ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

শহরের বর্ধিতাংশের ভোটেই নির্ধারিত হবেন রসিক নগরপিতা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
শহরের বর্ধিতাংশের ভোটেই নির্ধারিত হবেন রসিক নগরপিতা সিটি করপোরেশনের বর্ধিতাংশ এলাকা

রংপুর থেকে: দেশের সর্বউত্তরের নগরী রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক)। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে যে কোনো দিকে মাইল দেড়েক পথ এগুলেই এটাকে আর কোনোভাবেই নগরী বলা যায় না। একেবারে তিন ফসলি জমি নিয়েই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ সিটি।

পাঁচ বছর আগে পৌরসভার সঙ্গে আশেপাশের ইউনিয়নগুলো নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) গঠন করে সরকার। প্রথমবারের মতো নির্দলীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু।

এবারও নির্বাচন আসায় পদত্যাগ করে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচন হচ্ছে দলীয়ভাবে।

 
গত পাঁচ বছরে ঝন্টু যে কেবল শহরের মাঝে উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলেন তা কাউকে বলে দিতে হয় না। শহরের একটু বাইরে পা বাড়ালেই চোখে পড়ে নগরীরর উন্নয়ন চিত্র। এখনো বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে ফসলের মাঠ। পাড়া, মহল্লাগুলোতে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পাকা সড়ক নেই, নেই সুপেয় পানির লাইন। বলা যায় নগরের বাসিন্দা হয়েও তারা গ্রামেই বাস করছেন। সেখানে সিটির নাগরিক হিসেবে তাদের কোনো সুযোগ সুবিধা নেই।

 
এদিকে ফসলি জমিতে নগরের ট্যাক্স বসেছে, বাড়িতেও বসেছে তাই। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ট্যাক্স দিলেও নগর থেকে গত পাঁচ বছরে তারা কোনো সুবিধাই পাননি। যার প্রভাব পড়বে এবারের ভোটে।

 

নির্বাচন কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন ভোটার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন এ নির্বাচনে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ জন পুরুষ ভোটার এবং ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন নারী ভোটার। এদের মধ্যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ভোট নগরীর ‘বর্ধিত’ (যে ইউনিয়গুলো নিয়ে নগর গঠিত হয়েছে) অংশে। আর এই বর্ধিত অংশের ভোটাররাই এবার পাল্টে দিতে পারে হেভিওয়েট প্রার্থীদের হিসাব নিকাশ।

 
একদিকে যেমন উন্নয়ন হয়নি বলে ওই সব এলাকার মানুষ অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন, অন্যদিকে ঝন্টুর ব্যবহার নিয়েও রয়েছে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ। তাদের ভাষায়-ঝন্টুর কাছেই যাওয়া যায় না। কুত্তার মতো দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন। গালাগালি করেন। সম্প্রতি এক কিশোরকে মা-বাবা তুলে গালি দেওয়ায় তাকে লাঞ্ছিতও হতে হয়েছে। সেই ছেলে এখন জেলে আছে। আর এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই ভোটের হিসেব করছেন নগরের বাসিন্দা খ্যাত বর্ধিতাংশের ভোটাররা।


নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আমিনুল নামের এক ভোটার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঝন্টুর ব্যবহার খুব খারাপ। কুইত্তের মত আচরণ করি তারাই দেয়। কুনো সাইন নাগলে তার আশাপাশের দালালরা ১’শ ট্যাকা করি নেয়। মানুষ চিন্তে ভাবনা করবার নাগছে। শহরের বাইরে হামার মেলা ভুট আছে। এরা যারে ভুট দিবেন, সেই জিতপে।

 
ঝন্টুর ওপর যেমন মানুষ ক্ষ্যাপা, তেমন নৌকার একটা প্রভাবও রয়েছে এ নির্বাচনে। সেক্ষেত্রে একটা দুর্দন্ত প্রতিযোগিতা হবে এবারও। কেননা, ঝন্টুকে অপছন্দ করলেও নৌকায় অনেকেই ভোট দিতে চায়।
 

নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া নামের এক শ্রমিক বলেন, ঝন্টুর আচরণ খারাপ। তবে নৌকা আছে তো।

 
অন্যদিকে ঝন্টুর ওপর নাখোস থাকায় অনেকেই এবার লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে বেছে নিতে চাচ্ছেন। তাদের মতে মোস্তফার আচরণ খুব ভাল। মানুষকে খুব আপন করে নেন। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকতে তিনি সাধারণ মানুষের খুব কাছে যেতেন। আর তারপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ আরো বেড়েছে।

 
৪ নম্বর ওয়ার্ডের বীরেন চন্দ্র নামের এক ভোটার জানান, গ্রামের ভোটাররাই এবার ভোটের হিসাব পাল্টে দিবে। যে যেটাই ভাবুক না কেন, তারা যারে ভোট দেবেন, সেই পার হবেন।

 
উন্নয়ন নিয়ে ঝন্টু বাংলানিউজকে বলেছেন, বিরোধীরাই এমন কথা বলছেন। এতো বড় সিটির উন্নয়ন পাঁচ বছরে সম্ভব নয়। এবার নির্বাচিত হলে গ্রামে উন্নয়ন করবেন।

 
আগামী ২১ ডিসেম্বর রসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র এটিএম গোলাম মোস্তফা (হাতপাখা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’র (এনপিপি) সেলিম আখতার (আম) এবং জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার (হাতি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে এ সিটিতে।

 

২০১২ সালে ২০ ডিসেম্বরের নির্দলীয় ভোটে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ঝন্টু সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় মোস্তফা জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার হয়ে দলের সমর্থন ছাড়াই নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে মোস্তফা ২৮ হাজার ৪৫০ ভোটের ব্যবধানে ঝন্টুর কাছে পরাজিত হন। তখন ঝন্টু ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়েছিলেন, আর মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট।

**রংপুরে ধানের শীষের ‘খাওয়া’ নেই

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
ইইউডি/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।