ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মানবতাবাদের প্রকাশ মেলে বাউলগানে

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
মানবতাবাদের প্রকাশ মেলে বাউলগানে গান পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আউল-বাউলের দেশ বাংলাদেশ। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাউল দর্শন। সে দর্শনের মূল সুর অসাম্প্রদায়িকতা আর মানবতাবাদের। বাউল দর্শনের প্রধান পুরুষ মহাত্মা লালন সাঁইজি তার গানে গানে বার বার উচ্চারণ করেছেন মানুষের কথা, অসাম্প্রদায়িকতা আর মানবতার কথা। তারই দু’টি নমুনা হলো ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এবং ‘মানুষ তত্ত্ব যার সত্য হয় মনে, সে কি অন্য তত্ত্ব মানে’।

এ দর্শন বাংলার গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরের মানুষ হাজার বছর ধরে মনে পুষে রাখলেও ইদানিং নানাভাবে তা থেকে বের হয়ে এসে অসহনশীল এবং সহিংস হয়ে উঠছে তারা। যেন ভুলতে বসেছে ‘সবার উপরে মানুষ’ কিংবা ‘মানুষের জন্য মানুষ’-এর মত মর্মবাণী।

 

অতীতের সে কথা ভুলে যাওয়ার সময়ে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিতেই বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হলো বাউল সঙ্গীত উৎসব।

‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও লালন বিশ্বসংঘ’-এর যৌথ উদ্যোগে এবং ‘ভারত-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’-এর সহযোগিতায় সন্ধ্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক নীপা চৌধুরী এবং বাউল গবেষক আবদেল মাননান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাউলের যে হাজার বছরের সংস্কৃতির ইতিহাস রয়েছে তার মূল উপাদান হচ্ছে বাউলধারার গান। বাউলের দর্শন মানবতাবাদ। বাউলদের গানে গানে মানবতাবাদের এ চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটেছে, যা আমাদের সংস্কৃতিরও মূল সুর। তিনদিনের এ বাউল উৎসব এ সময়ের জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বাউল গানের বাণী উপভোগ করার পাশাপাশি যারা গান শুনবেন তারা উপলব্ধিও করবেন। তাহলে সমাজ ও দর্শনের ভেতরে মানবতাবাদ প্রবেশ করবে।

লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাংলাদেশ আউল-বাউলের দেশ। এদেশ লালন-রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের দেশ, মানবতার দেশ। মানবতার এ দেশে এ সময়ে এসে ধর্মের নামে এক ধরনের ধর্মের নামে ধর্মবিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী অসহনশীলতার চর্চা করছে। লালনের আবক্ষভাস্কর্য ভাঙছে, মানবতাবাদী বাউলদের ওপরে নির্যাতন করছে। যা ইসলাম ধর্মে কখনও সমর্থন করে না। এ ধরনের কুপমন্ডুকতা থেকে মুক্তি দিতে পারে লালন সাঁইজির দর্শন।

আবদেল মান্নান বলেন, বাউল সাধনা হচ্ছে একটি আধ্যাত্মিক সাধনার চরম পর্যায়। বাউল দর্শনের প্রকাশ ঘটে মূলত সঙ্গীতের মাধ্যমে। এ বাউল দর্শন আমাদের সমাজে বেশি প্রসার ঘটতো এবং বাউল দর্শনের পথে মানুষ পরিচালিত হতো, তাহলে অসাম্প্রদায়িকতার এদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো না।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে ছিলো ‘ফকির লালন শাহ ও বাংলার ফকিরী গানের উত্তরাধিকার শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনী। যাতে উঠে আসে ফকির লালন সাঁইয়ের উপর লালন বিশ্ব সংঘের বিভিন্ন আয়োজনের আলোকচিত্র। সবশেষে ছিলো দুই বাংলার বাউল শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমির বাউল দলের শতাধিক শিল্পীর সম্মিলিত সঙ্গীত পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। তাদের কণ্ঠে গীত হয় ‘এসো হে দয়াল কান্ডারি’, ‘লাঙল চষে সাধ মেটে না’ এবং ‘রসের প্রেম ঘাটেতে আগ বাড়িয়ে নাও দিও না’ শীর্ষক তিনটি গান।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৮
এইচএমএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।