ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ার মেইন থ্রেট এখন ‘অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক’

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
লাউয়াছড়ার মেইন থ্রেট এখন ‘অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক’ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের আগমন। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: জীববৈচিত্র্যের সম্ভার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের আগমন স্বস্তির ব্যাপার হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বিষয়টি গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের পদভারে মুখরিত হওয়ায় নানাভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে লাউয়াছড়ার মূল্যবান জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হয়ে পড়ছে বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনার অভাব, অত্যাধিক জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ, অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মতো বনজ সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, বন্যপ্রাণী খাদ্য ও নিরাপত্তা সংকট, গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে বন্যপ্রাণীদের মারা যাওয়া এবং সময়োপযোগী টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে অতীতের সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণীদের অবস্থা এখন নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের আগমনের ওপর নিধেষাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

গবেষক, পরিবেশবিদসহ নিগর্সপ্রেমীদের প্রচণ্ড আপত্তি রয়েছে এই মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকের বিষয়ে। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এখন বর্তমানে লাউয়াছড়ার ‘মেইন থ্রেড’ই (প্রধান সমস্যা) হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক। আগে যে পরিমাণে পর্যটক আসতো তাতে কোনো ক্ষতি হত না, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক এখন আসছেন। লাউয়াছড়ায় যে পর্যটন কেন্দ্র হয়েছে কোর জোনের মধ্যে। লাউয়াছড়াও যদি ভানুগাছের আরও দূরে হত তাহলে হয়তো এতটা চাপ পড়তো না। যেহেতু কোর এরিয়ার মধ্যে এত বেশি সংখ্যাক লোকজন আসেন যারা নির্দিষ্ট পথে না হেঁটে যেদিকে পারে সেদিকে ঢুকে যায়। কোর এরিয়ার মধ্যে হওয়ায় যেগুলো বন্যপ্রাণী আছে তাদের কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে।

‘রাস্তা’ সম্পর্কে ড. কামরুল বলেন, লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে যে রাস্তা গেছে সেখানেও অনেক প্রাণী বনের এদিক থেকে ওদিক আসা-যাওয়ার পথে মারা পড়ে। বিশেষ করে ব্যাঙ, সাপসহ অন্যান্য। সরকারের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগের কথা যতদূর আমি জানি যে, এই রাস্তাটি নূরজাহান টি এস্টেটের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। লাউয়াছড়ার বাইরে এ রাস্তাটি নিয়ে গেলে মাত্র ৫ কিলোমিটার রাস্তা বাড়ে। যে রাস্তাটা এখন রয়েছে সেটি বনটাকে দ্বি-খণ্ডিত করে ফেলেছে। নূরজাহানের দিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগটা নিতে পারলেও কিন্তু লাউয়াছড়ার বড় লাভ হলো। তখন বন্যপ্রাণীরা ইচ্ছেমত রাস্তার দু’পাশে বিচরণ করতে পারতো।   

লাউয়াছড়ার স্ট্যাটাস (সংজ্ঞা) সম্পর্কে তিনি বলেন, লাউয়াছড়ার লিগ্যাল (সঠিক) স্ট্যাটাস হলো ‘ন্যাশনাল পার্ক’। ন্যাশনাল পার্কের ল’য়ের (আইন) মধ্যেই আছে- এখানে কোনো ধরনের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না; গাছ কাটা যাবে না; প্রকৃতিক বনের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না। এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- ন্যাশনাল পার্কে কোনো ধরনের উন্নয়নকর্মে গবেষণার ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে তার করতে পারবে। যেনো-তেনোভাবে কেউ কিছু করতে পারবে না। আর করলে তা আইনের বহির্ভূত হবে।

ন্যাশনাল পার্কে মূল উদ্দেশ্য- প্লান্টস (বৃক্ষ) এবং ওয়াইল্ডলাইফ (বন্যপ্রাণী) এগুলো কনজারবেশন (সংরক্ষণ)। একইসঙ্গে সেখানে গবেষকদের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত করা। এছাড়াও অনুমতির ভিত্তিতে এখানে সীমিত আকারে দর্শনার্থী বা ইকোপর্যটক (যারা সব নীতিমালা মেনে বন ভ্রমণ করেন) আসতে পারেন বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. কামরুল হাসান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ব্যস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকারি নির্দেশনা মতাবেক বর্তমানে লাউয়ছড়ায় পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও আমাদের পরিকল্পনার রয়েছে লাউয়াছড়ায় পর্যটকের ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করে অদূর ভবিষ্যতে এখানে সীমিত সংখ্যক পর্যটকদের দৈনিক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।