ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘সেলিব্রেটিদের লাইফস্টাইলে গহনা’ শীর্ষক সেমিনার

‘গহনা নারীর সৌন্দর্য ও বিপদের সম্পদ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
‘গহনা নারীর সৌন্দর্য ও বিপদের সম্পদ’ সেমিনারে কথা বলছেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ / ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: প্রাচীনকাল থেকে গহনার ব্যবহার করে আসছে মানুষ। নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও বিভিন্ন ধরনের গহনার ব্যবহার করে থাকে।

তবে বিশেষ করে গহনা নারীর যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তেমনি বিপদে নিরাপত্তা দিয়ে সম্পদের ভূমিকাও পালন করে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ‘বাজুস ফেয়ার ২০২৪’-এ ‘সেলিব্রেটিদের লাইফস্টাইলে গহনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে এই ফেয়ার ও সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

বাজুসের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে ও দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী জাহারা মিতু।

বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়ের স্বাগত বক্তব্যে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রোজিনা, নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার, অভিনেত্রী তমা মির্জা, সাবরিনা সুলতানা কেয়া, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়া, পিয়া জান্নাতুল, সঙ্গীতশিল্পী সোমনুর মনির কোনাল, অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা, সোহানা সাবা, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অধরা খান প্রমুখ।

‘সেলিব্রেটিদের লাইফস্টাইলে গহনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, একেকজন সেলিব্রিটির ভাবনা একেক রকম। একেকজনের একেক রকমের স্টাইল। তার স্টাইলের সঙ্গে কোন গহনা, জুয়েলারি বা অর্নামেন্টস যায় সেটা তার নিজের পছন্দ।

বাজুস ফেয়ারের জন্য আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এই আয়োজনের আমি মঙ্গল কামনা করছি। পাশাপাশি উত্তরোত্তর এর সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে আমরা স্বর্ণকে দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে রাখি। অনেক বাংলা সিনেমায় দেখা যায়, ছেলের চাকরি হচ্ছে না, মা এসে তার শেষ সম্বলটুকু দিয়ে বলে কিছু একটা কর। এটা কিন্তু জীবন থেকে নেয়া, জীবনের অংশ। মেয়েদের যেহেতু এক সময় সঞ্চয়ের ব্যবস্থা সেভাবে ছিল না। সেই জায়গা থেকে গহনাকে মেয়েরা মূল্যবান সম্পদ হিসেবে দেখে।

সভাপতির বক্তব্যে বাজুসের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, আমরা অলংকার বিক্রেতা আর সেলিব্রেটিরা আমাদের অহংকার। কারণ এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে সেলিব্রেটিরা। আশা করি, সেলিব্রেটিরা বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অলংকার ব্যবহার করবেন। আর বিদেশিদের বলবেন আমাদের অলংকারের মান বেশি ভালো সেই প্রত্যাশা করি।

চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোজিনা বলেন, আমি যখন এই ফেয়ারে প্রবেশ করছিলাম গহনার এতো সুন্দর সাজানো স্টল দেখে মনে হলো আইসিসিবিতে না আমি দুবাই চলে এসেছি। আমাদের দেশে এই চমৎকার আয়োজন দেখে খুব ভালো লেগেছে।

তিনি আরও বলেন, গহনার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি আছে। গহনা পরা যখন শুরু করি তখন আমি স্কুলে পড়তাম। দাম ছিল ৩-৪ হাজার টাকা ভরি। গহনা আমার প্রিয় জিনিস। সিনেমায় নকল গহনা পরলেও নিজে যখন কোথাও যাই তখন আসল গহনা পরি। গহনা সৌন্দর্যের প্রসাধনী ও সম্পদ। বাংলার ঐতিহ্য হলো সোনার গহনা।

নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা বলেন, একটি গাছের শেকড় যদি গভীরে হয়, বাতাসে তার কিসের ভয়। গহনা আমাদের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখা জরুরি। গহনা আমাদের বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিও। সুতরাং, স্মৃতি বলি আর ঐতিহ্য বলি, গহনার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার বলেন, জুয়েলারি একটি অ্যাসেট। পাশাপাশি এটি স্মৃতির কথা বলে। বিপদে কাজে দেয়। করোনার সময় এই জুয়েলারি বন্ধক রেখে আমি আমার ব্যবসার ভাড়া দিয়েছিলাম। আমি স্বর্ণ ভালোবাসি। স্বর্ণে বিনিয়োগ করলে সেটির দাম দ্বিগুণ পাওয়া যায়।

ঢালিউড কুইন অপু বিশ্বাস বলেন, গহনা অলংকারের থেকে বেশি সম্পদ। ছোটবেলা থেকে আমি আমার মাকে গহনা জমাতে দেখেছি। যা পরবর্তীতে কাজে লেগেছে। এটি শুধু নারীদের সৌন্দর্য বাড়ায় না, নারীদের জন্য একটি নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। আমি যখন গহনা পরি, তখন আমি আমার মায়ের স্পর্শ পাই।

অভিনেত্রী তমা মির্জা বলেন, ছেলেরা টাকা জমায় গাড়ি কেনার জন্য আর মেয়েরা টাকা জমায় গহনা কেনার জন্য। গাড়ির পরবর্তীতে বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় না। কিন্তু গহনায় ভালো বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায়। আমার মা সব সময় বলেন, জমি ও সোনার মূল্য আছে।

মডেল-অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল বলেন, স্বর্ন যে সঞ্চয়ের একটি মাধ্যম এটি আমি বিশ্বাস করি। আমাদের এমন জায়গায় বিনিয়োগ করা দরকার যেটি দেখতেও ভালো লাগবে আবার ভবিষ্যতেও কাজে লাগবে। স্বর্ণ এমন একটি বস্তু।

অভিনেত্রী সোহানা সাবা বলেন, আমি প্রথমবারের মতো বাজুসের এই মেলায় এসেছি। এটা এক অদ্ভুত মিলনমেলা হলো। চমৎকার এক আয়োজন। এখানে আসার পর আমার মনে হলো বাজুস ফেয়ার অনেকদূর যাবে। বাণিজ্য মেলার জন্য যেমন আমরা অপেক্ষা করি তেমন এই মেলার জন্য ও আমাদের অপেক্ষা বাড়বে। আমি সবসময় গহনা পরতে ও সংগ্রহ করতে পছন্দ করতাম। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সব ধরনের গহনা আমার খুব পছন্দের।

সঞ্চালকের বক্তব্যে দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, এক সময় রাজা-মহারাজারাও গহনা পরতেন। প্রাচীনকাল নারীরা ফুলের গহনা পরতো। সেখান থেকেই গহনার প্রচলন শুরু হয়। ফুল থেকে এক সময় ধীরে ধীরে ধাতব বস্তুতে পরিণত হয় গহনা। ধীরে ধীরে এতে সম্পৃক্ত হলো সোনা, রূপা, হীরা। এরপর এটি সঞ্চয়ের একটি মাধ্যমে রূপ নিল। নারীরা সঞ্চয়ের জন্য গহনা জমাতো। এক পর্যায়ে গহনা সৌন্দর্যের পাশাপাশি নারীদের ব্যাংকে পরিণত হলো।

সেমিনার শেষে আগত অতিথিদের বাজুসের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

এর আগে সকালে আইসিসিবিতে ‘সোনায় বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের সঞ্চয়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হয় তিন দিনের ‘বাজুস ফেয়ার ২০২৪’। বিশ্ববাজারে দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া অলংকারের পরিচিতি বাড়াতে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের পরিকল্পনায় দেশের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো এ মেলার আয়োজন করছে বাজুস।  

বাজুস মনে করে, ‘বাজুস ফেয়ার ২০২৪’ দেশীয় জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধশালী করার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে একটি নতুন অবস্থান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া নিত্যনতুন আধুনিক ডিজাইনের অলংকারের পরিচিতি বাড়বে।

এই লক্ষ্যে ‘বাজুস ফেয়ার ২০২৪’-এ সব ক্রেতা ও দর্শনার্থীকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজকরা। তারা বলছেন, আমরা আশা করছি- বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের বিদ্যমান অবস্থা এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে দেশের ১৮ কোটি মানুষ অবগত হবে।

দেশের অর্থনীতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘বাজুস ফেয়ার ২০২৪’ চলবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আইসিসিবির নবরাত্রি হলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত থাকবে মেলা।  

বাজুস ফেয়ারে প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকিট লাগবে না। এছাড়া জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে বিশেষ অফার দিচ্ছে।

এবার বাজুস ফেয়ারে নয়টি প্যাভিলিয়ন, ১৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৫টি স্টলে দেশের স্বনামধন্য ৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৪
এসসি/এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।