ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সিলেটে কেন্দ্র ফাঁকা, ‘খোশগল্পে সময় পার’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
সিলেটে কেন্দ্র ফাঁকা, ‘খোশগল্পে সময় পার’ সিলেটে কেন্দ্র ফাঁকা, ‘খোশগল্পে সময় পার’

সিলেট: ভোটার ২ হাজার ৯৪৮। দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৮২টি। এমন অবস্থা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ইছরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য নারী-পুরুষের ৭টি বুথ করা হলেও ভোটারের দেখা মিলে হাতে গোনা দু’এক জনের।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত খোশ গল্পে। কক্ষ থেকে বেরিয়ে প্রধান ফটকের দিকে দৃষ্টি ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও প্রার্থীর এজেন্টদের।

তাদের চোখ যেনো ভোটারের খোঁজে। ওই কেন্দ্রের সীমানা প্রচীরের বাইরে প্রধান সড়কে মুষ্টিমেয় লোকের জটলা দেখা গেলেও তাদের অনেকেই জানান, ভোট আগেই দিয়ে বেরিয়েছেন। খানিকটা হতাশার সুরে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানালেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত মাত্র ১৮২ ভোট পড়েছে। ভোটকেন্দ্র ফাঁকা, ছবি: বাংলানিউজদুপুর পৌনে ১২টায় একই অবস্থা দেখা গেলো উপজেলার সিরাজ উদ্দিন একাডেমিতে। সবকিছু পরিপাটি। ভোটারের জন্য সাজানো ৩টি বুথ। অপেক্ষায় কেন্দ্রের নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিতরা। কিন্তু নেই ভোটারের দীর্ঘলাইন।

স্থানীয়রা বাংলানউজকে জানান, মানুষ ভোট দিতে আসছে না, দু’চারজন এলেও তারা ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রে ১ হাজার ৭২ ভোটের মধ্যে ওই সময়ের মধ্যে মাত্র ১৫৪ ভোট পড়েছে।

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটের ১২টি উপজেলায় ভোটের এমন পরিস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও অনেক কেন্দ্রে ভোটার নেই। অবশ্য কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেলেও জাল ভোট দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

দুপুর ১২টায় জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুরে হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল ভোট দেওয়ার দায়ে ছয় যুবককে আটক করা হয়েছে।

এছাড়া গোলাপগঞ্জের বয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, চার নম্বর বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে আসেন অপ্রাপ্ত বয়সের কয়েক কিশোর। নাম জিজ্ঞেস করতেই তাদের একজনের হাতে থাকা টোকেনের দিকে চেয়ে নাম আব্দুর রহিম এবং বয়স ২১ বলে দাবি করে কিশোরটি। এসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য কিশোররা সটকে পড়েন।

কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মখর্তা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কক্ষের ভেতরে ঢোকার পর ভোটার কিনা যাচাই করি। দুপুর ১২টায় তার কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৪ ভোটের মধ্যে ১ হাজার ২৯৫ ভোট কাস্ট হয়েছে জানালেন তিনি।

এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সিলেট সদর উপজেলার মুক্তির চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে ২ হাজার ৬২৫ ভোটের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল জলিল।

তার মতে, কেন্দ্রের কাছে ভোটারদের বাড়ি কাছে হওয়ায় সহজেই তারা এসে ভোট দিতে পারছেন। এছাড়া সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বদিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৬২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২২০ জন।

সোমবার সরেজমিনে সিলেটের নির্বাচনী মাঠ ঘুরে অন্তত ২০/২৫টি কেন্দ্রে এমন অবস্থা দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য উপজেলাগুলোতেও ভোটে মানুষের তেমন সাড়া নেই। অনেক কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি থাকলেও তা ছিল হাতে গোনা। আর ভোটারদের উপস্থিতি না থাকায় কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী কর্মকর্তারা খোশগল্পে সময় কাটাতে দেখা গেছে।

সিরাজ উদ্দিন একাডেমি ও দক্ষিণ সুরমার ইছরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কর্মরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সদস্য বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি কম। তাই চাপও নেই।

রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, দু’একটি জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা স্বাভাবিক ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে দাবি করেছেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।