ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

জীবনযুদ্ধে সফল প্রতিবন্ধী মিস্টার আলী

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৭
জীবনযুদ্ধে সফল প্রতিবন্ধী মিস্টার আলী সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ী হাটে নিজ হাতে তৈরি পণ্য বিক্রি করছেন মিস্টার আলী-ছবি রফিকুল ইসলাম

সারিয়াকান্দি (বগুড়া): বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামের মিস্টার আলী, দুই পা হারিয়েও জীবনযুদ্ধে সফল তিনি।  

কুটির শিল্পের কাজ শেখার পর নিজেই ঘরে বসে তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। ফুটিয়েছেন সংসারের সবার মুখে হাসি।

ফুলবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত নঈম উদ্দিন প্রামাণিকের বড় ছেলে নফিজ উদ্দিন ওরফে মিস্টার আলী।

অভাবী সংসারের দুঃখ-কষ্ট ঘোচানোর জন্য ১৯৭৬ সালের দিকে বগুড়া শহরে রিকশা চালাতে শুরু করেন। রিকশা চালাতে গিয়ে ছয় বছর আগে দুর্ঘটনায় তার বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে বাম পা হাঁটুর উপর পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। এক পা নিয়েই সংসারের ঘানি টানতে থাকেন মিস্টার আলী। পাঁচ বছর পর পচনজনিত কারণে ডান পা-ও কেটে ফেলতে হয়।

স্ত্রী বেলি বেগম, নাবালক দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মিস্টার আলীর সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। অবশেষে তিনি ঘরে বসেই গৃহস্থালী সামগ্রী ঝাড়ু, শামটা, কূলা, দড়ি-কাচি, হোচা, শিশুদের দোলনা, মাটি কাটার টুপড়ি, খাচি ইত্যাদি তৈরি করতে  শুরু করেন। ধীরে ধীরে পণ্য সামগ্রী তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেন।

পণ্য তৈরি করছেন মিস্টার আলী-ছবি রফিকুল ইসলামএরপর স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ওইসব পণ্য তৈরি করার জন্য ছেলেদের সহযোগিতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশসহ অন্যান্য মালামাল সংগ্রহ করে তা থেকে জিনিসপত্র তৈরি করে নিজে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে থাকেন।

মিস্টার আলী জানান, সপ্তাহে শুক্রবার নারুয়ামালা, শনিবার সারিয়াকান্দি, রোববার ফুলবাড়ী, সোমবার দুর্গাহাটা, মঙ্গলবার সারিয়াকান্দি, বুধবার বাইগুনি ও বৃহস্পতিবার হাটফুলবাড়ী হাটে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন তিনি। আস্তে আস্তে তার সামগ্রীর চাহিদা বাড়তে থাকে। এতে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করে।

এর কিছুদিন পর বড় ছেলে বিটুলকে চার লাখ টাকা দিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা কিনে দেন। তা থেকে উপার্জনের টাকায় মেয়ে বিলকিছ বেগমকে ধুমধাম করে বিয়ে দেন। ছোট ছেলে ফিরোজ আহম্মেদ এইচএসসি পাশ করে। বড় ছেলে বিয়ে করে নিজের মতো সংসার পেতেছেন। বর্তমানে ছোট ছেলে ফিরোজকে নিয়ে ভালই চলছে মিস্টার আলীর সংসার। তিনি বর্তমানে জীবনযুদ্ধে সফল এক মানুষ।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. আব্দুল রশিদ বলেন, সমাজে প্রতিবন্ধীরা যে বোঝা নয় মিস্টার আলী তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের দুঃখ-কষ্ট দূর করে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। আমরা তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে আসছি। তবে তিনি যদি আমাদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করেন তবে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।