ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

জীবিকার খোঁজে গান নিয়ে রাস্তায় বীরেন

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৮
জীবিকার খোঁজে গান নিয়ে রাস্তায় বীরেন গান গাইছেন বীরেন দাস। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বৈশাখের তপ্ত দুপুর শেষ না হতেই হঠাৎ চারদিক অন্ধকার। মেঘের তীব্র গর্জনের পর মুহূর্তেই আকাশ ভেঙে ঝরছে বৃষ্টি। পথচারীরা যে যার মতো রাস্তার পাশের দোকান কিংবা চায়ের টং দোকানগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।

দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির কারণে অনেকেই চায়ের দোকানে দু-এক কাপ চা খাচ্ছেন আর বিভিন্ন আলোচনায় মেতে উঠেছেন। এমন সময় হঠাৎ করেই বেজে উঠল পুরনো বাংলা গানের সুর।

কেউ রেকর্ড বাজিয়েছেন মনে হলেও, সবার ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। কারাওকে যন্ত্রে (এক ধরনের গান গাওয়ার যন্ত্র) বাজতে থাকা গানের লিরিক্স সঙ্গে তাল মিলিয়ে গেয়ে চলেছেন বীরেন দাস। চা দোকানের পাশেই বাংলা-হিন্দি সব ধরনের গান গেয়ে চলেছেন তিনি। গানের মাঝেই বলছেন, আমার গান শুনে কারো যদি ভালো লাগে, তাহলে আমাকে ৫ থেকে১০ টাকা দিয়ে সহায়তা করবেন।

বুধবার ( মে ০৩) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের মাঠ সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

বৃষ্টিতে আটকে পড়া মানুষগুলো যেন সময় কাটানোর ভালো সুযোগ পেয়ে গেলেন। একটা গান শেষ হতেই আরেকটা গাওয়ার অনুরোধ ছুঁড়ে দিচ্ছেন বীরেনের দিকে।

৩৮ বছর বয়সী বীরেন বাংলানিউজকে জানান, তার গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলায়। পঞ্চম শ্রেণী পাস করা বীরেন জীবিকার খোঁজে ২০০০ সালে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। রঙিন জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে কাজ নেন এফডিসিতে। প্রোডাকশন বয় হিসেবে কাজ করেন চার বছর। কিন্তু এতে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ব্যর্থ হয়ে রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর।

এরপর সুযোগের সন্ধানে বীরেন চলে যান কলকাতার বারাসাতে। সেখানে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। কলকাতার ট্রেনে, পথে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কারাওকে গান গাওয়া দেখে মুগ্ধ হন তিনি। তারপর এই ভালোবাসার গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহের সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৯ হাজার রুপি দিয়ে কিনে নেন কারাওকে যন্ত্র।

চার বছর পর কিছুদিন আগে কারাওকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। গান গেয়ে উপার্জনের আশায় ঢাকায় এসেছেন চারদিন আগে। থাকছেন জুরাইনের এক বাসায়। মঙ্গলবার (০১ মে) রমনাপার্কে গান গেয়ে ৭শ টাকা আয় করেন তিনি। বুধবার সংসদ ভবন এলাকায় গান গাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।

বীরেন বলেন, গান গাইতে আমার খুব ভালো লাগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান গাইতে আমার কোনো কষ্টই হয় না। এই কয়েকদিনে শ্রোতারা বলছেন, গান তাদের পছন্দ হয়েছে। এভাবে যেতে পারলে সবাই যদি চায় তাহলে হয়তো একদিন অনেক উপরে যেতে পারবো।

এরপর বীরেন আবার গান শুরু করেন। দর্শকদের অনুরোধে বাংলা-হিন্দি-ব্যান্ড, নতুন কিংবা পুরাতন দিনের গান গেয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়। আবার বলছেন, আমি ভিক্ষা করছি না, আপনাদের যদি গান ভালো লাগে তাহলে একটু সহায়তা করবেন।

যেকোনো অনুষ্ঠানে গিয়েও গান গেয়ে আনন্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে বীরেন বলেন, ‘আমাকে ফোন করে জানাবেন, আমি গান গাইতে পৌঁছে যাবো। তারপর আপনাদের খুশি মতো যা ইচ্ছা হয় দেবেন। আবার বীরেন গেয়ে চলেন, দর্শকরা মুগ্ধ হন আর বীরেন নতুন স্বপ্ন বুনেন বুকের ভেতরে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৮
পিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।