ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

রথমেলার পূর্ণতায় মৃৎশিল্পের উপস্থিতি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
রথমেলার পূর্ণতায় মৃৎশিল্পের উপস্থিতি রথের মেলায় এসেছে মাটির তৈরি নানান পসরা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: রথ উৎসবে ঘিরে মৃৎশিল্পের শহর প্রত্যাবর্তন। আবহমান কাল ধরে বাংলার সংস্কৃতিতে নানাভাবে নানাবৈচিত্র্যে মিশে আছে মৃৎশিল্প।

 
মাটির তৈরি এসব বর্ণিল জিনিপত্র লোকশিল্পের অন্যতম প্রধান নির্দশন। যা বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মেলে ধরেছে।

বাংলার নানান পার্বণে এমন মৃৎশিল্পের উপস্থিতি না হলে কিছুতেই যেন পূর্ণতা পায় না এমন উৎসবগুলো। মৎশিল্পের এই অবিচ্ছেদ্য টান যুক্ত হয়ে আছে বাঙালির নাড়ির সাথে। গ্রামীণ জীবন থেকে শুরু করে সমাজ, সভ্যতার নানা পর্বের বিকাশের সাথে মিশে আছে মাটির এই বন্ধন। বাংলার কৃষ্টি ও লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণে এই মৃৎশিল্প আজও মর্যাদাপূর্ণ।
  
কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে শিল্পবিপ্লব ঘটে গেছে বহু আগে। এ বিপ্লবের ফসল হিসেবে এসেছে প্লাস্টিক। আজকের সময়ে সারা পৃথিবীব্যাপী এই প্লাস্টিকের যাচ্ছেতাই ব্যবহার। যা আজ প্রমাণিত হয়েছে প্রকৃতি এবং পরিবেশ ধ্বংসকারী উপাদান হিসেবে। সচেতন মানুষ আজ বুঝতে পেরেছে, আগামী পৃথিবীকে ভালো রাখতে হলে প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার যতটা সম্ভব কমাতেই হবে।



নানাভাবে নানাকারণে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে আবহমান বাংলার মৃৎশিল্প। পরিবেশ বিরোধী প্লাস্টিকের দৌড়ে পাল্লা দিয়ে এগুতে পারছে না মৃৎশিল্প। কেবলই মুখথুবড়ে পড়ে যাচ্ছে! কোনো কোনো এলাকার মৃৎশিল্পীরা তো তাদের পূর্বপুরুষের পেশা পরিবর্তন করে বিকল্প পেশায় প্রবেশ করেছেন। এতই দুর্গতি এর! কিন্তু তাতে কী? কোনো কোনো মৃৎশিল্পের অদম্য কারিগরেরা কিন্তু বসে নেই। তারা ঠিকই হাতে মাটি মাখছেন।  ক্লান্তির ঘামটুকু মুছে তৈরি করছেন দৃষ্টিনন্দন নানান মাটির পসরা। বিলুপ্তিপ্রায় এ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা আজও স্বপ্ন দেখেন।

মঙ্গলবার (২০ জুন) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে বুকে টিকে থাকার স্বপ্ন নিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে এসেছেন মৃৎশিল্পী রুবেল রুদ্রপাল।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল শহরে সাড়ম্বরে পালিত হয় রথ উৎসবে। এই উৎসবকে টার্গেট সর্বত্র প্লাস্টিকের দাপটের সাথে টিকে থাকার প্রচেষ্টাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে চান এই মৃৎশিল্পী। তিনি বসবাস করেন হবিগঞ্জ জেলার মিরপুর উপজেলায়। সেখানেই কাঁদা মাটি দিয়ে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা তৈরি করে চলেছেন মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র।  

বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকে রুবেল জানান, আমরা এগুলো নিজে তৈরি করি। আমাদের গ্রামের নাম দত্তপাড়া গ্রাম। এটি হবিগঞ্জের মিরপুরে। নানা জায়গায় উৎসব হলেই আমরা মাটির এমন জিনিপত্র নিয়ে যাই। এসব রথের মেলায় ভালোই বিক্রি হয়।  



মাটির তৈরি খেলনার এসব জিনিসপত্র থেকে মাসিক আয় এর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরো মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মাটির জিনিস বিক্রি হয়। এর মধ্যে ভালোই লাভ থাকে। পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে এই বিদ্যা শিখেছি বলে আজও দুঃখকষ্টের মাঝেও টিকে আছি।

রথ উৎসবকে ঘিরে শ্রীমঙ্গর শহরের হবিগঞ্জ রোডে সকাল ১০টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা বসে। এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ রথযাত্রা এবং মৃৎশিল্পের নানান উপকরণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বসেন রাস্তার দুই পাশে। দুপুর থেকে একেবার রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
 
দিনব্যাপী এই ব্যবসায় কত টাকার জিনিসপত্র নিয়ে আগমন –এমন প্রশ্নে রুবেল বলেন, শ্রীমঙ্গলের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৩/১৪ হাজার টাকার মাটির জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি। আশা করি, ভালোই ইনকাম হবে। প্রতি পিস মাটির জিনিসের ন্যূনতম দাম ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ৩৫০ টাকা। এই যে ষাঁড়গুলো দেখছেন, এগুলোর দাম ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা। দামদর করে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করবো।

৩০ বছর ধরে এই পেশায় নিয়জিত রুবেল জানান, এই পেশাতেই জীবন চলছে তার এবং তার পরিবারের। এই পেশাতেই বাকিটা জীবন টিকে থাকতে চান। আমাদের নিজেদের মাটির তৈরি জিনিসপত্র ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন- অনেক রং দিয়ে রাঙানো। অন্যরা শুধুমাত্র এক রং দিয়ে ফিনিসিং (রং দেওয়া) দেয়। আমরা মিনিমাম (সর্বনিম্ন) ৩ থেকে ৪টি রং দিয়ে মাটির জিনিসগুলো রাঙাই। শিশুদের হাঁড়িপাতিল, পুতুল, মাটির ব্যাংক, পাখি, ষাঁড় প্রভৃতি আমরা তৈরি করি।  

প্লাস্টিক যতই থাকুক, আমরা যদি আমাদের মাটির তৈরি নানান পণ্যে বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব আনতে পারি তবে তা কখনই লসের (ক্ষতি) মুখ দেখবে না। ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে কিনবে বলে জানান আশাবাদী মৃৎশিল্পী রুবেল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।