ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নদীময় জোছনার শৈশবগাঁথা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
নদীময় জোছনার শৈশবগাঁথা পরম মমতায় বাছুর-কে গোসল করাচ্ছে জোছনা। ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: শৈশবের কত স্মৃতি। কোনোটা মধুর আবার কোনোটা বেদনায় ঢাকা। মধুর বা বেদনা যেটাকেই বলা হোক না কেন - হৃদয়ের মণিকোঠরে তা দাগ কেটে যায় সারাজীবনের জন্য। আমরা আপ্লুত হই নিজেদের মতো করে। 

জীবনের পূর্ণ কোনো অবসরে সেই অতীত স্মৃতি হৃদয়ে উঁকি দেওয়া মাত্রই তা অসম্ভব ভালো লাগার মুগ্ধতা ছড়ায়। অন্যদিকে সেই অতীত স্মৃতিটি বেদনার হলে তা কালো মেঘে ঢেকে দেয় হৃদয়কোণে।

স্মৃতিতাড়িত প্রতিটি ব্যক্তির সুখ-দুখের আল্পনায় রাঙা।  

রোববার (১৯ আগস্ট) দুপুরে লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামের বলভদ্র নদীর পারে এক কিশোরীকে তার গৃহপালিত বাছুরকে পরম মমতায় গোসল করিয়ে দিতে দেখা যায়।  

গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে এই দৃশ্যাবলী সাধারণ ঘটনা হলেও শহুরে জীবনযাত্রার মানুষদের কাছে তা অপূর্ব দৃশ্যের এক অনবদ্য রূপরেখায় প্রকাশিত।  

এমন অপূর্ব একটি দৃশ্যকে কেন্দ্র করেই কারো কারো জীবনে গ্রামীণ কোনো স্মৃতি তার আপন হৃদয়ের চিত্রপটে নানার রঙের আলো ছড়াতে থাকে। তিনি কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যান তার মায়াময় শৈশবের কাছে।  

শৈশবের প্রবাহমান নদী, সবুজ ধানক্ষেত, দিগন্তবিস্তৃত হলদে সরিষাফুল, শাপলা-শালুকের জলজঘ্রাণে মাখামাখি সেই অতীতের দিনগুলো পুনরায় ফিরে আসতে থাকে তার কাছে! 

বলভদ্র নদীর পাড়ে গরু-বাছুরকে গোসল করানো সেই মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলো, ‘জোছনা। ’ মোড়াকরি পালপাড়া গ্রামের এক দুরন্ত কিশোরী জোছনা।  

মায়ের কথা মতো নিজেদের গরু ও বাছুরকে পাশের নদীতে নিয়ে প্রতিদিন গোসল করায় সে। তাতে কোনো ক্লান্তি নেই তার। বরং পরমানন্দে নেচে উঠে তার মন। সে তখন মায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এক নিবিড় পরিচ্ছন্নকর্মী।    

প্রথমে গাভীটিকে, তারপর সেই গাভীর বাছুরকে গোসল করায়। দৈনন্দিন অভ্যাস বলে দেয় মমতার কথা। ভালোলাগার কথা। রশি ধরে টানতে টানতে জোছনা যখন গাভীটিকে নদীর কোমড় পানিতে নিয়ে দাঁড় করায়, তখন গাভীটিও সেই উদ্যোগে সম্মতি জানায়।

কোনো প্রকার নিষেধ বা অস্বাভাবিক আচরণ করে না। গাভীটি তখন নীরবে হেঁটে যায় কোমড় পানির কাছাকাছি। জোছনার কোমল তুলতুলে হাতের পরশে গাভী ও বাছুরের শরীরে বয়ে যায় নিবিড় ভালোবাসার পরশ।   

শরীর ঘসে দৈনিক ময়লাগুলো দূর করতে থাকে। গাভীর পরে বাছুরটির পালা। বাছুরটিকে গাভীর মতোই টেনে নিয়ে আসা হয় নদীর অল্প পানিতে। তাকেও অনুরূপভাবে পরিষ্কার করা হয়। সেও মায়ের মতোই চুপচাপ হয়ে গোসল উপভোগ করতে থাকে।  

নিজের গরু-বাছুরকে গোসল করতে করতে জোছনা বলে উঠে, মার কথা মতো গরু-বাছুরকে প্রতিদিন এভাবে গোসল করাই আমি। এ কাছটি করতে খুব ভালো লাগে আমার। বলভদ্র নদীর পাড়েই আমাদের বাড়ি। সবাই কাজ-কাম নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তাই এ কাজটা আমাকেই করতে হয়।  

জোছনার এমন সহজ স্বীকারোক্তি আমাদের শৈশবের সরলতাকে মনে করিয়ে দেয় বারংবার। আমরা পৃথক প্রেক্ষাপটে এমন সহজ-সরল শৈশবের কাছে চিরদিনের জন্য আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা।   

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
বিবিবি/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।