান্না করে খাওয়া যায়।

ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এবং ফিলিপাইনে এ ফল বেশি জন্মে। এছাড়া শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, চিন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রালিয়া ও মালয়েশিয়ায় ডুরিয়ান পাওয়া যায়। তবে যেসব দেশ আন্তর্জাতিক বাজারে ডুরিয়ান বাজারজাত করে তার মধ্যে অন্যতম থাইল্যান্ড। বিংশ শতাব্দী থেকে বাণিজ্যিকভাবে ডুরিয়ানের উৎপাদন শুরু হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী নিকোলো ডা কোন্টি ১৫০০ শতাব্দীতে চীন ও পশ্চিম এশিয়া সফর করেন। ওই সময় তিনি যেসব ফলের নাম লিখে গেছেন তার মধ্যে ডুরিয়ান ছিল। ১৫৬৩ সালে প্রকাশিত পর্তুগিজ ডাক্তার গার্সিয়া ড্যা ওরটির লেখা ‘সিম্পল ই ডগাস ডি ইন্ডিয়া’ বইয়ে ডুরিয়ান ফলের কথা লেখা আছে। আর ফলের রাজা ডুরিয়ানের সঙ্গে পশ্চিমাদের পরিচয়ও বেশ পুরনো, আনুমানিক ছয়শ বছরের। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ডুরিয়ান কাসটার্ড বানোর জন্য খুবই উপযোগী।

ডুরিয়ানে প্রচুর চিনিজাতীয় উপাদান আছে। এছাড়া ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, কার্বোহাইড্রোজ, চর্বি এবং প্রচুর প্রোটিনও রয়েছে। শরীর মোটা করতে ডুরিয়ান খুব ভালো কাজ করে। ডুরিয়ান গাছের পাতা ও মূল জ্বর নিরাময়ে ওষুধের কাজ করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।