ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ক্ষেতের আইলে বসে কৃষকের খাবার-দাবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
ক্ষেতের আইলে বসে কৃষকের খাবার-দাবার ক্ষেতে বসে খাবার খাচ্ছেন কৃষক। ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাঠের ক্ষেতে বা আইলে কৃষকের খাবার-দাবার। কাজের ফাঁকে সকালে নাস্তা আর দুপুরের খাবার সারেন তারা। এই প্রথা চলে আসছে আদিকাল থেকে।

ভোর বা সকালে কৃষক ও শ্রমিক চলে যান মাঠের ক্ষেতের কাজে। কাঁধে থাকে লাঙ্গল-জোয়াল, মই।

কারো হাতে কাস্তে বা হাসুয়া। কেউবা কোদাল হাতে মাঠে চলে যায়। রোদ, ঝড়-বৃষ্টিতে একমনে কাজ করেন তারা। সকালে বাড়ি ছাড়েন বলে নাস্তা ও দুপুরের খাবারটি মাঠে সারেন তারা।

কৃষাণ বধূরা গামছায় বেঁধে নাস্তা নেন। কোনো সময় দুপুরে খাবার পোটলায় বেঁধে প্রিয় মানুষটির খাবার নিয়ে যান। সঙ্গে থাকে বাসি তরকারি, ভর্তা, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ। তরকারি বাসি কিংবা টাটকা এবং পদ যাই থাক পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ থাকতেই হবে পাতে। কর্মজীবী মানুষটির অপেক্ষায় থাকেন খাবারের। অবশেষে আসে সেই মহেদ্রক্ষণ। কাজের ফাঁকে মাঠের ক্ষেতে বা আইলে কিংবা উঁচু জায়গায় বসে খাবার খান। খাওয়া-দাওয়া শেষে কৃষাণী বধূ বাড়ির পানে ফিরেন।

ক্ষেতে বসে খাবার খাচ্ছেন কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজগোটা নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলায় এই প্রথা চলে আসছে আদিকাল থেকে। জেলার সৈয়দপুরে একটি দোলার নামকরণ রয়েছে ‘ভাতার মারির পাথার অর্থাৎ স্বামী মারার দোলা’। প্রচলিত আছে, হাল নিয়ে স্বামী ওই দোলায় যান। একসময় পানি তৃষ্ণা লাগলে স্ত্রীকে পানি আনার জন্য বলেন। কিন্ত দোলাটি এতই বড় যে, পানি নিয়ে যেতে যেতে স্বামী প্রাণ হারান। ফলে ওই দোলাটির নামকরণ করা হয়েছে ভাতার মারির পাথার।

এই দোলা রংপুরের বদরগঞ্জের রাঁধানগর, তারাগঞ্জের আলমপুর ও সৈয়দপুরের বাঙালিপুর ইউনিয়নের অংশ নিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে।

কথা হয় ওই দোলায় কাজ করা শ্রমিক জয়নালের (৪৫) সঙ্গে। জয়নাল বলেন, আমি অন্যের জমিতে কাজ করছি। আসার সময় সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার আনার জন্য স্ত্রী হাজেরাকে বলেছি। আমার একটি সাত বছরের একটি সন্তান রয়েছে। খাবার এলে পরিবারের সবাই মিলে মাঠের ক্ষেতে বা আইলে বসে খাবার খেয়ে নেবো। এর মধ্যে অন্যরকম মজাই আছে যা কাউকে বোঝানো যাবে না।

সৈয়দপুরের বাঙালিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রণোবেশ বাগচী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির কারণে লাঙ্গল-জোয়াল কিছুটা কমেছে। তবে পাথারে কৃষক ও শ্রমিকদের সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার রেওয়াজ চালু রয়েছে। সেসঙ্গে এই জনপদে প্যালকা ও সিঁদুল খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।

ক্ষেতে বসে খাবার খাচ্ছেন কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজসৈয়দপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, নীলফামারী জেলার গ্রামীণ ঐতিহ্য হচ্ছে মাঠে-ঘাটে কৃষক ও শ্রমিকের খাবার-দাবার। এই প্রথা এখনও চালু রয়েছে। তবে অনেক প্রচলিত শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে। এসব ভাষা সংরক্ষণের জন্য ও এলাকার নামকরণের ইতিহাস নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছি। নতুন প্রজন্ম এই বইটি পড়ে অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।