ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ভার্চুয়াল প্রভাবে জায়গা হারিয়েছে ভালোবাসার ঈদকার্ড

সাখাওয়াত আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৬
ভার্চুয়াল প্রভাবে জায়গা হারিয়েছে ভালোবাসার ঈদকার্ড

ঢাকা: ‘ঈদের দাওয়াত তোমার তরে/ আসবে তুমি আমার ঘরে/ কবুল কর আমার দাওয়াত/ না করলে পাবো আঘাত/ তখন কিন্তু দেবো আড়ি/ যাবো না আর তোমার বাড়ি। ’

এইতো বেশিদিন আগের কথা নয়।

মাত্র বছর দশ-বারো আগেও ‘ঈদ মোবারক’ লেখা রঙিন কার্ডে এরকম মিষ্টিমধুর ভাষায় নানা ছড়া-ছন্দ কেটে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রচলন ছিল। রমজানের শুরু থেকেই পাড়া মহল্লা আর গ্রাম-গঞ্জের দোকানগুলো রঙিন হয়ে উঠতো বর্ণিল ডিজাইনের ঈদকার্ড আর ভিউ কার্ডে (নায়ক-নায়িকাদের ছবি)।

শুধু দোকানগুলোতেই নয়, পাড়ার ছেলেরা শামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে টেবিল সাজিয়ে বসতো ঈদকার্ড বিক্রির জন্য। কার্ডগুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনে সেগুলো মোড়ানো থাকতো স্বচ্ছ পলিথিনে। তরুণ-তরুণীরা সাজানো কার্ডগুলোর মধ্য থেকে পছন্দমতো কিনতো প্রিয়জন বা বন্ধু-বান্ধবীর জন্য।

পাড়া-মহল্লার এসব দোকান শুধু বিক্রয় কেন্দ্রই নয়, ছিলো এলাকার তরুণদের আড্ডার জায়গাও। তাই বেশ কয়েকটা চেয়ার পাতা থাকতো সেসব অস্থায়ী দোকানের সামনে। কার্ড ক্রেতা ছাড়াও সেখানে আড্ডা জমতো পাড়ার ছেলেদের। ঈদের বেশ আগেই যেন আনন্দ লেগে থাকতো সবার চোখে-মুখে।

কে কাকে কী লিখে ঈদকার্ড দিচ্ছে এ নিয়ে চলতো নানা কৌতূহল। প্রিয়জনের কাছ থেকে বিশেষ কার্ডটি পাওয়ার আশায় দিন গুনতো অনেকেই। অবশেষে কোনো এক কাঙ্ক্ষিত দিনে প্রিয়জনের কাছ থেকে সেই কার্ড পাওয়ার পর ঈদ আনন্দ যেন বেড়ে যেত বহুগুণে!

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিতে যোগ দেওয়া মুহিব বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখন ঈদকার্ড ছাড়া শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা কল্পনাই করতে পারতাম না! কে কাকে কার্ড দিলো, কার কাছ থেকে পেলো বা কে কতটি পেলো এ নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ থাকতো না।

কিন্তু একসময় ঈদকার্ডের সেই জায়গা দখল করলো মোবাইল ফোনের এসএমএস। শুভেচ্ছা বার্তা লিখে পাঠিয়ে দেওয়া হতো কাঙ্ক্ষিত মানুষের নম্বরে। উত্তরে আসতো পাল্টা শুভেচ্ছা বার্তা। সে ধারা চলছে এখনো।

তবু সেই টুজি মোবাইল ফোনের যুগ পেরিয়ে প্রজন্ম প্রবেশ করেছে থ্রিজির যুগে। পলিফোনিক রিংটোনের সেই মোবাইল ফোনের পরিবর্তে প্রায় সবার হাতেই শোভা পাচ্ছে স্মার্টফোন। ইন্টারনেট ব্যবহারও হয়েছে অনেক বেশি সহজলভ্য। সরকারি হিসেবে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটির বেশি। ব্যবহারকারীদের প্রায় সবাই সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়।
 ‍
প্রায় সবারই রয়েছে অন্তত একটি করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, ইমোসহ অন্য যোগাযোগের অ্যাপস ব্যবহার করছেন অনেকে। তাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা হোক বা ঈদের, সবাই এখন সামাজিক যোগাযোগের এসব মাধ্যম ব্যবহার করেই শুভেচ্ছা বিনিময়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।

ভালো একটা ঈদ কার্ডের ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে সেটাই পরিচিতজনদের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে বা মেসেজ আকারে পাঠিয়ে দিয়ে চলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। পাশাপাশি অন্য যোগাযোগ মাধ্যমতো রয়েছেই। ঈদ শুভেচ্ছা এখন পুরোপুরি ডিজিটাল!

সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের প্রভাবে আজ বিলুপ্ত প্রায় ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সেই সংস্কৃতি। হয়তো তরুণ-তরুণীরা জানেও না এসব কার্ডের কথা।

ঈদ কার্ড তৈরির জন্য বিখ্যাত রাজধানীর আজাদ প্রোডাক্টস, আইডিয়াল প্রোডাক্টসে নেই ঈদ কার্ড তৈরির ধুম।

বিক্রেতারা জানালেন, ঈদকার্ড বিক্রির সেই সোনালি দিন এখন অতীত। রাজনৈতিকভাবে কিছু ঈদকার্ড এখনও বিনিময় হয় বলে কিছু কাজ থাকে। মূলত আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে বিয়ের কার্ড ছাপানোর ওপর ভিত্তি করেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৬
এসএ/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।