ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ট্রেনের প্রতি ভালোবাসায় শিশু নিহানের অসাধ্য সাধন

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
ট্রেনের প্রতি ভালোবাসায় শিশু নিহানের অসাধ্য সাধন

"ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
          রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
         ট্রেনের বাড়ি কই?
একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
         মাঠ পেরুলেই বন।


পুলের ওপর বাজনা বাজে
         ঝন ঝনাঝন ঝন। "

পঞ্চগড়: ট্রেনের নাম শুনলেই কবি শামসুর রাহমানের ট্রেন কবিতাটি মনে পড়ে। কতই না সুন্দরভাবে ট্রেনকে নিয়ে উপস্থাপন করেছেন কবি। এবার বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে সাত বছরের এক শিশু ট্রেনের বিভিন্ন বিষয় জেনে হয়ে উঠেছে মানবসূচি বা মানব রোবট।  

ট্রেন যাত্রায় মূল বিষয় সময়সূচি, গন্তব্য ও ভাড়া জানা। আর এই তিন বিষয়ে এক অসাধ্য সাধন করেছে শিশু নিহান। মায়ের সঙ্গে নানুবাড়ি থেকে পঞ্চগড়ে ফেরার পথে ট্রেন মিস করে তারা। এরপর ট্রেনের সময়সূচি, ভাড়া ও নামের ব্যাপারে সব তথ্য জানতে এই চ্যালেঞ্জ নেয় পঞ্চগড়ের শিশু নাজিব শাহরিয়ার নিহান।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও ভারতসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেনের নামসহ সময়সূচি ও ভাড়া এখন তার মাথায় বন্দি। এতে স্থানীয়দের কাছে প্রশংসা কুড়িয়ে ট্রেনের মানবসূচি বা মানব রোবট হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের বোদা পৌর এলাকার নিয়ামুল হাবিব রবি ও নাজমা রহমান দম্পতির ছোট ছেলে নিহান।

দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট নিহান। পড়াশোনা করে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পৌর এলাকার সানন্দ কিন্ডারগার্টেনের প্রথম শ্রেণিতে। চার বছর বয়সে মা নাজমা রহমানের সঙ্গে ট্রেনে করে নানুবাড়ি নাটোর থেকে ফেরার পথে ট্রেন মিস হয় তাদের। এর পর থেকে ট্রেনের সময়সূচিসহ সব বিষয় জানতে ইচ্ছা জাগে তার। পড়ালেখা, খেলাধুলোর পাশাপাশি বাবার মোবাইলে ইউটিউব দেখে মাত্র তিন বছরের মাথায় সাত বছর বয়সে দেশের সব ট্রেনের নাম, সময়সূচি ও ভাড়া মুখস্ত করেছে এই শিশু।

বাবা নিয়ামুল হাবিব রবি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী চাকরির সুবাদে বাইরে থাকি। বেশি সময় বাড়িতে সে তার দাদির সঙ্গে থাকে। তবে আমরা বাড়ি ফিরলে নিহান আমার মোবাইল নিয়ে ইউটিউব দেখতে শুরু করে। প্রথমে বিষয়টি বিরক্তিকর মনে হলেও যখন দেখলাম এর মাঝে সে ট্রেনের সব কিছু বলতে পারছে, তখন নিজের মাঝে এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করতে থাকে। তার এই আগ্রহে আর বাধা সৃষ্টি করিনি। ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

মা নাজমা রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র চার বছর বয়সে তাকে নিয়ে নাটোর থেকে পঞ্চগড়ে ফেরার পথে আমাদের ট্রেন মিস হয়। এতে সেই সময়ে নিহান আমাকে বলে মা আমি ট্রেনের সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবো। তবে ঘটনার তিন বছরের মাথায় বর্তমানে ছেলে নিহান সব ট্রেনে নাম, সময়সূচি ও গন্তব্য সম্পর্কে মুখস্ত বলতে পারছে।

দাদি নুরজাহান বেগম বাংলানিউজকে বলেন, অবসর সময়ে কৌতুহল থেকেই ইউটিউবে ট্রেনের ভিডিও দেখে বাংলাদেশের সব ট্রেনের নাম ও যাত্রার সময়সূচি সম্পর্কে জানা হয়ে গেছে তার। এ বিষয়ে সে এতটাই জেনেছে যে তার এমন কর্মকাণ্ডে আমরা অবাক হয়েছি।

এদিকে ট্রেন নিয়ে এমন ভিন্নতর খবরের পাশাপাশি প্রতিভার কথা শুনে নিহানের কাছে কিছু উপহার সামগ্রীসহ দেখতে ছুটে যান রেলমন্ত্রীর সহধর্মিণী সাম্মি আক্তার মনি।

সাম্মি আক্তার মনি বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের মেধার শিশুদের পাশে আমরা সব সময় থাকতে চাই। যখন শুনেছি যে ছোট্ট শিশু নিহান ট্রেন সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, শোনা মাত্রই তাকে দেখতে ছুটে এসেছি। তার এমন মেধাকে সাধুবাদ জানায়।

এদিকে বোদা পৌর মেয়র আজহার আলী বাংলানিউজকে বলেন, যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির প্রতি নজর রাখা হয় তাহলে তার মেধা আরও বিকশিত করা সম্ভব হবে।

শিশু নিহান বাংলানিউজকে বলে, ট্রেনের ভিডিও দেখতে অনেক মজা লাগে। মোবাইলে ভিডিও দেখে অনেক কিছু শিখেছি, এর মধ্যে ট্রেনের সম্পর্কে বেশি জেনেছি। তাই ট্রেনের প্রতি আমার ভালোবাসা বেড়ে গেছে। আমি খেলা ও পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার মোবাইলে মাঝে মধ্যে ইউটিউবে ভিডিও দেখি। আমার ইচ্ছে ট্রেন সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার।

জানা যায়, মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে ট্রেনে করে নানার বাড়ি নাটোর যাওয়ার সুবাদে ট্রেনের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসার জন্ম হয় নিহানের। মায়ের সঙ্গে ট্রেন যাত্রায় একবার ট্রেন মিস হওয়ায় পড়ালেখার পাশাপাশি ঝুঁকে পড়ে ট্রেন সম্পর্কে জানতে। বর্তমানে সে বাবা-মায়ের চাকরির সুবাদে উপজেলার পামুলি খচাপাড়ার পরিবর্তে বোদা পৌরসভার শিমুলতলি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।