ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

নজরুল সংগীতের অ্যালবাম নিয়ে খুব করে ভাবছি: বন্যা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৯
নজরুল সংগীতের অ্যালবাম নিয়ে খুব করে ভাবছি: বন্যা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ছবি: রাজীন চৌধুরী

রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। শুধু গানে নয়, ধ্যানে-জ্ঞানে তার রবীন্দ্রনাথ। মানে, রবীন্দ্রনাথই তার আশ্রয়স্থল। রবীন্দ্রসংগীত তথা সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বঙ্গভূষণ পদক লাভ করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী।

পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়া রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’।

গুণী এই শিল্পী তার সাম্প্রতিক কাজ-কর্ম নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

বাংলানিউজ: নজরুল সংগীতের অ্যালবামের কথা বলেছিলেন। এটার কাজ কতদূর?
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: হ্যাঁ, এখন নজরুল সংগীতের অ্যালবাম নিয়ে খুব করে ভাবছি। তবে সময় নিয়েই কাজ এগোবো। এখন গান নির্বাচনের প্রচেষ্টা চলছে। নজরুলের প্রেম-প্রকৃতিসহ বিভিন্ন ঘরানার গানের মিশ্রণেই অ্যালবামটি করবো। গান থাকতে পারে ৮ থেকে ১০টি।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।  ছবি: রাজীন চৌধুরীবাংলানিউজ: সংগীত জীবনের এই পর্যায়ে এসে নিজেকে কীভাবে দেখেন, ভাবেন?
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: শুধু রবীন্দ্রসংগীত নয়, পুরো রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই আমার গবেষণা। আমার মনে হয়, কবিগুরু তার সমস্ত লেখা আমার জন্যই লেখে গেছেন। তারপরও তাকে গবেষণা করে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বুঝি, জীবন ও সত্যকে সুন্দর করে দেখতে হবে। এখানেই জীবনের সার্থকতা। এর বাইরে জীবনের কোনো অর্থ নেই, সৌন্দর্য নেই। এর বাইরে গিয়ে জীবন নিয়ে ভাবলে শুধু প্রশ্নই জাগবে- জীবনের মানে কী? উত্তর মেলানো কঠিন! তাই বলতেই হবে, সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে করে না কখনো বঞ্চনা।

বাংলানিউজ: রবীন্দ্রসংগীতের বাইরে আপনি লোক, নজরুল এবং দেশাত্মবোধক গান করেছেন। তো আধুনিক কিংবা মৌলিক গানে আপনার উপস্থিতি খুবই কম। আপনার কী কখনো মনে হয়েছে, নিজ কণ্ঠের কিছু জনপ্রিয় মৌলিক গান থাকা দরকার?
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: অনেক কিছুই তো করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সব কিছু কী করা সম্ভব! আমি রবীন্দ্রনাথের গান নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম, যতটুকু সম্ভব করে যাচ্ছি। এর বাইরে আমার বাড়তি কোনো আকাঙ্খা ছিল না। থাকলে হয়তো সম্ভব হতো। অনেক সময় অনেকের আধুনিক গানের প্রস্তাব ফিরিয়েও দিয়েছি। ভালোলাগা কাজ করেনি, তাই করিনি। তবে ধাধ্য হয়েই ‘গহীনে শব্দ’ সিনেমায় একটি মৌলিক গান গেয়েছিলাম। সেটি বেশ প্রশংসিতও হয়েছে।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।  ছবি: রাজীন চৌধুরীবাংলানিউজ: খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘গহীনের শব্দ’ সিনেমায় গাওয়া আপনার কণ্ঠের জনপ্রিয় সেই গানটি সম্পর্কে জানতে চাই।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: মূলত, গানটি গাওয়া মূখ্য বিষয় ছিল না। মিঠু ভাই চাচ্ছিলেন তার সিনেমায় অন্তত আমার কণ্ঠটি ব্যবহৃত হোক। প্রথমে ভেবেছিলাম রবীন্দ্রসংগীত হবে। মিউজিক ট্র্যাক তৈরির পর জানলাম একটি মৌলিক গান গাইতে হবে। এরপর ‘গহীনের শব্দ’র জন্য গাইলাম ‘তুমি আমার জীবনের গহীনেরে আসো’ শিরোনামের গানটি। এর সুর-সংগীতায়োজন করেন ফরিদ আহমেদ। গল্পের সঙ্গে গানটি ছিল যথার্থ। তাই গানটি শ্রোতারাও দারুণভাবে গ্রহণ করেন। একটা সময় দেখলাম, আমার কাছের এবং পরিচিত মহলের অনেকেই গানটি ওয়েলকাম টিউনে করেন। ফোন দিলে গানটি বেজে উঠতো, ভাবতে ভালোই লাগতো।

বাংলানিউজ: খালিদ মাহমুদ মিঠুর হাত ধরে আপনার কণ্ঠের জনপ্রিয় এই গানটি শ্রোতারা পেয়েছেন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, যেদিন স্বাধীনতা পদকের জন্য আপনার নাম ঘোষণা করা হলো সেদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন খালিদ মাহমুদ মিঠু। একই দিনে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর হারানোর শোক- দিনটি কীভাবে কেটেছিল?
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: এই প্রশ্নটা আবারও আঘাত করলো আমায়। একটু আগে বলেছিলাম না, সত্য ও সুন্দরকে মেনে নেওয়ার মধ্যে জীবনের সৌন্দর্য। মেনে নিতেই হয়। এটা ঠিক, দিনটি আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বলা যায়, আমার জীবনের ঐহিতাসিক দিনও বটে।

বাংলানিউজ: লোকগানের অ্যালবামের কথা বলছিলেন…
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: হ্যাঁ, লোকগান নিয়ে নতুন অ্যালবামের কাজ শুরু করবো। বাউল লালন ফকির, হাছন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণ প্রমুখের গান নিয়ে আমার এবারের লোকগানের অ্যালবাম। এতে ৮টি গান রাখার ইচ্ছে আছে।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।  ছবি: রাজীন চৌধুরীবাংলানিউজ: আপনার সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’ দু্ই যুগেরও বেশি সময় অতিক্রম করলো। আরও বছর চারের আগে স্কুলের পাশাপাশি সুরের ধারা কলেজ অব মিউজিক শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এখন সেটার কী অবস্থা!
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: গান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা, সুরের ধারা স্কুল, পরিবার, দেশ-বিদেশের অনুষ্ঠানসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। অবসর নেই বললেই চলে। এখন মনে হচ্ছে, চাকরীটা ছেড়ে দেওয়া উচিত। অনেক তো হলো, এবার কিছুটা আরামদায়ক সময় কাটানো দরকার- এমন চিন্তা প্রায়ই করি। আবার মনে হয়, সব কাজই তো বাকি। কিছুই তো করা হলো না (হাসি)। আসলে ব্যস্ততার কারণে এতদিন সুরের ধারার কলেজ অব মিউজিক’র কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। তবে নতুন বছর থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে। এরই মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন।

বাংলানিউজ: সংগীত জীবনে আপনার কোনো অপ্রাপ্তি আছে বলে মনে করেন?
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি- এটাই তো বড় প্রাপ্তি, তাই না!  আর অপ্র্রাপ্তি বলতে আমার কিছু অসন্তুষ্টি রয়েছে। অর্থাৎ আমি জানি, গানের অনেক কিছু শিখতে পারিনি। এখনো নিজের মতো ঠিকঠাক গাইতে পারছি না! দিন যাচ্ছে আর মনে হচ্ছে, আরও ভালো গাওয়া দরকার।

বাংলানিউজ: সংগীতে আপনি যাদের আদর্শ মনে করেন-
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা: কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবিনয় রায়, সন্তোষ সেনগুপ্ত, রাজেস্বরী দত্ত, দেবব্রত বিশ্বাস, নীলিমা সেন ও শান্তিদেব ঘোষ, বিমলা মিশ্র প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।