ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

করোনাকালীন জাভার দিনগুলি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২০
করোনাকালীন জাভার দিনগুলি

সময় খুবই দ্রুত চলে। বাল্যকালে বাংলা বইয়ে পড়েছিলাম নদীর স্রোত ও সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। তাই দেখতে দেখতে ইন্দোনেশিয়ান সরকারের শিক্ষাবৃত্তির সময়ও শেষ হওয়ার পথে। পৃথিবী যেন তার নির্মম প্রতিশোধে ব্যস্ত। সারা পৃথিবীতে করোনার কোলাহল। এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার এখনও হয়নি। আমার ইউরোপীয় বন্ধুরা মার্চের শেষ নাগাদ নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে। সেখানে তারা আছে তাদের পারিবারের ভালোবাসায়। 

বিদেশি ছাত্র হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার মানুষের কাছে ভালোবাসা আর আদরের কমতি নেই। আর আমার বাস বিখ্যাত জাভা সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে।

যারা সামান্য গাড়ির হর্ন পর্যন্ত ব্যবহার করে না শব্দদূষণ হবে বলে। আর কারো সঙ্গে দেখা হলেই প্রথম প্রশ্ন ‘আপা কাবার’ যার বাংলা অর্থ-কেমন আছেন? সঙ্গে মুখের অতি মিষ্টি হাসিতো আছেই। তাই প্রতিউত্তর না দিলে অতি অন্যায় হয়।

সুপারশপে ঢোকার আগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাএই করোনা ভাইরাসও পারেনি তাদের মুখের হাসি কেড়ে নিতে। আর হাসি যাবেই বা কেন, এখন পর্যন্ত বাড়েনি কোনো পণ্যের দাম। পাশাপশি আছে ফ্রি উপহার। সবাই সঠিকভাবে সরকারি নিয়ম (সামাজিক দূরত্ব) মেনে চলছে। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে নিয়মিত চলে বাড়ির আঙিনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। কোথাও কাউকে দেখা যায় না নিময় ভাঙার মহড়া।

সামাজিক দূরত্ব ও পরিষ্কার অভিযান- এই দুইই এদেশের মানুষকে এক সুতোয় গেঁথেছে। সুপারশপগুলোতে প্রবেশ করতে গেলে মাস্ক পরিধান ও হাত ধোয়া আবশ্যক, যার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট জায়গা। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা, যানবাহন চলাচল অতি সীমিত। প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক কেউই বাড়ির বাইরে বের হয় না বললেই চলে। অনেক আগেই মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে জমায়েত নিষিদ্ধ। তাই বলা যায় সার্বিক দিক দিয়ে পরিস্থিতি অন্য দেশের তুলনায় আপাতত কিছুটা ভালো।  

যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণজাভার মানুষের ভৌতিক আস্থা প্রবল। তাই স্বেচ্ছাসেবায় রাতের আঁধারে ভূত সেজে মানুষকে ভয় দেওয়ারও অভিযান চলছে নিয়মিত। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে ও গ্রাম্য প্রধানের (এরতে) মাধ্যমে চলছে সমাজের অসহায় শ্রেণিকে সাহায্য করা।

আর আমার আহমেদ দালান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোবাসা কোনোদিনই ভুলবো না। আমার মতো যেসব ছাত্র-ছাত্রী তাদের বাড়িতে যেতে পারেনি তাদের সবার ঘরে ঘরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে খাবার পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছে। আর ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানরত সব বিদেশি শিক্ষার্থীই এই সুবিধার আওতাভুক্ত। বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে নিয়মিত মানসিক ডাক্তারের সুবিধাতো আছেই। শুধু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ইন্দোনেশিয়ার সব বিশ্ববিদ্যায়লই তাদের সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে এই সেবা দিয়ে আসছে।  

শেষ বিকেলের জাভামার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রতিদিন অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষদের সঙ্গে ক্লাসের পাশাপাশি নানা প্রকারের ব্যক্তিগত গল্প এখন আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। সকাল দেখার সৌভাগ্য বেশি একটা হয় না অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে। তাই জানালা দিয়ে প্রতিদিনের বিকেলের আকাশ আর গরম কফিই আমার একলা জীবনের সঙ্গী।

জানি না মায়ের কাছে কবে ফিরে যেতে পারবো। তবুও মনে একটাই ভরসা এই জাভা সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যাদের হাসিমুখ কখনই ভোলার নয়। এই বদ্ধ জীবনে যদি করোনা আক্রান্ত হই, অন্তত বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ভয় নেই। দিন শেষে মানুষের মানবিকতাই আসল। এই বিপদের দিনে আমাদের সবার এই শুভ বোধের উদয় হোক। ভালো থাকুক সবাই, ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।