ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মেঠোপথ পেরিয়ে নবান্ন এলো শহরে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
মেঠোপথ পেরিয়ে নবান্ন এলো শহরে নবান্নোৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: হেমন্তে নতুন ধানে ভরতে শুরু করেছে কৃষকের গোলা। বাড়িময় কৃষাণীর ব্যস্ততা আর সোনালি ধানের ঘ্রাণ। সে ঘ্রাণে ভর করে গ্রামের নবান্ন উৎসব এবার মেঠোপথ হয়ে সড়ক-মহাসড়ক পেরিয়ে স্পর্শ করলো ইট-পাথরের রাজধানীকেও।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) কংক্রিটময় নগর প্রকৃতির ভিড়ে ভাটি-বাংলার ফসল তোলার ‘নবান্ন উৎসব’ উদযাপন করেছে লোকজ সংস্কৃতিপ্রেমী রাজধানীবাসী। শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় শিকড়কে ভুলতে বসা তরুণদের দেশজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ও লোকজ উপাদানগুলোকে নাগরিক জীবনে আরও বেশি আপন করে নেওয়ার প্রত্যয় এসেছে এবারের জাতীয় নবান্নোৎসবে।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজন করে এই উৎসবের। সকাল ৭টায় বাঁশি, বাংলা ঢোল, কিবোর্ড, গিটার ও অন্য যন্ত্রসঙ্গীতের সমন্বয়ে লোকজ সুরের আবহে শুরু হয় এবারের উৎসব। লায়লা হাসানের পরিচালনায় ‘সবুজ শোভা ঢেউ খেলে যা, ঢেউ খেলে যা আমন ধানের খেতে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নটরাজের শিল্পীরা।

প্রধান অতিথি হিসেবে আয়োজনের উদ্বোধন ও নবান্ন কথন পর্বে অংশ নেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার। বক্তব্য রাখেন নবান্নোৎসব উৎসব পর্ষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম হাসান সুজা। সভাপতিত্ব করেন নবান্নোৎসব পর্ষদের চেয়ারপারসন লায়লা হাসান।

গুড়-মুড়ি-খই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের।  ছবি: শাকিল আহমেদ

‘নবান্ন কথন’ পর্বের আলোচনায় অগ্রহায়ণের নবান্নসহ আবহমান বাংলার বিভিন্ন উৎসব যেন নগরায়নের প্রভাবে হারিয়ে না যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান সংস্কৃতিকর্মীরা।

তারা বলেন, বাংলা তারিখকে কেন্দ্র করে এ উৎসব রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদযাপন করা গেলে কৃষি-কৃষকের পাশাপাশি বাংলার অর্থনীতি আরও বেশি উপকৃত হবে। হাজার বছরের চিরায়ত এই উৎসবটি নগরায়নের প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। শহুরে তরুণরা আমাদের এই সার্বজনীন উৎসবের সঙ্গে পরিচিত নয়। গ্রামীণ পিঠাপুলি তো অনেকেই চেনে না। তরুণদের শিকড়ে ফেরাতে হলে এই গ্রামীণ উপাদানগুলো আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে। শিকড়ের উৎসবে আমরা লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের পাশাপাশি এই অস্থির সময়ে বাঙালিকে সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধতে চাই। নবান্ন উৎসব একটি উদার, সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এটি গণমানুষের উৎসব, খেটে খাওয়া মানুষের উৎসব।

উদ্বোধন ও নবান্ন কথন পর্ব শেষে শুরু হয় উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্ব। এ পর্বে লোকগানের সঙ্গে নৃত্যের পাশাপাশি অগ্রহায়ণে বাংলার প্রধান ফসল ধান কাটা নিয়ে ছিল বিভিন্ন গান। পটগান, ধামাইয়া গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকগানের সঙ্গে শিল্পীরা গেয়ে শোনান দেশের গান, লালনগীতি, নজরুল সঙ্গীত ও রবীন্দ্র সঙ্গীত।

এ পর্বের শুরুতে ছিল দলীয় নৃত্য পরিবেশনা। ‘আমার বাংলা মায়ের মাটির সুরে জুড়ায় মনপ্রাণ’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। ‘আহা রে খুশি খুশি মন, নবান্নে রইলো বন্ধু তোমার নিমন্ত্রণ’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে বকুল নৃত্যালয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল দলীয় নৃত্য পরিবেশনা।  ছবি: শাকিল আহমেদ

সম্মেলক গান পর্বে ‘নবান্নতে রইলো বন্ধু তোমার নিমন্ত্রণ’ গান পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, ‘শত স্বপ্নের দেশ আছে পৃথিবী জোড়া মানচিত্র’ পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটতলা’ গানটি।

একক গান পর্বে ‘হিংসা আর নিন্দা ছাড়ো, মনটা করো পরিষ্কার’ পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘সেদিন আমায় বলেছিলে’ পরিবেশন করেন সালমা আকবর, নজরুল সঙ্গীত ‘হৈমন্তিকা এসো এসো’ পরিবেশন করেন মাহজাবীন রহমান শাওলী। এছাড়াও জয়ন্ত আচার্য, তানভীর সজীব, শারমিন সাথী ময়না একক গান পরিবেশন করেন। আবৃত্তিপর্বে আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম কাকলি ও বেলায়োত হোসেন।

উৎসবে গুড়-মুড়ি ও খই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিসহ উৎসবে আগত বাংলার সংস্কৃতি ভালোবাসা মানুষগুলোকে। সকালের পর্ব শেষে বিকেলেও রয়েছে নবান্নোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
এইচএমএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।