ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বৈশাখী ঘ্রাণে মাতোয়ারা সাটুরিয়ার বণিক পাড়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৯
বৈশাখী ঘ্রাণে মাতোয়ারা সাটুরিয়ার বণিক পাড়া তৈরি হচ্ছে হাতি, ঘোড়া, পাখি ও মাছের সাজে বাহারি রকমের খাবার। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: সপ্তাহখানেক বাদেই পহেলা বৈশাখ। এ উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলে আয়োজন করা হয় বাহারি মেলার। কোথাও কোথাও মেলা বসে এক বা দু’দিন, কোথাও কোথাও সপ্তাহজুড়ে বা তারও বেশি সময়ের জন্য। আর গ্রামীণ এসব মেলায় কদমা, বাতাসা, নকুল দানা, মুড়ালি, নিমকি ও চানাচুরসহ  হাতি, ঘোড়া, পাখি ও মাছের সাজে বাহারি রকমের খাবারের চাহিদা থাকে শীর্ষে।

এসব মেলা কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বণিক পাড়া এখন সরগরম। দম ফেলার ফুসরত নেই এসব সাজ কারিগরদের।

কাক ডাকা ভোর থেকে গোধূলি লগ্ন পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন বণিক পাড়ার এসব সাজ তৈরির সঙ্গে জড়িত মহাজন ও শ্রমিক। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করছেন নারীরাও।  

বৈশাখের ঘ্রাণে মাতোয়ারা এখন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের ভাটারা গ্রামের বণিক পাড়া।

দুই থেকে তিন যুগ আগেও এ গ্রামের প্রায় অর্ধশত বণিক পরিবারের আয়ের মূল উৎস ছিল এসব সাজ তৈরি থেকে আয় করা অর্থ। তবে এখন আর আগের মতো এত মানুষের আনাগোনা নেই এ পেশায়। হাতে গোনা মাত্র ১০ থেকে ১২টি পরিবার এখনো টিকিয়ে রেখেছে তাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশা।

আনন্দ বণিকের ছেলে বিমল বণিক বাংলানিউজকে জানান,  বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য সারাবছরই তারা কদমা, বাতাসা, নকুল দানা, মুড়ালি, নিমকি ও চানাচুরসহ হাতি, ঘোড়া, পাখি ও মাছের সাজে বাহারি রকমের খাবার তৈরি করেন। চিনি, পানি, ময়দা, গুড় ও বেসন দিয়ে তৈরি করা হয় এসব খাবার। তবে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তাদের এ ব্যবসা পুরোদমে চলে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখের আগে এসব খাবারের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।  

বিমল বণিকের স্ত্রী চম্পা বণিক জানান, গৃহাস্থলি কাজ শেষে অবসরের সময়টুকু সাজ তৈরির কাজে স্বামীকে সহায়তা করেন তিনি। এতে বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে গ্রামীণ মেলা ও গ্রাম্য খেলা উপলক্ষে খাবারের অর্ডার বেশি পেলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন নিয়মিতভাবে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাজ তৈরির বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন।

বৈশাখী মেলায় বিক্রির জন্য তৈরি করা হচ্ছে বাতাসা।  ছবি: বাংলানিউজশ্যামল বণিক জানান, এসব খাবারের প্রধান ক্রেতা টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি দরে কিনে বিভিন্ন এলাকার মেলা ও খেলায় খুচরাভাবে এসব খাবার বিক্রি করেন তারা। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকার কারণে ভাটারা গ্রামেও এসব খাবারের চাহিদা রয়েছে বেশ।

গোবিন্দ বণিক নামে অপর আরেক মহাজন জানান, গ্রামীণ মেলা ও গ্রাম্য খেলায় এসব খাবারের বেশ চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এসব খাবার তৈরি করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এত টাকা না থাকার কারণে বিভিন্ন দোকান থেকে চিনি ও গুড়সহ অন্যান্য উপাদান বাকিতে কিনতে হয়। খাবার তৈরির পর, সেগুলো বিক্রি করে পরে সে টাকা পরিশোধ করতে হয়। এতে মুনাফার বড় একটা অংশই খরচ হয়ে যায়।  

এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের কাছে সহজ শর্তে লোন কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরীন পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, সহজ শর্তে লোন নেওয়ার জন্য ভাটারা গ্রাম থেকে এখনো কোনো ব্যবসায়ী বা সাজ তৈরির মহাজন আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি।  

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয়েই উপজেলা থেকে সহজ শর্তে লোন দেওয়া হয়। যদি তাদের সেখান থেকে লোন দেওয়ার কোনো প্রক্রিয়া থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই তারা সে সুবিধা পাবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
কেএসএইচ/এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।