ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

খুলনার মেজবান বাড়ির মাংসের স্বাদই আলাদা!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
খুলনার মেজবান বাড়ির মাংসের স্বাদই আলাদা! ছবি- মানজারুল ইসলাম- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

খুলনা: পড়ন্ত দুপুরে মাটির সানকিতে ভাত, চিংড়ি ভর্তা, ডাল, গরুর মাংস দিয়ে একটু আয়েশ করে মেজবান বাড়িতে খেতে এসেছেন খুলনা মহানগরীর টুটপাড়ার মেজবাহ। কিন্তু আসলেই কি সঙ্গে সঙ্গে খাবার পাওয়া যাবে।

তার আগেও এসেছেন অনেকে। তাইতো দীর্ঘ লাইন। সেই লাইনে তিনিও দাঁড়িয়ে গেলেন মেজবান বাড়ির খাবারে উদরপূর্তি করার জন্য।

খুলনা বিশ্বাবদ্যালয়ের প্রধান গেটের বিপরীতে এক মাস আগে চালু হয়েছে মেজবান বাড়ি রেস্টুরেন্টটি। চালু হওয়ার পর থেকে ভোজন রসিকদের চাহিদা পূরণ করে চলছে এটি। রেস্টুরেন্টটি যে কাজটি যথাযথভাবে করছে তা সামনে দাঁড়ানো মানুষের দীর্ষ লাইন দেখলেই বোঝা যায়।

বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় সরেজমিনে দেখা যায়, খোলামেলা, ছিমছাম পরিবেশে ছোট এ রেস্টুরেন্টের ভেতরে সবমিলিয়ে ২৫ জনের বসার ব্যবস্থা আছে। ঘরোয়া পরিবেশে সরিষার তেলে রান্না করে মাটির সানকিতে পরিবেশন করা হয় খাবার।

লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় কথা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহর সঙ্গে। অন্য রেস্টুরেন্ট থাকতে এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে এতো কষ্ট করা কেন? উত্তরে বলেন, এখানে মাটির সানকিতে খাবার পরিবেশন করা হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে অমৃতের মতো।

তিনি বলেন, খুলনার এ নতুন রেস্টুরেন্টটির গরুর মাংসের স্বাদ যেকোনো হোটেলের চেয়ে আলাদা।

মেজবাহ বলেন, নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত আমরা এখানে এসে একটু গ্রামীণ পরিবেশ খুঁজে পাই। কেননা এখানে মাটির সানকিতে খাবার এমনকি গ্লাসসহ সব তৈজসপত্র মাটির। মুখে যা-ই বলি না কেন, মনে প্রাণে তো আমরা সবাই বাঙালি।

স্থানীয় সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের দুপুরের খাবারের আয়োজন মেজবান বাড়িতে করেছি। এখানে মাটির সানকিতে খেয়ে সবাই তৃপ্তি পেয়েছে। মেজবান বাড়ির গরুর মাংসের স্বাদ, ঘ্রাণ ও মজা সম্পূর্ণ আলাদা। খুলনায় এ নতুন রেস্টুরেন্টিতে জায়গা কম বলে বসতে কষ্ট হলেও খাবারের মানে সবাই সন্তুষ্ট।
 
মেজবান বাড়ির ব্যবস্থাপক এম এ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, জনপ্রতি ১৩৫ টাকার প্যাকেজে রয়েছে গরুর মাংস (এক বাটি), ডাল, সাদা ভাত, ভর্তা ও কোমল পানীয়।

তিনি জানান, শুক্রবার বিশেষ আয়োজনে থাকে রাজহাঁসের মাংস। যে কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না।

মেজবান বাড়ির উদ্যোক্তা ফারিয়া নাজনীন তন্নী বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের নাম মেজবান। সে অনুষ্ঠানে মূল খাবারের তালিকায় থাকে গরুর মাংস ও সাদা ভাত। আমরা সেটি অনুসরণ করে  মেজবান বাড়ির নাম রাখি। আর এখানে আসা অতিথিদের সেভাবে খাবার পরিবেশন করি।

তিনি জানান, মেজবান বাড়ি নামের এ রেস্টুরেন্টের পরিচালনায় রয়েছেন পাঁচজন। অন্যরা হলেন- জিশান রহমান, নাফিজ ইমতিয়াজ তোহা, এম এ হাসান ও মুশফিকুর রহমান। সবাই সদ্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি, আযম খান সরকারি কমার্স কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।    

তিনি জানান, গত ১০ জুলাই চালু হওয়া রেস্টুরেন্টটি মাত্র এক মাসের মধ্যে ভোজন রসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তন্নী বলেন, মানুষকে বসতে দিতে পারছি না। যে কারণে রেস্টুরেন্টটির জায়গা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। আশা করছি তখন আর কাউকে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।