ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বুনো ঘ্রাণ আর সাবলীল সৌন্দর্যে আলো ছড়ায় ল্যান্টানা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
বুনো ঘ্রাণ আর সাবলীল সৌন্দর্যে আলো ছড়ায় ল্যান্টানা ল্যান্টানা ফুল। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: ‘এক একটা ফুল ফোটে,/ আর ছন্দময় হয়ে ওঠে ভোরের আকাশ!/ হেসে ওঠে, শিশির ভেজা ঘাস/ হেসে ওঠে কাশের বন।/ এক একটা ফুল ফোটে,/ আর কবিতারা সেই ফুলের কাছ থেকে জেনে নেয়,/ সুন্দর হয়ে ওঠার গোপন রহস্য!’

সত্যিই তাই, হেমন্তের শেষ আর শীতের এই আগমনী সময়ে সকালের শিশির অথবা মিঠে রোদে কবি সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার লাইনগুলো যেন মিলে যায় ল্যান্টানা ফুলের সঙ্গে। বিদেশী ফুল হলেও অদ্ভুত একটা বুনো ঘ্রাণ আর সাবলীল সৌন্দর্যে আলো ছড়িয়ে এই ফুল আকৃষ্ট করে সকলকে।

তারপর নিজের সৌন্দর্যের গোপন রহস্য বিলিয়ে দেয় হৃদয় উজাড় করে।

সেই সৌন্দর্য আর সুরভীতে ছন্দময় হয়ে ওঠে পরিবেশ। সবুজ তারুণ্যে ভরপুর গাছগুলো পায় নতুন রূপ। সেজে ওঠে বাগান, বসে প্রজাপতির মেলা। অনেকে নিজের শখের ফুলবাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও বাগানে প্রজাপতি আকর্ষণ করতে বেশ সযত্নেই একে ঠাঁই দেন বাগানে। শীতের শুরুতে ফুটন্ত ফুলের ছত্রমঞ্জুরী দেখে মুগ্ধ হন সকলে। তেমনটাই মত ফুলপ্রেমীদের।

সময়ের সঙ্গে রঙ বদলায় অপরূপা ল্যান্টানা।  ছবি: ডি এইচ বাদল

এ প্রসঙ্গে ফুলপ্রেমী এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা আফরোজ এবং সোমা দাশ বলেন, গায়ে বুনো গন্ধ থাকলেও এই ফুলের রূপের জুড়ি নেই। সময়ের সাথে সাথে রঙ রূপ বদলে ফেলা এই ফুলটি ঝোপ আলো করে লণ্ঠনের মতো আলো ছড়ায় বলেই হয়ত এই নাম। সবচেয়ে চমৎকার লাগে এই ফুলের রঙ। নতুন ফুলের এক রঙ, আবার একটু পুরানো ফুলের আরেক রঙ। একই থোকায় কয়েক রঙ। আছে প্রজাপতি আর ভ্রমর আকর্ষণের অনন্য এক ক্ষমতাও।

ল্যান্টানা ফুল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলামও বলেন তেমন কথাই। তিনি জানান, ল্যান্টানা আমেরিকা ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় ফুল। তবে অসংখ্য অঞ্চলে, বিশেষত অস্ট্রেলিয়ান-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি প্রবর্তিত প্রজাতি হিসেবে রয়েছে। এর গুল্ম লম্বা, সুগন্ধযুক্ত ফুলের গুচ্ছগুলোতে রয়েছে লাল, কমলা, হলুদ, নীল এবং সাদা রঙের মিশ্রণ। এই ফুলগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে রঙ পরিবর্তন করে। ফলে দু'টি বা তিনটি রঙের ফুল দেখা যায় এক গুচ্ছেই।

আমাদের দেশে সৌখিন ফুলপ্রেমিদের বাগানে ও ঝোপ জঙ্গলে দেখা মেলে এই ল্যান্টানা ফুলের। মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্কসহ বিভিন্ন সড়কের পাশেও ল্যান্টানা ফুলের গাছ দেখা যায়। সাধারণত হলুদ, লাল, কমলা, বেগুনি, মেজেন্টা ইত্যাদি রঙে দিনভর রাঙা হয়ে থাকে ফুলটি।

প্রজাপতি ও ভ্রমরদের দারুণ আকর্ষণ করে ল্যান্টানা।  ছবি: ডি এইচ বাদল

সৌন্দর্য থাকলেও এই গাছের পাতা গবাদি পশুর জন্য বিষাক্ত খাবার। তবে উদ্ভিদটি প্রজাপতি-বান্ধব। সুন্দর ফুলের সঙ্গে কিছু ভেষজ গুণাবলী থাকা এই ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম Lantana camara L। আমাদের দেশের মানুষ একে স্থানীয়ভাবে মুনিয়া, ছত্রা বা পুটুস ফুল নামেও চিনে থাকে।

ল্যান্টানার ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে গাঢ় বেগুনি রঙের হয়। এটি প্রজাপতি বান্ধব গাছ। বাগানের সৌখিন ফুল হিসেবে ল্যান্টানা মানায় ভালো। গাছে প্রায় সারাবছর ফুট ফুটলেও শীতের শুরুতে এবং পুরো শীত জুড়ে বেশি দেখা যায় ফুলের বাহার। আর পাকা বা শুকনো বীজ সংগ্রহ করে একে বাগানের সদস্য করে নেওয়া যায় খুব সহজেই। বাগানের সুন্দর সেই ফুল থেকেই ছন্দময় হয়ে ওঠে ভোরের আকাশ, জেনে নেয়া যায় তার সুন্দর হয়ে ওঠার গোপন রহস্য!

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এইচএমএস/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।