ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘ঝুঁটি-শালিক’ পাখি গবেষকের শখ পূরণ করেছে যেভাবে

326 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
‘ঝুঁটি-শালিক’ পাখি গবেষকের শখ পূরণ করেছে যেভাবে শহুরে দালানে বাসা করেছে প্রাকৃতিক ঝুঁটি-শালিক। ছবি: ইনাম আল হক

মৌলভীবাজার: গবেষণার কাজে ঘুরে বেড়িয়েছেন সারা বাংলাদেশ। দেশে যত প্রজাতির পাখি-প্রকৃতিতে বিচরণ করে তাদের প্রতিটির আলোকচিত্রই তার ক্যামেরাবন্দি। করোনাকালীন সঙ্গনিরোধ আর একাকীত্বে ঝুঁটি-শালিক (Jangle Myna) দম্পতি দিবস-রজনী তার ভালোবাসার চিরসঙ্গী হয়েছে।

তিনিও হৃদয়ের সবটুকু ব্যাকুলতা দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন পাখি পরিবারটিকে। এ মধ্য দিয়েই পূরণ হয়েছে প্রকৃতির পাখিকে নিজের ঘরে প্রাকৃতিকভাবে পালনের চিরন্তন স্বপ্ন।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, অনেকেরই পাখি পালার শখ থাকে। তবে এটাতে ঝুঁকি রয়েছে কিন্তু। প্রথমত, আপনি বুনোপাখি পালন করলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। দ্বিতীয়ত, আপনি পালা পাখি পাললেও অনেক ধরনের ঝুঁকি নিলেন। তা হলো এই পাখিগুলো থেকে আপনার অসুখ হতে পারে কিংবা আপনার থেকে পাখির অসুখ হতে পারে। আর এই পাখিটা বেশি দিন বাঁচবে না এমনিতে ঘরে খাঁচায় আটকে থাকলে। শহরের বাসা করা ঝুঁটি-শালিক।  ছবি: ইনাম আল হকতিনি আরো বলেন, তৃতীয়ত, আপনি একটা ঘরে যদি পোষা পাখি রাখেন, তবে নিজের হাত-পা শেকল দিয়ে বেঁধে ফেললেন। এজন্য যে, আপনি হয়তো ছুটিতে ঘুরতে কোথাও সপরিবারে যাবেন; পাখির জন্য যেতে পারবেন না। তাহলে পাখিগুলোকে কে দেখবে? কে খাওয়াবে? কত দুশ্চিন্তা! এজন্য পশুপাখি পালন তাদের জন্য বিরাট অসুবিধার; নিজের জীবনই অনেকখানি সীমিত হয়ে যায়।

‘নিজের বাসায় পাখির ছানা’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এই পাখিটার কথা এজন্য বলছি যে, সে আমার ঘরের ঠিক পেছনেই দেওয়ারের ছিদ্রতে সংসার পেতেছে ঝুঁটি-শালিক। ওদের ছানাও হয়েছে। বুধবারই (৮ জুলাই) আমি ওদের ছবি তুলেছি। ওরা আমার সঙ্গে থাকতে থাকতে এখন আর আমাকে ভয় পায় না। কিন্তু এই পাখিগুলোকে দেখতে দেখতে আমার হঠাৎ মনে হলো পাখি পালার জন্য এই কোনোটারই তো দরকার নেই।

‘পাখি পালা’ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ঘরের বাইরের দেওয়ালে একটা ছিদ্র থাকলেই আমার পাখি পালা হয়ে গেলো। আমি কোথাও গেলে ওদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারণ ওদেরকে তো আমি খাঁচাবন্দি করিনি। ওরা প্রকৃতিতেই রয়ে গেছে। ওরা স্বাধীন থাকলেও ওরা আমার পালা পাখিই কিন্তু আবার। প্রতি মুহূর্ত আমি ওদের দেখছি। আসছে-যাচ্ছে। ওরা দুইজনের মধ্যে লড়াই বা প্রেম-ভালোবাসা সবই হচ্ছে। অর্থাৎ আমার পাখি পালার শখটাও কিন্তু এভাবেই মিটে যাচ্ছে। মানুষের ভালোবাসার প্রত্যাশী পাখিরা।  ছবি: ইনাম আল হকআক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলেন, আমি তো গত ৪ মাস ধরে করোনার কারণে গৃহবন্দি। কিন্তু এই পাখিদের পুরো ঘর-সংসার, প্রেম-ভালোবাসা, ডিমে তা, বাচ্চা পালা, পরে বাচ্চাটা বের হয়ে এলো সবকিছু দেখলাম। কত্ত আনন্দের ব্যাপার! বরং পালা পাখির এ অসাধারণ দৃশ্যগুলো আপনি সবসময় উপভোগ করতে পারবেন না। কারণ পালা পাখির তো এই স্বাধীনতা নেই। এটা ছোটখাচার মধ্যে ওকে আটকে রেখেছেন। ওর জীবনের সুন্দর ক্ষণগুলো তো আপনি আর পাচ্ছেন না।

ওর জন্য একটুখানি পানি রেখে দিয়েছি; খাবার রেখে দিয়েছি। তবে আমি চাই না যে, ওকে পুরো খাবার দেই। তাহলে ওর প্রাকৃতিক স্বভাব নষ্ট হয়ে যাবে। আমি এদিক থেকে পাখি পালার প্রতিটি মুহূর্তের আনন্দ লাভ করেছি। আবার ওর রোগবালাই নিয়েও আমাকে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের বাড়িতে এটা করতে পারি কিন্তু।

যারা ঘরবাড়ি বানান তারা একটু খেয়াল করলেই কিন্তু পাখিদের এমন সুবিধা করে দিতে পারেন। যেখান দিয়ে লোকের আনাগোনা কম সেই দেওয়ালে দু-চারটা ছিদ্র রেখে দেন তাহলে শালিক, দোয়েলরা এখানে বাসা করবেই। আর তখনই আপনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রকৃতিতে বসবাস করা পাখিকে কাছ থেকে দেখার আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন। বাজার থেকে কেনা অমানবিকভাবে পাখির খাঁচাতে অত্যাচারিত একটা প্রাণীকে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানান প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।