ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

যেভাবে গান হলো ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
যেভাবে গান হলো ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’ শহীদ কাদরী ও কবীর সুমন

সদ্যপ্রয়াত কবি শহীদ কাদরীর একটি বিখ্যাত কবিতায় সুর দিয়ে কণ্ঠে তুলেছিলেন কবীর সুমন। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ কবিতাটি আংশিক পরিবর্তন করেন সুমন গান গেয়ে বাহবা কুড়ান।

১৯৯৪ সালে তিনি গানটি প্রকাশ করেন ‘গানওয়ালা’ অ্যালবামে।  

বিভিন্ন গানের আসরে এই কবিতাটিকে গানে রূপান্তরের বিষয়টি নিয়ে বলেছেন সুমন। কিন্তু গানটির জন্মের আগে কবি শহীদ কাদরী কী ভেবেছিলেন? কী মনে করে সুমনকেই সুর করতে দিয়েছিলেন তিনি? 

একটি সাক্ষাৎকারে ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’র গান হয়ে ওঠার গল্প বলেছেন শহীদ কাদরী। কবি বলেছেন, ‘আমি যদি গান গাইতে পারতাম, কখনও কবিতা লিখতাম না। ’ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘গান যেভাবে যোগাযোগ করে, কবিতা কি তা পারে?’

প্রসঙ্গক্রমে এলো কবীর সুমনের নাম ও ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’। তরুণ সুমন কবিতাটিকে গানে রূপান্তর করার অনুমতি চাইতে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে গিয়েছিলেন, কবির কাছে। কবি তখন সেখানে নতুন। শহীদ কাদরীর ভাষ্য, “এক পরিচিত ইউনিভার্সিটি শিক্ষক একদিন বললেন কলকাতার এক ছেলে আছে গান গায়, সুমন নাম। ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’ কবিতাটি গান করবে, আমার অনুমতি চাচ্ছে। তখন আমি খুব ডিপ্রেসড। বোস্টনে শীতকাল। চারপাশে অন্ধকার বরফ। দেশ থেকে চলে এসেছি আরও আগে। আমি চাইতাম বাংলায় কেউ যেন আমাকে মনে না রাখে। যেন আমি কখনও ছিলাম না। কিন্তু তা-ও কী এক ভাবনা এলো, কী এক ভাবনা এলো, ভাবলাম…” 

সেই সাক্ষাৎকারে কবি সেই ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন কবিতার মাধ্যমে, নিজের নয়, কবি নরেশ গুহর লাইন ধার করেছিলেন, “এক বর্ষার বৃষ্টিতে যদি মুছে যায় নাম/এতো পথ হেঁটে এতো জল ঘেঁটে কী তবে পেলাম? কী তবে পেলাম?’ গান দিয়েও যদি কেউ বাংলাদেশে আমাকে মনে রাখে, তো রাখুক। ”

মজার ব্যাপার হচ্ছে, শহীদ কাদরী বয়সে কিছুটা বড় হলেও কবীর সুমনের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। দু’জনের পারস্পরিক বোঝাপড়াও ছিলো বেশ। কবীর সুমনের মতে, শহীদ কাদরীর মতো রসিক মানুষ তিনি খুব কমই দেখেছেন।

শহীদ কাদরী (১৪ আগস্ট ১৯৪২–২৮ আগস্ট ২০১৬) ১৯৪৭ পরবর্তীকালের বাংলা সংস্কৃতির বিখ্যাত কবিদের একজন। দীর্ঘকাল ধরে মার্কিন মুলুকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে ছিলেন তিনি। নিউয়র্কের নর্থশোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২৮ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি। শহীদ কাদরীর প্রকাশিত অন্যতম গ্রন্থগুলো হলো- ‘উত্তরাধিকার’ (১৯৬৭), ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’ (১৯৭৪), ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই’, ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ (২০০৯)।
 
* ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ গানের কথা:  
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা…প্রিয়তমা
ভয় নেই এমন দিন এনে দেবো
দেখ সেনাবাহিনীর বন্দুক নয়, শুধু গোলাপের তোড়া হাতে
কুচকাওয়াজ করবে তোমার সামনে,
শুধু তোমাকেই তোমাকেই স্যালুট করবে তারা দিনরাত। ।

ভয় নেই এমন দিন এনে দেবো
বনবাদাড় ডিঙিয়ে, কাঁটাতার পেড়িয়ে,
ব্যারিকেড পেরিয়ে, সাঁজোয়া গাড়ির ঝাঁক আসবে,
বেহালা, গীটার, বাঁশি, হারমোনিকা নিয়ে
শুধু তোমারি তোমারি দোড়গোড়ায়, প্রিয়তমা। ।

ভয় নেই এমন দিন এনে দেবো
বোমারু জঙ্গী যত বিমানের ঝাঁক থেকে
বোমা নয়, গুলি নয়, চকলেট, টফি রাশি রাশি
প্যারাটুপারের মত ঝড়বে
শুধু তোমারি তোমারি উঠোন জুড়ে প্রিয়তমা

* কবীর সুমনের কণ্ঠে ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ শুনুন : 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
এসও/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।