ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মুরগি গুনতে জানে, অংক কষে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
মুরগি গুনতে জানে, অংক কষে! মুরগী অংক কষতে পারে, গুনতে জানে!

<< আগের অংশ: মুরগির মেকিয়াভেলি মনস্তত্ব
ইতালির পাদোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোসা রুগানির কথাই ধরুন। তিনিতো প্রায় এক দশক ধরে এ কথা পই পই করে বলে আসছেন। একের পর এক লিখেও চলেছেন। খাঁচায় পালিত মুরগির ওপর গবেষণা চালিয়ে তিনি আগেই বলেছেন মুরগি নামের এই পাখি গণনা জানে, সাধারণ অংক কষতে পারে।

একটা গবেষণার গল্পটা এরকম- খাচায় পালিত মুরগিকুলের মধ্যে পাঁচটি প্ল্যাস্টিক কনটেইনার বসানো হলো। দিন কয়েক পরে গবেষকরা মুরগিগুলোর চোখের সামনে থেকে সবক’টি পাত্র সরিয়ে নিলেন।

এরমধ্যে তিনটি পাত্র তারা রাখলেন একটি পর্দার পেছনে আর দুটি রাখলেন অপর একটি পর্দার ওপাশে। এরপর দেখা গেলো মুরগিগুলো ঠিকই লুকিয়ে রাখা ওই পাত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর বেশির ভাগ মুরগিই ধেয়ে যাচ্ছে সেই পর্দার দিকে যার ওপারে তিনটি পাত্র লুকোনো। গবেষকরা বলছেন, তার মানেই হচ্ছে মুরগিগুলো গুনে ফেলেছে কোনদিকে বেশি পাত্র রয়েছে।

এরপর এলো মুরগীর স্মৃতিশক্তি আর যোগ বিয়োগ করার ক্ষমতা যাচাইয়ের পালা। পাত্রগুলো দুটি পর্দার ওপাশে লুকিয়ে রাখার পর, গবেষকরা সেগুলো এপাশেরটা ওপাশে ওপাশেরটা এপাশে সরিয়ে নিলেন। কাজটি তারা করলেন মুরগীগুলোর চোখের সামনেই। এবারও মুরগিগুলো যেদিকে বেশি সংখ্যক পাত্র সেদিকেই ধাবিত হলো বেশি সংখ্যায়। মানে তারা দেখেই মনে রেখেছে আর যোগ-বিয়োগ করে ফেলেছে।

রুগানি বলেন, মুরগিরা তাদের ছোট্টবেলাতেই এই গণনা শিখে যায়, এমনকি ডিম থেকে ফোঁটার কয়েকদিনের মধ্যেই। আর তার ধারনা এটা কেবল মুরগিই নয়, অন্য প্রাণির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এই দক্ষতা প্রাণিদের প্রাকৃতিক পরিবেশে খাদ্য যোগাড়, মিলেমিশে থাকার সক্ষমতা তৈরি করে, বলেন তিনি।                             

মুরগির কিছু কল্পনাশক্তিও কাজ করে। ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে তা ওরা ভাবতে পারে। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিওভান অ্যাবেসিংগে তার গবেষণায় এর প্রমাণ দিয়ে বলেছেন- মূলতঃ বেশি করে খাদ্য যোগাড় করার জন্যই মুরগি এ কাজ করে।
মোরগরা চায় মুরগি পটাতে

অ্যাবেসিংগে তার গবেষণায় মুরগির নাগালে দুটি খাবারের উৎস তৈরি করেন। এর একটির কাছে অন্যটির চেয়ে অন্তত চার সেকেন্ড আগে যাওয়া যায়। তবে দূরের ভাণ্ডারটিতে খাবার অপেক্ষাকৃত বেশি। এবার দুটি চাবিই মুরগির ঠোঁটের কাছে রাখলে অপেক্ষাকৃত দূরের খাদ্যভাণ্ডারের চাবিটিই আগে তুলে নিতে দেখা যায় যেখানে বেশি খাদ্য রয়েছে। এর মানেই হচ্ছে মুরগির মধ্যে আত্ম নিয়ন্ত্রণও কাজ করে।

সামাজিক জীবনে মুরগির মধ্যে কিছুটা জটিলতাও কাজ করে।

কিছু কিছু গবেষণা দেখিয়েছে, বিশ্বের অনেক প্রাণিই বন্ধুর জন্য যেমনটা করে মুরগির মধ্যেও তা রয়েছে। আর তারা ব্যক্তিগত সুবিধার জন্যও কিছু কিছু কাজ করে।

একটি মোরগ যখন ভালো কোনও খাবারের সন্ধান পায়, তখন প্রায়শঃই সেটি কাছাকাছি মুরগিটির মন জয়ের চেষ্টা করতে থাকে। এসময় মোরগগুলো এক ধরনের নাচ দেয়, যে কাজটি কেবল এই খাবারের সময়টিতেই করে।

তখন আরেকটি কাণ্ড ঘটে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল মোরগটি যখন এই নাচ-গান দেখায় তখন তার ওপর শক্তিশালী মোরগটি হামলা চালায়। যেনো মুরগীর মন জয় করবে সেই। আর এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় কাছাকাছি যখন কোনও কর্তৃত্বপরায়ন মোরগ অবস্থান করে তখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল মোরগটি নাচলেও তা ওই মোরগের চোখ এড়িয়ে... নিরবে।

মোরগগুলোর মধ্যে চালবাজি মনোভাবও লক্ষ্য করা গেছে। এরা কখনো কখনো ভালো খাবার না পেলেও ওই বিশেষ নাচটি নেচে মুরগিগুলোকে ধোকা দিয়ে কাছে ডাকে। আর মজার বিষয় হলো যেসব মোরগ এ ধরনের ধোঁকা বার বার দিতে থাকে তখন খুব সহজেই তা ধরে ফেলে মুরগিগুলো, আর এড়িয়ে চলে।

গবেষকদের কাছে এমন প্রমাণও রয়েছে যে কিছু কিছু মুরগি একে অন্যের প্রতি সমমর্মিতা দেখায়।

গত ছয বছর ধারাবাহিক গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জোয়ান এডগার ও তার সহকর্মীরা ছানার প্রতি মা মুরগি কেমন আচরণ করেন তা দেখেছেন। তারা দেখেছেন ছানাগুলোর ওপর যখন বাতাস পাফ করা হয় তখন মা মুরগিটি বেশ প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিছুটা ক্ষুব্ধ ভাবও দেখায়। এই সময় বেশি করে কক-কক শব্দ করতে থাকে মা মুরগিটি।

২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দুই রঙের দুটি বাতাস প্রয়োগকারী বাক্স নেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক আরেকটি যন্ত্রণাদায়ক। দেখা যায় যখন বিপজ্জনক বাক্সে ছানাগুলো রাখা হয় তখনই মুরগিগুলো বেশ উদ্বেগ দেখাতে থাকে।

এ থেকে বুঝা যায় নিজেদের অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকেই ছানাগুলোর কষ্টের বিষয়টি গুরুত্ব পেতে থাকে মা মুরগীর কাছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে আরও গবেষণা চলবে বলেই জানান এডগার।

এটা যদি প্রমাণিত হয়েই যায় যে একটি মুরগির ওপর করা আচরণে অপর মুরগিটি কষ্ট পাচ্ছে তাহলে খামারে মুরগি পালন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

এডগার বলেন, ফার্মের ভেতর এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যাতে একটি মুরগির ওপর যা চলে তাতে অন্য মুরগির অনুভূতি বোধ থাকলে কষ্ট পাওয়ার কথা। সুতরাং বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া জরুরি।

ম্যারিনোও মনে করছেন, এসব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার সময় এসেছে।

মুরগি নির্বোধ ও অবুঝ প্রাণি বলে মানুষ যে কথা চালু রেখেছে তা মূলত এই কারণে যে, মুরগি তাদের খাদ্য, বলেন এই নারী গবেষক।

মুরগি নিয়ে সবচেয়ে অস্বস্তির সত্যিটি হচ্ছে এরা বোধের দিক থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। আর তা মানুষের প্রশংসা পেতে পারে।

তাই জ্ঞানি বলে বড়াই করা মানুষ তার মাংশাসি রূপটি পাল্টাবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। বিবিসি থেকে অনূদিত।

বাংলাদেশ সময় ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।