ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

উপজেলায়ও আ’লীগের নিরঙ্কুশ জয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৯৬

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৯
উপজেলায়ও আ’লীগের নিরঙ্কুশ জয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৯৬

ঢাকা: সদ্যসমাপ্ত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ৪৫৫টির উপজেলার মধ্যে ৩০২টিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন প্রার্থীরা। এদের মধ্যে আবার ৯৬জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর ২০৫ জন ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেছেন।

অন্য ১৫৩টি উপজেলার ১৪৫টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এদের আবার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা।

অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি তিনটিতে, জাতীয় পার্টি (জেপি) একটিতে এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ৪জন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।  

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গত মার্চে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫টির ফলাফল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৩৩টির ভোট ও ফল বিভিন্ন কারণে স্থগিত রয়েছে। প্রথমবারের মতো ১৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ট্যাব ব্যবহার করা হয়েছে।

গত ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৪৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ভোট দিয়েছেন ২ কোটি ৫৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮৮জন ভোটার। যা মোট ভোটের ৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

পাঁচ ধাপে বাতিল ভোটের পড়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮২০টি। যা প্রদত্ত ভোটের ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েক কোটি ভোট বাতিল হয়েছিল। সে তুলনায় এবার ভোট বাতিল হওয়ার হার অনেক কমেছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা বলছেন, এবার বিএনপিসহ অন্য প্রার্থীরা অংশই নেয়নি। কিন্তু গত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের অনেক প্রার্থী ছিলো। নির্বাচন প্রতিদ্বিন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ায় এবং সহিংসতা তুলনামূলক বেশি থাকায় সে সময় ভোট বেশি বাতিল হয়েছিল। এবার সে সুযোগ হয়নি।

এবার ভোটের হার বিগত দিনের সব নির্বাচনের চেয়েই প্রায় কম। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ায় ভোট পড়ার হারও কমেছে।

নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের দিক থেকেও রেকর্ড হয়েছে। অন্তত ৩৪টি উপজেলার সবক’টিতে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এসব উপজেলায় ভোটের আয়োজন করার প্রয়োজন হয়নি।  

চেয়ারম্যান পদে ৯৭টি উপজেলায় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে ৯৬জন আওয়ামী লীগের ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি’।

ধাপভিত্তিক ফলাফল:
১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৩টিতে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। যার মধ্যে ৫জনই আবার বিনাপ্রতিদ্বদ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৯জন। ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।

৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপে ১০৬টি উপজেলার মধ্যে ৭৩টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯জন নির্বাচনের মাধ্যমে ও ২৪জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩২ জন। একটিতে জাতীয় পার্টি জেপির প্রার্থী জয় পেয়েছেন। ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ভোটে ১২২টি উপজেলার মধ্যে ৮৩টিতেই জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এর মধ্যে ৩১জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ৫০জন প্রতিযোগিতা করে জয় পেয়েছেন। এছাড়া এ ধাপে ৩৮জন স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন। জাতীয় পার্টির একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ।

১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ১২৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭৭টিতে আওয়ামী লীগ, ৪৩টিতে স্বতন্ত্র, দু’টিতে জাতীয় পার্টি ও একটি বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৭৭ প্রার্থীর মধ্যে ৫৫জন ভোটের লড়াইয়ে ও ২২জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মজিবর রহমান মজনু আনারস প্রতীক নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ৮২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ৫৬টিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আর স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন ২৩জন। আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৪২জন ভোটে লড়াই করে ও ১৪জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। হবিগঞ্জের মাধবপুর, জামালপুরের বকশীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম ধাপে ভোট পড়ার হার ছিলো ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
ইইউডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।