ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণ দলের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণ দলের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে ইসি

ঢাকা: রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণে যে সময়সীমা ছিল, তা আর রাখছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা দলের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বাধীন এ সংস্থাটি।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়নের লক্ষ্যে খসড়া আইন থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

এক-এগার সময়কার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে দলে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বিধানটি এনেছিল।

আরপিওতে ভিআইএ (VIA) অধ্যায়টি সংযোজন করে প্রচলন করা হয়েছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সেখানে নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণ করতে হবে।  

কিন্তু ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে এসেও ইসি জানাচ্ছে, কোনো দলই সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে পারেনি। তাই সময়সীমা আর বেঁধে দিতে চায় না সংস্থাটি।  

খসড়া অনুযায়ী, দলগুলো গঠনতন্ত্রে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের সময়সীমা নিজেরাই উল্লেখ করবে এবং প্রতি বছর তথ্য প্রদানের সময় ইসিকে নিজেদের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নারীপদ পূরণের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করবে।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি।

কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনই দেশে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য পৃথক আইনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাংলায় প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরপিও থেকে ভিআইএ অধ্যায়টি বিলুপ্ত করে পৃথক আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ইসি।

আইনটির খসড়ায় রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে আগের মতো বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে।

আইনের ৪ (১) দফায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হইতে আগ্রহী হইলে- দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী দু'টি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভ; বা উপরোক্ত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশ গ্রহণকৃত আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের শতকরা পাঁচ ভাগ পেতে হবে।

দলের সাংগঠনিক কাঠামোর স্থিতি হিসাবে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দফতর, অন্যূন একশ উপজেলা বা ক্ষেত্রমত মেট্রোপলিটন থানার প্রতিটিতে কার্যকর দফতরসহ ন্যূনপক্ষে দুইশত ভোটার সদস্য হিসাবে দলের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে।

এছাড়া আগ্রহী রাজনৈতিক দলের দলীয় গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে হবে যে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটির সদস্য নির্বাচিত হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটি ন্যূনপক্ষে শতকরা ৩৩ ভাগ সদস্য পদ মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য থাকিবে এবং কমিশনে প্রদেয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভূক্ত করিতে হইবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্র এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের সমন্বয়ে বা অন্য কোনো পেশার সদস্যগণের সমন্বয়ে অঙ্গ সংগঠন থাকবে না। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হওয়ার কিংবা সংগঠন, সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি গঠন করার ও বর্ণিত সকল প্রকার গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করিবার ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তি হিসাবে, বিদ্যামান আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, রাজনৈতিক দলের সদস্য হইবার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকিবে না।

সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা, পল্লি, উপজেলা বা ক্ষেত্রমত, থানা ও জেলা কমিটির দলীয় সদস্যগণ সংসদ নির্বাচনের জন্য তালিকা তৈরি করবেন এবং কেন্দ্রীয় সংসদীয় পর্ষদ ওই তালিকা বিবেচনাপূর্বক প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করিবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত কেউ পরবর্তীকালে কোনো অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে যোগদান করলে তার পদ যোগদানকারী দল কর্তৃক আহরিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে না।

৪(৩) দফায় বলা হয়ে- নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসমূহের শর্তাদি পূরণ সম্পর্কে তদন্ত করিয়া প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কমিশনের নিকট প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। কমিশনের বিবেচনায় কোন রাজনৈতিক দল শর্তাদি পূরণে ব্যর্থ হইলে ধারা ১১ অনুসারে সেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

৫ (১) দফায় একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধীকরণের অযোগ্য হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে কোনো দলের গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্যসমূহ সংবিধানের পরিপন্থি হলে; গঠনতন্ত্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও লিঙ্গ ভেদে কোন বৈষম্য প্রতীয়মান হলে; নাম, পতাকা, সীল বা অন্য কোন কর্মকাণ্ড দ্বারা ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার কিংবা দেশকে বিচ্ছিন্নতার দিকে লইয়া যাইবার আশঙ্কা থাকলে; গঠনতন্ত্রে দলবিহীন বা একদলীয় ব্যবস্থা সংরক্ষণ বা লালন করার উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হলে ও গঠনতন্ত্রে দেশের ভৌগোলিক সীমার বাহিরে কোন দপ্তর, শাখা বা কমিটি গঠন এবং পরিচালনার বিধান থাকলে সেই দল নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

এছাড়া যদি কোনো নামে কোন রাজনৈতক দল ইতিপূর্বে নিবন্ধিত হয়ে থাকে, তাহলে ওই নামে
অন্য কোন দলের নিবন্ধনের জন্য দাখিলী দরখাস্ত মঞ্জুর করা হবে না; তবে শর্ত থাকে যে, যে ক্ষেত্রে একাধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কমিশন দরখাস্তকারী সকল দলকে যুক্তিসঙ্গত শুনানির সুযোগ প্রদান করে তাদের যে কোন একটি দলকে ওই নামে নিবন্ধন মঞ্জুর করতে পারবেন।

কমিশন সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেবে না।  

শর্ত প্রতিপালনকারী ধারা ৫ অনুযায়ী অযোগ্য নয় এইরূপ কোন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য দলের প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরে নির্ধারিত পদ্ধতিতে দরখাস্ত দাখিল করিতে পারবে।  

নিবন্ধন সনদপত্র- (১) কোন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর, ঐ দলের
অনুকুলে কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি নিবন্ধন সনদপত্র প্রদান করিবেন এবং উহা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করিবে।

নিবন্ধনের জন্য দাখিলকৃত কোন দরখাস্ত নাকচ করা হইলে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কমিশন উহা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দলকে অবহিত করিবে। নিবন্ধন বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

দলের আয়:
ধারা ৯-তে বলা হয়েছে, কোনো দল নিষিদ্ধ উৎস ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি, দলগতভাবে একাধিক কোম্পানির কিংবা বেসরকারি সংস্থা থেকে দান অথবা অনুদান গ্রহণ করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, ওই দান বা অনুদানের পরিমাণ কোনো পঞ্জিকা বছরে ব্যক্তির ক্ষেত্রে দশ লক্ষ টাকা বা তার সমমানের কোনো সম্পদ বা সেবা এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ লাখ টাকা বা তার সমমানের কোনো সম্পদ বা সেবার বেশি হতে পারবে না।

নিবন্ধন বাতিল:
খসড়া আইনের ১১ ধারায় কোনো দলের নিবন্ধন বাতিলের কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করলে কিংবা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করলে, নিবন্ধিত কোন রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে এবং কমিশের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো তথ্য পর পর তিন বছর সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে, নিবন্ধর শর্ত ভঙ্গ করলে, পরপর দু'টি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে। তবে নিবন্ধন বাতিলের পূর্বে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে শুনানির সুযোগ প্রদান করা হবে। বিলুপ্ত ঘোষিত নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের নাম অনুযায়ী অপর কোনো দলকে নিবন্ধিত করা হবে না।

বিলুপ্ত ও বাতিলকৃত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

কোনো দলের নিবন্ধনন বাতিল হলে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে। তবে সরল বিশ্বাসে কৃত বা ঈপ্সিত কোন কিছুর জন্য কমিশন বা তার কোনো কর্মকর্তা বা অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা দায়ের বা অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে না।

এছাড়া আইনের খসড়ায় নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই খসড়ার ওপর রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে মতামত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। মতামত পাঠানো যাবে- [email protected] মেইলে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।