ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

যে জেলায় নৌকার প্রার্থীর হার কল্পনাতীত

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
যে জেলায় নৌকার প্রার্থীর হার কল্পনাতীত

ফেনী: দেশে চলছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। স্থানীয় সরকারে এ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে সংঘর্ষ, হামলা ও সহিংসতার খবর।

 অনেক ইউনিয়নে ক্ষমতীসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী ও তুলনামূলক অজনপ্রিয় দলের প্রার্থীদের কাছে শোচনীয়ভাবে হারছেন।

সর্বশেষ রোববার ( ২৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ৪৫ শতাংশ চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।  ৯৯২টি ইউপি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে ৪৪৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। প্রথম ধাপে ২৪ শতাংশ ও দ্বিতীয় ধাপে ৪০ শতাংশ চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন।  

সারা দেশের এই চিত্রের ভিন্ন চিত্র ফেনীতে। এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর হার কল্পনাই করা যায় না। একচেটিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হয়ে আসছেন।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলা গোপালগেঞ্জে নৌকার প্রার্থী হারলেও ফেনীতে তা কল্পনাতীত। ৩য় ধাপের নির্বাচনে পাশের জেলা নোয়াখালীর সেনবাগে পাঁচটি ইউপির ৩ টিতেই হারে নৌকার প্রার্থীরা।

অপরদিকে ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ৮টিতেই বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। এর আগেও জেলার ৬টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ৪৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৪২টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়ে এসেছিলেন।
 
খালেদা জিয়ার পৈত্রিক নিবাস ও তার সংসদীয় আসনের এ জেলায় আওয়ামী লীগ ও নৌকার প্রার্থীদের হার কল্পনাতীত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে বর্তান সরকারের উন্নয়নের কারণে এ জেলার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ ধানের শীষকে প্রত্যাখ্যান করে নৌকায় উঠেছেন।  

এ প্রসঙ্গে কথা হয় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দপ্তর সম্পাদক এ কে শহীদ উল্যাহ খোন্দকারের সঙ্গে।  

তিনি জানান, ফেনী আওয়ামী লীগের সংগঠন এখন অনেক শক্তিশালী। তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের সব কমিটি সুসংগঠিত। এর সুফল মিলছে নির্বাচনে। ফেনী-২ আসনের সংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে পুরো জেলার আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। এ কারণেই এখানে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় কল্পনাই করা যায় না।  

অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন, বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন আওয়ামী লীগ ফেনীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নির্বাচনে তারা ‘ফেনী স্টাইল’ নামে আলাদা নিয়ম প্রচলন করেছে।  

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘শুনছি দেশের কিছু স্থানে ভোট হচ্ছে, মানুষ ভোট দিচ্ছে। ফেনীর মানুষ অনেক আগেই ভোটাধিকার হারিয়েছে। এইবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ফেনীত কোন ব্যতিক্রম হয়নি। এখানে ভোট হয় না। এখানে কথা বলা যায় না। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনের মতো এখানে সবাই অধিকার স্বাধিকার হারা।

ফেনীতে নির্বাচনী মাঠে পাত্তা পাচ্ছে না মহাজোটের অন্যতম শরিক জাসদও। জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপির নির্বাচনী এলাকা ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) আসনে সদ্য অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চরমভাবে হেরেছে মশাল প্রতীকের প্রার্থীরা। এ তিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের একটিতেও জিততে পারেননি তারা। এর আগের ফুলগাজীর ছয়টিও চরমভাবে হেরেছে তারা।

জাসদ নেতাদের অভিযোগ, ভোটে নানা অনিয়মের কারণে জাসদের এই ভরাডুবি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এখানে জাসদের কোন অস্তিত্ব নেই। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকার প্রতি আস্থাশীল হয়ে মানুষ ভোট দিয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, শিরীন আখতার জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হলেও নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।  

এখানে নৌকা ছাড়া বিকল্প কিছুই নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি মশাল প্রতীক নিয়ে গুটি কয়েক নেতাকর্মীকে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। যতই নৌকার বিরুদ্ধে মশাল দাঁড় করানো হোক একটিতেও জয়ের দেখা পাননি, বরং ভরাডুবি হয়েছে।

এদিকে ৩য় ধাপের ইউপি নির্বাচনের পর ফেনী পুলিশ সুপারের কনফারেন্সরুমে জেলা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।  

এ সময় তিনি ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার সদ্য অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদে অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জেলা পুলিশের ভূমিকার ভূয়শী প্রশংসা করেন তিনি এবং নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।  

এ সময় তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রমাণ হলো একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ফেনীর পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  

এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, জেলায় সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য তারা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জেলা নির্বাচন অফিসার নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, এ জেলায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ হচ্ছে। খুব সামান্য কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা এখানকার নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ঘটেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।