ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শিল্পকলার বিজয় উৎসবে পিঠার ঘ্রাণ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
শিল্পকলার বিজয় উৎসবে পিঠার ঘ্রাণ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পিঠা বিক্রিতে ব্যস্ত বিক্রেতা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: লাল-নীল আলোয় রাঙা রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণ। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বিজয়ের মাসে চলছে বিজয়ের মহা উৎসব। নৃত্য, সঙ্গীত, পালাগান, নাটক আর অ্যাক্রেবেটিক শো দেখতে এক শ্রেণির মানুষ যখন মুগ্ধতায় গালে হাত জড়িয়েছে, ঠিক তখনই নন্দন মঞ্চের পাশে আরেক দল নিচ্ছে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্বাদ।

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দেখা মেলে একাধিক পিঠা প্রেমী মানুষের। শুধু খাবার বা স্বাদ হিসেবে নয়, বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়, তারই যেন স্তুতি গাইছিলেন এই মানুষেরা।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় সংস্কৃতিকর্মী ও পিঠা ক্রেতা সৌরভ বাপ্পার সঙ্গে। পিঠা খেতে খেতে তিনি বলেন, এলাকা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন বা আলাদা রকম পিঠা তৈরি হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান ওঠার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। শীতের সময় বাহারী পিঠার উপস্থাপন ও আধিক্য দেখা যায়। বাঙালির লোক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।

তবে কিছুদিন আগেও যে পিঠার আলাদা একাটা ঐতিহ্য ছিল, তা বর্তমানে কিছুটা হলেও হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন এ সংস্কৃতি কর্মী। তিনি বলেন, আগে গ্রামে যেভাবে পিঠা-পুলি তৈরি হতো তা এখন যেনো অনেকটাই কমে গেছে। একই সঙ্গে শহরেও এর ঘ্রাণ অনেক কম। নগরবাসী এখন ঘরে পিঠা বানানোর তুলনায় পিঠা কিনে খেতেই যেনো বেশি পছন্দ করে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ‘বিজয়ের মহোৎসব’ শিরোনামে সপ্তাহব্যাপী আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেলে নানান আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে এ উৎসব। আর এ উৎসব উপলক্ষ্যেই প্রাঙ্গণের একপাশে বসেছে পিঠার দোকান।

দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রচলিত পিঠার মধ্যে পাটিসাপটা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই, পুলি, দুধপুলি, পাতা পিঠা, ঝাল পিঠা, নারকেল পিঠা, ভাঁপা পিঠা বানিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ আবার নকশা পিঠা, ঝিনুক পিঠা, জামদানি পিঠা তৈরি করেছেন। আছে সূর্যমুখী, গোলাপি। সন্দেশ, আন্দশা, মালপোয়া, পাজোয়া-কী সুন্দর সুন্দর নাম! আর সুন্দর নামের সঙ্গে পৌষের শীত সন্ধ্যায় পিঠা খেতে খুশিতে উল্লাস ছড়িয়েছে পিঠা প্রেমী মানুষগুলো।

এ প্রসঙ্গে সোনারগাঁও পিঠা ঘরের প্রোপাইটর খোরশেদ আলম জানান, শীত আসতেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। শহুরে সমাজে সেই ঐতিহ্যের ধারা কিছুটা মলিন হয়েছে। এখন অনেকেই ঘরে পিঠা তৈরি থেকে কিনে খেতে পছন্দ করে। তারা আসছেন, কিনে খাচ্ছেন। তবে অন্যদের তুলনায় বেশি আসছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের এই সামান্য পিঠা উৎসবের আয়োজন বাঙালি ঐতিহ্য রীতিনীতিকে কিছুটা হলেও মনে করিয়ে দেয়।

এদিকে বিকেল ৪টায় একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে শুরু হয় বিজয় মহাৎসবের ষষ্ঠ দিনের আয়োজন। শুরুতে প্রামাণ্যচিত্র ‘লাল সবুজরে দীপাবলি’ এবং বাংলাদশে শিল্পকলা একাডমেরি কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়। কবি আসাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নৃত্য শিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু।

সাংস্কৃতিক পর্বে ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে বাফা। সোহেল রহমানের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে শিখড় কালচারাল অরগানাইজেশন। সংগীত পরিবেশন করেছেন শিল্পী ইবনে রাজন, অনিমা মুক্তি গোমেজ, সোহান, লুইপা, পলাশ। তপন হাফিজের নির্দেশনায় উৎপল দত্তের নাটক ‘দ্বীপ’-এর অংশবিশেষ পরিবেশন করে নাট্যতীর্থ। শাহীন রেজা রাসেলের রচনা ও কাজী রাকিবের নির্দেশনায় ‘রক্তঋণ’ নাটকের অংশবিশেষ পরিবেশন করে তীরন্দাজ নাট্যদল। কবিগান পরিবেশন করেন কাজল ও বাবলী দেওয়ান।

বাংলাদেশ সময়: ০২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
এইচএমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।