ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

সিসিক মেয়র হতে চান ব্যবসায়ী, ভূমিহীন, স্বশিক্ষিতও!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
সিসিক মেয়র হতে চান ব্যবসায়ী, ভূমিহীন, স্বশিক্ষিতও!

সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১১ প্রার্থী। তাদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগ মনোনীত আনোয়ারুজ্জামান, আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান।

এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল হানিফ কুটু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। একই ব্যানারে মো. জহিরুল আলম, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মো. শাহজাহান মিয়া, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, মোস্তাক আহমেদ রউফ মোস্তফা, সামছুন নুর তালুকদারও এ পদে লড়তে চান।

প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের মধ্যে বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন সামছুন নুর তালুকদার, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা। তবে তাদের নির্বাচন ভাগ্য ঝুলে আছে আপিলের ওপর। এদের মধ্যে কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ভূমিহীন, কেউ আবার স্বশিক্ষিত।

নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় তারা নিজেদের জীবনবৃত্তান্তে এ তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রার্থিতা করতে চাওয়াদের মধ্যে পেশায় স্বশিক্ষিত তিনজনসহ ব্যবসায়ী ৭ জন, দুজন শিক্ষক, অপর দুজন অবসরপ্রাপ্ত পেনশনার ও লন্ডনি আইনজীবী। এদের মধ্যে আবার দুজন ভূমিহীন।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, আব্দুল হানিফ কুটু এইচএসসি পাস, পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসায় বছরে আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে রয়েছে ১৭ লাখ ৭০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাড়িও আছে তার। স্বর্ণালঙ্কার নিজ নামে ২ লাখ ও স্ত্রীর নামে আছে ২ লাখ টাকার। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র নিজ নামে এক লাখ টাকার। তবে স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংকে দায়দেনা এবং মামলা নেই।

মাধ্যমিকের গণ্ডি পার না হলেও মেয়র প্রার্থী হতে চান চাঁদপুর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. জহিরুল আলম। নগরের লালদিঘীরপাড় ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন অষ্টম শ্রেণি। স্বর্ণের ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় ২০ লাখ ও নির্ভরশীলদের থেকে ৭ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের আছে নগদ ২০ লাখ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১০ লাখ, নিজ নামে আছে ৪ ভরি স্বর্ণ এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ৯ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে বাড়ি আছে দুটি। তবে পরিমাণ ও দাম উল্লেখ করেননি। ব্যাংকে দায়দেনা, মামলাও নেই তার।

পেশায় শিক্ষক মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দাওরায়ে হাদিস টাইটেল পাস। তিনি একটি মাদরাসার প্রিন্সিপাল। শিক্ষকতা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ২০ হাজার টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে এক লাখ। আসবাবপত্রের মধ্যে ফ্রিজ একটি, খাট-পালং-সোফা উল্লেখ করলেও দাম দেখাননি। স্থাবর সম্পদ বলতে দেখিয়েছেন অ-কৃষি জমি ৫০ শতক ও একটি বাড়ি। ব্যাংক দায়দেনা নেই।

সিসিকে আলোচিত মেয়র প্রার্থী স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন। প্রতিবার মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। স্বশিক্ষিত রিমন ৫ মামলার আসামি। স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় খালাস পেয়েছেন। এছাড়া বিচারাধীন মামলা আছে তিনটি, গ্রাম আদালতে রয়েছে আরও একটি। ব্যবসায়ী হলেও কৃষিখাতে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ নগদ আছে ১ লাখ ৭৫ হাজার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৬ হাজার টাকা। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন আরও ১ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১৫ শতক কৃষি জমির মালিক তিনি। মূল্য দেখিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। ব্যাংকে দায়দেনা নেই এই প্রার্থীর।

পেশায় শিক্ষক নগরের মুফতিবাড়ি দরগাহ মহল্লার বাসিন্দা মো. শাহজাহান মিয়া নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়েছেন হলফনামায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নেই এই প্রার্থীর। কেবল শিক্ষকতা থেকে আয় দেখিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। তবে ব্যাংকে দায়দেনাও নেই।

স্ব-শিক্ষিত মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খানও মেয়র প্রার্থী। পেশার স্থলে দেখিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত পেনশনার। নিজের ও নির্ভরশীলদের কোনো আয় দেখাননি তিনি। অস্থাবর সম্পদ বলতে হাতে আছে নগদ ১০ হাজার টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে এক লাখ টাকা। তবে স্থাবর সম্পদ নেই। স্ত্রীর ৫ ভরি স্বর্ণ এবং নিজের নামে আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকার। কোনো দায়দেনা ও মামলা নেই।

বিএসসি ডিগ্রিধারী মোস্তাক আহমেদ রউফ মোস্তফা পেশার স্থলে দেখিয়েছেন গ্রামে কৃষি, শহরে পারিবারিক ব্যবসা এবং ব্যক্তিগতভাবে একজন আইনজীবী, লন্ডনে আইনপেশায় যুক্ত। কৃষিখাতে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ২০ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১০ লাখ, নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন দুই লাখ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা পাউন্ড দেখালেও পরিমাণ উল্লেখ করেননি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৭ লাখ এবং নির্ভরশীলদের নামে ৩ লাখ টাকা। তার মোটরসাইকেল আছে দুটি, নিজ নামে দেখিয়েছেন গলার হার, কানের দুল এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র। তবে পরিমাণ ও মূল্য উল্লেখ করেননি। কৃষিখাত দেখিয়েছেন পৈত্রিক। ব্যাংকে দায়দেনা ও মামলা নেই।

পেশায় ব্যবসায়ী সামছুন নুর তালুকদার প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি। পড়ালেখা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৩ লাখ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আরও ৩ লাখ। স্ত্রীর নামে আছে ২ ভরি স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র দেখালেও মূল্য উল্লেখ করেননি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে কৃষি জমি নিজ নামে ৩০ শতক ও অ-কৃষি ৪ শতকের বাড়ি। ব্যাংকে দায়দেনা নেই।

এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান পেশায় ব্যবসায়ী এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ অনার্স।

স্বশিক্ষিত হলেও শিল্পপতি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাবুলের আছে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন এলএলবি। হলফনামায় ট্রাভেল ব্যবসা দেখিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।