ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শঙ্খ সমাদরে হবে বোধন আমন্ত্রণ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
শঙ্খ সমাদরে হবে বোধন আমন্ত্রণ ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুর্গা পূজা

ঢাকা: সদ্য প্রস্ফুটিত শিউলি ফুল তার আগামবার্তা জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাঙালির প্রতিটি ঘর এখন উৎসবে মুখরিত। হিমালয়ের মেয়ে যেন শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি আসছেন। সঙ্গে তার দুহিতা কন্যা ধনের দেবী লক্ষ্মী, বিদ্যার দেবী সরস্বতী, দুই পুত্র সিদ্ধিদাতা গণেশ আর দেব সেনাপতি কার্তিক।

বাহনসহ দেবী আসছেন। তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন মহাদেব।

বাঙালী চিরাচরিত প্রথায় মেয়েকে সাদর আমন্ত্রণে ঘরে তুলে নেয়; আজ নেবেও তাই।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গা পূজা। এদিন বিকেল ৪টায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে উৎসবের প্রথম দিনের কার্যক্রম।

শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপূজা

শারদীয় দুর্গা উৎসবকে কেউ কেউ আবার অকালবোধন বলেও আখ্যায়িত করেন। অকালবোধন হলো দুর্গাপূজার প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান। সনাতন বিশ্বাস অনুসারে, শরৎকাল দেবলোকের রাতের অন্তর্গত। যেহেতু শরতে দেবতারা নিদ্রিত থাকেন, তাই তাদের জাগিয়ে পূজাপার্বণ করা শাস্ত্রীয় নিয়ম। এ কারণেই শারদীয়া দুর্গাপূজায় অর্থাৎ আশ্বিনের দুর্গাপূজায় ‘বোধন’ একটি বিশেষ অনুষ্ঠান।

হিন্দু পূরাণ মতে, সীতাকে উদ্ধারের জন্য শরৎকালে পূজা করে অকালে দেবীকে জাগ্রত করেন শ্রীরামচন্দ্র। তাই এ পূজা অকালবোধন নামে পরিচিত। তবে অসময়ে ঘুমন্ত দেবীকে জাগ্রতই বা করতে হলো কেন? 

পূরাণ অনুসারে, শ্রী রামচন্দ্র যখন সীতা ও লক্ষণকে নিয়ে বনবাসী হয়েছিলেন, তখন লঙ্কেশর রাবণ একদিন সীতাকে হরণ করে অশোক বনে লুকিয়ে রাখেন। এ সময়টা ছিল স্বর্গের দেবীদের নিদ্রাগমনের সময়, অর্থাৎ যখন বৃষ্টি হবার আর সম্ভাবনা থাকে না।

ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুর্গা পূজা

সীতা হরণ হওয়ায় রাম বিভিন্ন দেবদেবীর শরণাপন্ন হচ্ছিলেন, কিভাবে সীতাকে উদ্ধার করা যায়! তখন ভগবান ব্রহ্মা শ্রীরামচন্দ্রকে মা দুর্গার উপাসনার কথা বললেন। কেননা মা দুর্গাই শক্তির আধার। শক্তির বিভিন্ন রূপে তিনি পুজিত হন। কখনও তিনি মহিষাসুরমর্দিনী, কখনও দুর্গতিনাশিনী, কখনও জগৎজননী, কখনও ধনধান্যে পূর্ণদায়িনী।

রাম সেই অনুযায়ী শরৎকালেই দেবীর পূজার ব্যবস্থা করলেন। দুর্গাপূজার উপকরণ হিসাবে প্রধান উপকরণ ছিল সর্বমোট ১০৮টি নীলপদ্ম। তবে এ নীলপদ্ম মর্তে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু অসময়ে দেবীকে জাগ্রত করা হচ্ছে যখন, তখন পূজার প্রধান সামগ্রী তো চাইই।

ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুর্গা পূজা

অনেক খোঁজার পর অবশেষে ব্রহ্মসরোবর থেকে নীলপদ্ম জোগাড় হল। ভক্তের ভক্তি পরীক্ষা করার জন্য ছলনা করলেন দেবী। তিনি একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখলেন। পূজার সব আয়োজন করে যখন রাম আসনে বসেন, তখন দেখেন যে একটি পদ্ম নেই। পূজার সময় একটি পদ্মের অভাব হওয়ায় শ্রীরামচন্দ্র বিপদে পড়লেন। পূজা পূর্ণাঙ্গ না হলে দেবী অসন্তুষ্ট হবেন, সংকল্পও সিদ্ধ হবে না।

আসনে বসে পূজাও ছেড়ে যাওয়া যাবে না, তাই রাম অনেক ভেবে অবশেষে ঠিক করেন নিজের চোখ দিয়েই একটি নীলপদ্মের অভাব দূর করবেন। কেননা, শ্রীরামচন্দ্র পদ্মলোচন নামে অভিহিত। সেজন্য তিনি নিজের একটি চক্ষু উৎপাটিত করে তা মায়ের অঞ্জলি দেওয়ার সংকল্প করেন।

এরপর সংকল্প অনুযায়ী তীর দিয়ে নিজের একটি চোখ উপড়ে ফেলার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন রাম। তখন মা দুর্গা এসে তাকে বাধা দেন এবং তার ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে তাকে যুদ্ধে জয়লাভের বর দেন।

কিন্তু সীতা হরণ হওয়ায় পৃথিবীর মাটি শুকিয়ে গিয়ে খরার সৃষ্টি হয়। কারণ সীতা ছিলেন ধরণীর কন্যা। তার পিতা তাকে জমি কর্ষণ করার সময় পৃথিবীর বুক থেকেই পেয়েছিলেন। জল ছাড়া যেহেতু চাষবাস অসম্পূর্ণ তাই রাম যজ্ঞদ্বারা খরা সৃষ্টিকারী রাবণকে বধ করে অকালবর্ষণ করেছিলেন। এ অকালবর্ষণকেও অকালবোধন বলা হয়।

ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুর্গা পূজা

শাস্ত্রমতে, দুর্গাপূজার উপযুক্ত সময় বসন্তকাল। পৌরাণিক বর্ণনা অনুযায়ী সূর্যবংশীয় রাজা সুরথ বসন্তকালে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী ও নবমী তিথিতে দুর্গাপূজার প্রচলন করেন। এ পূজা বাসন্তীপূজা নামেও পরিচিত। বসন্তকালে মর্তে দেবী দুর্গার প্রথমবার পূজা করা হয়েছিল বলে দেবী বাসন্তিকা নামেও পরিচিত। কিন্তু এখনকার সময়ে অকালবোধন পূজা বা শারদীয়া দুর্গাপূজাই অধিকতর প্রচলিত।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসী মহারাজ স্বামী অবিচলানন্দ জানান, রাবণকে নাশ করার লক্ষ্যে শ্রীরামচন্দ্রকে অনুগ্রহ করার জন্য অকালে দেবীকে জাগরিত করা হয়েছিল। দুর্গাপূজায়- ‘ব্রাহ্মমুহূর্তে, সম্পন্ন অধিবাসে বোধন হয় মা দুর্গার, শঙ্খে শঙ্খে সমাদরে। যেহেতু শরতে দেবতারা নিদ্রিত থাকেন, তাই তাদের জাগিয়ে পূজাপার্বণ করা শাস্ত্রীয় নিয়ম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
এইচএমএস/এএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।