ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

উপজেলা নির্বাচন

মঙ্গলবার দুই হেভিওয়েটের অস্তিত্বের লড়াই 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৯
মঙ্গলবার দুই হেভিওয়েটের অস্তিত্বের লড়াই  ওবাইদুর রহমান কালু খান ও কাজল কৃষ্ণ দে

মাদারীপুর: মঙ্গলবার (১৮ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে দুই হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তির অস্তিত্বের লড়াই হবে বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহল।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবাইদুর রহমান কালু খান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে মাদারীপুরের স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এর অনুসারী।

অপরদিকে ওবাইদুর রহমান কালু খান সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাই। তাই উপজেলা নির্বাচন এই দুই হেভিওয়েট এর অস্তিত্বের লড়াই বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা!

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ১১৫টি কেন্দ্রের ৬৪৮টি কক্ষে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫১৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৫ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ১৬০ জন।  

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেননা প্রচার-প্রচারণার সময় থেকেই সদর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার সাধারণ ভোটারদের।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নের প্রাক্কালে সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান কালু খান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের হাই কমান্ড মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে-কে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়।
 
এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশও করে। এ অবস্থায় অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান কালু খান স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নামেন।  

অন্যদিকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নৌকা প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।  
আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজল কৃঞ্চ দে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাদারীপুরের রাজনীতিতে দলের প্রতি তার ত্যাগ ও অবদান হিসেব করে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মোল্লা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা।  
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন  মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে ৬ বার নির্বাচিত সভাপতি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবাইদুর রহমান কালু খান। তার সঙ্গে আছে বড় ভাই সাবেক নৌমন্ত্রী, মাদারীপুর-২ আসন থেকে সাতবার নির্বাচিত এমপি শাজাহান খানের ব্যক্তিগত ইমেজ ও পারিবারিক ঐতিহ্য। নিজ নিজ অবস্থানে শক্তিশালী এই দুই প্রার্থীরই রয়েছে নির্বাচনে জয়ী হবার অদম্য মনোবল।

আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান  প্রার্থী কাজল কৃষ্ণ দে জানান, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। দলীয় নেতা-কর্মীরা ভোট দিতে পারলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। ’

চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান কালু খান জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। ভোটাররা তাদের যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।

এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে মাদারীপুর সদর উপজেলায় বইছে টানটান উত্তেজনা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। নির্বাচনী এলাকায় রোববার দিনগত রাত থেকেই শুরু হয়েছে র্যাবের টহল।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে উপ-পরিদর্শক ও ৫ পুলিশ সদস্যের টিম থাকবে। তিনটি কেন্দ্র নিয়ে একটি মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়াও দশটি কেন্দ্র নিয়ে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। নির্বাচনে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা হতে দেয়া যাবে না।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। কোনো ধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরি হতে দেয়া যাবে না। ৩টি কেন্দ্রের জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
রাত পোহালেই শুরু ভোটের খেলা। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে দুই শক্তির ভোটযুদ্ধ নিয়ে টানটান উত্তেজনায় রয়েছে সাধারণ ভোটাররাও। এই নির্বাচনে যে হেরে যাবে মাদারীপুর সদরের রাজনীতিতে তার প্রভাব কমে যাবে এমন ধারণা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন ভোটাররা। তবে সব মিলিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিসংতামুক্ত ভোট গ্রহণের প্রত্যাশা ভোটারদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।