ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ মিশনটিলার জনবসতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ মিশনটিলার জনবসতি পাহাড়ি দুই শিশুর মুখে মৃদু হাসি। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: উঁচু টিলাটা চলে গেছে ভ্রাতৃত্ব আর মমতার উচ্চরেখা হয়ে। এই টিলাই নিঃশব্দ ভাষায় যেন জানান দিচ্ছে সম্প্রীতির বন্ধনকে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর আন্তরিকতা সেখানে বিরাজমান। 

এখানে মাত্র ২৯ পরিবারের বাস। এর মধ্যে ২৪ পরিবার খ্রিস্টান এবং অবশিষ্ট পাঁচ পরিবার হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত।

টিলাময় এই স্থানটিকে সুখীময় করে রেখেছে তারা বহুকাল ধরে একে-অপরের সঙ্গে সম্প্রতির বন্ধনে।  

শ্রীমঙ্গলের জাগছড়া চা বাগানের মিশনটিলায় গিয়ে খুঁজে পাওয়া গেছে শিশুদের আনন্দের হাতছানি। নৃ-জনগোষ্ঠীর এই জনপদ টিকে থাকার সংগ্রামে মুখর।  

পড়ন্ত দুপুর আর ক্লান্ত বিকেলের মাঝামাঝি সময়ে ক্যামেরায় ‘ক্লিক’  করতেই সেই সৌন্দর্য ফুটে উঠে শিশুর খেলায়। হঠাৎ দেখা গেল একটি মেয়ে একটি বড় চাকাকে দৌঁড়ে নিয়ে চলেছে সামনের দিকে।  পাহাড়ি শিশুর দুরন্ত বিনোদন।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন এ টিলায় বসবাসকারী প্রায় অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। টিলার নিচেই রয়েছে তাদের উপাসনাকেন্দ্র। সপ্তাহের প্রতি রোববার সবাই মিলে প্রার্থনা করে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার কণ্ঠেই থাকে সম্প্রীতির রেশ। সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও পূজা-পার্বণে নিমন্ত্রণ দেন পাশের বাড়ির খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের।   

এই এলাকার এক তরুণের নাম সোহেল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সর্বমোট ২৯ ঘর আছি এখানে। সবাই পরিবারের মতো হয়ে গেছে। একের বিপদে আমরা দৌঁড়ে আসি।  

এলাকার শিশুদের জন্য এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও মিশনারি স্কুল রয়েছে বলে জানান সোহেল।
 
ছোট্ট শন-বাঁশের কুঁড়েঘরে থাকেন তিনি আর তার স্ত্রী। এই ঘরের নিচটা পাকা। ঘরের চারদিকে মাটির বেড়া। তিনি কাজ করেন প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের লাউয়াছড়া পানপুঞ্জিতে। দৈনিক মজুরি ৩শ’ টাকা। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ।  

এঘরে-ওঘরে চলছে স্ত্রীদের নানা সাংসারিক কর্তব্যকর্ম। কেউ টিউবওয়েল থেকে মাথায় করে পানি আনছেন; কেউ আপন ঘরের উঠোন ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ রোদে কাপড় মেলে দেওয়ার পাশাপাশি অদূরবর্তী মানুষটির সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।

সময় ফুরিয়ে এসেছে; এবার ফিরে যাওয়ার পালা। অনেক কথার ফাঁকে কথা প্রসঙ্গে সোহেল বলে উঠেন, ‘আমরা গরিব বলে বলছি না, আসলে মাটির বেড়া আর শন-বাঁশের ঘরে থাকতে যে আরাম সেটা দানানকোঠাতেও পাওয়া যায় না বাবু। একবার থাকলে বুঝতেন...’ 

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ 
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।