ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নাইজেরিয়ার উদ্ভট ১০ মিথ

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
নাইজেরিয়ার উদ্ভট ১০ মিথ

ইংরেজি মিথ শব্দটি এসেছে গ্রিক ‘মিথস’ শব্দ থেকে, যার অর্থ গল্প। যতই এর অর্থ গল্প হোক না কেন, বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশেই এমন কিছু মিথ থাকে, যার কোনো ভিত্তি না থাকলেও মানুষ তা বিশ্বাস করে।

অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টা প্রায় কুসংস্কারের পর্যায়ে চলে যায়। আর সেই দেশ যদি হয় পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়া, তাহলে তো এই কুসংস্কার কখনো কখনো জীবননাশীও হয়ে ওঠে। বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য এমনই কিছু উদ্ভট নাইজেরীয় মিথ সম্পর্কে বিস্তারিত।

১. ডাকিনী, জাদুকর ও জাদুবিদ্যা
বিশ্বের অন্যান্য দেশে জাদুবিদ্যা ও জাদুকররা সাধারণ মানুষের বিনোদনের একটা উপলক্ষ্য হলেও নাইজেরিয়ায় তা রীতিমতো ভীতিকর। মানুষ জাদুকরদের এতটাই ভয় পায় যে, সুযোগ পেলেই তাদের ধরে ধরে হত্যা করে। এমনকি ভাড়াটে খুনিরাও খুব স্বল্প অর্থের বিনিময়ে তাদের হত্যা করতে রাজি থাকে।

বেশিরভাগ নাইজেরীয় বিশ্বাস করে, রাতের বেলা ডাকিনী ও জাদুকররা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এবং সাধারণ মানুষের ক্ষতির পরিকল্পনা করে। বৈঠক শেষে তারা কিছুক্ষণ উড়ে বেড়ায় ও হত্যা, চুরিসহ কিছু শয়তানিমূলক কাণ্ড ঘটায়। নাইজেরিয়ার গ্রামাঞ্চলে ছবি বা অন্য যেকোন কিছু খোয়া গেলে ধরে নেওয়া হয়, কোনো ডাকিনী বড়সড় কোনো ক্ষতির উদ্দেশ্যে তা চুরি করে নিয়ে গেছে।



বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, স্বপ্নে কেউ নিজের খাওয়ার দৃশ্য দেখলে নিশাচর ডাকিনীতে রূপান্তরিত হতে শুরু করে সে। বিশেষ করে কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে ডিম, মাংস বা মিষ্টি খেলে তো রক্ষাই নেই। জনশ্রুত আছে, এক্ষেত্রে প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো উপায়ে তার রেহাই মেলে না।

২. মায়ের (মাম্মি) জল
মাম্মি মূলত একজন নাইজেরীয় নদীর দেবী, যিনি অত্যন্ত সুন্দর ও ক্ষমাশীল। পাশাপাশি তিনি অর্ধেক মানবী ও অর্ধেক মাছ। এক কথায় তিনি একজন মৎস্যকন্যা।

বিশ্বব্যাপী মৎস্যকন্যাদের ব্যাপারে প্রচলিত আছে, এরা সাধারণত নিজেদের সত্যিকার ভালোবাসার সন্ধান করে এবং পেয়ে গেলে তাকে নিজ রাজ্যে নিয়ে চলে যায়। তবে নাইজেরীয় মাম্মী ব্যতিক্রম। তিনি সবসময় দাস খুঁজে বেড়ান। কাউকে বাগে পেলে সরাসরি পাতালপুরীতে নিয়ে গিয়ে নিজের ও বোনের সেবায় নিয়োজিত করেন। যতদিন তাদের ইচ্ছে হয়, ততদিন এই দাসকে বন্দি করে রাখে।

প্রচলিত আরেকটি মিথ হলো, কেউ যদি রাতের বেলা সাগর তীরে মাম্মিকে চুল আঁচড়াতে দেখে, তাহলে দেবী তার চিরুণি ফেলে সাঁতরে অন্যকোথাও চলে যান। আর দর্শক যদি সেই চিরুণি তোলে, তাহলে স্বপ্নে দেবী দেখা দিয়ে অর্থ বা যেকোন কিছুর বিনিময়ে তা ফেরত চান।



এসব করে তিনি আসলে সন্তান প্রতিপালনের সংস্কৃতি ধরে রাখেন।

৩. মাদাম কই কই (লোহিত নারী)
মাদাম কই কই বা লোহিত নারীর গল্প নাইজেরিয়ার প্রায় প্রতিটা বোর্ডিং স্কুলেই খুব প্রচলিত। তার ব্যাপারে একটা মিথ হলো, অনেক বছর আগে একজন শিক্ষিকা ছিলেন, যিনি লাল রঙ ভালোবাসতেন। তার মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সবকিছুই লাল রঙের ছিল। এবং তিনি ছিলেন দুষ্ট প্রকৃতির। তার ছিল একটি ছেলে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা তার দ্বারা খুব অত্যাচারিত ছিল, তাদেরই একটা দল ওই শিক্ষিকার ছেলেকে একদিন তুলে নিয়ে গেল। এবং তারা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়ে মাদাম কই কই তার একটা জুতো হারিয়ে ফেললেন। ক্ষেপে গিয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ তিনি নিয়েই ছাড়বেন।

প্রচলিত আছে, এখনো তিনি তার সন্তান ও খোয়া যাওয়া জুতো খুঁজতে পৃথিবীময় হেঁটে বেড়ান। রাতের বেলা তিনি যেকোন ঘরে ঢুকতে পারেন।

যদি কেউ নিজের ঘরে ‘কই কই কই’ শব্দ শুনতে পায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে, মাদাম কই কই সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। তার জুতোর হিলের আওয়াজ এমন। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেলতে হবে। যতক্ষণ এই হিলের শব্দ শোনা যাবে, ততক্ষণ চোখ বন্ধ রাখতে হবে। তা না হলে, নির্ঘাত মৃত্যু।

৪. ইনেডিবল ফিশ বা খাবারের অযোগ্য মাছ
কোগি রাজ্যে একটি নদী আছে, যেটাকে অভিশপ্ত বলে মনে করা হয়। এ নদী থেকে ধরা মাছ, তা যতই রান্নার চেষ্টা করা হোক না কেন, সবসময়ই কাঁচা রয়ে যাবে।

আর এসব মাছের কাঁটায় যদি কেউ আঘাত পায়, তাহলে কিছুতেই সে আঘাত সেরে উঠবে না।

৫. রাতে শিস বাজানো
কিছু কিছু মানুষ শিস বাজাতে পছন্দ করে। অনেকে খুব সুন্দর করে শিসে গানের সুরও ধরতে পারে। শ্রুতিমধুরও হয় তা।

তবে যতই শ্রুতিমধুর হোক না কেন, নাইজেরিয়ার কিছু এলাকায় রাতে শিস বাজানো মানা। এসব এলাকায় মনে করা হয়, রাতে শিস দিলে মৃতরা জেগে উঠবে এবং তারাও শিস বাজাতে শুরু করবে। শুধু তাই নয়, শিস বাজানো জীবিত মানুষটাকে ধরে তাদের কবরে নিয়ে চলে যাবে।

এ ব্যাপারে আরেকটা প্রচলিত ধারণা হলো, শিস বাজালে সাপ আসে।

দ্বিতীয় পর্ব দেখতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
আরএইচ/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।